মিথ্যা মামলায় শাস্তি পেতে হবে, মুঠোফোনে সমন দেওয়া যাবে
Published: 12th, August 2025 GMT
১২৭ বছরের পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৮৯৮ সালের আইনের সংশোধনীতে ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থাৎ মুঠোফোনে কল করে ও খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে সমন জারির বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা রোধে আবশ্যিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সংশোধিত বিধানগুলোতে গ্রেপ্তার, তদন্ত, জামিন, বিচারসহ পুরো প্রক্রিয়ায় বেশকিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। বিচারপ্রার্থী ও আসামিদের সুরক্ষায় যুক্ত হয়েছে নতুন ধারা। পরিবর্তন এসেছে ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা, পুলিশের রিমান্ডে নেওয়া, অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো, মামলার হাজিরা ও সাক্ষীর নিরাপত্তার ব্যবস্থাতেও। এ ছাড়া যেকোনো স্থানে সংক্ষিপ্ত বিচার আদালত পরিচালনার বিধানও রাখা হয়েছে।
শুধু প্রতিরোধমূলক আটক করার জন্য ৫৪ ধারা ব্যবহার করা যাবে না। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে বাধ্য।গত রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ‘ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ’–এর গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে সংশোধনীর বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামি গ্রেপ্তারে বিশেষ সুরক্ষার বিধান রাখা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে। বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকারীর পরিচয় জানাতে হবে, চাইলে তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। গ্রেপ্তারকারীর নাম যাতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, সেভাবে ধারণ করতে হবে। যাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁকে ও আশপাশে উপস্থিত ব্যক্তিদের পরিচয় জানাতে হবে। বাসার বাইরে থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা মনোনীত বন্ধুকে সময়, স্থান ও কোথায় রাখা হবে, সেসব জানাতে হবে।
সংশোধিত বিধানে আরও রয়েছে, গ্রেপ্তারের পর এর কারণ লিখতে হবে। যে থানার এলাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে, সেই থানার জেনারেল ডায়েরিতে (জিডি) সঙ্গে সঙ্গে নথিভুক্ত করতে হবে। যদি গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা ওই থানার না হন, গ্রেপ্তারের মেমোরেন্ডামের কপি সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দিতে হবে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও কোন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেসব তথ্য প্রতিটি থানায় ও জেলা বা মহানগর সদর দপ্তরে দৃশ্যমানভাবে (সর্বোত্তম হলো ডিজিটাল মাধ্যমে) প্রদর্শন করতে হবে। গ্রেপ্তারের পর জব্দ তালিকার একটি অনুলিপি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য বা নিকটজনকে দিতে হবে।
আমলযোগ্য অপরাধে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে হলে পুলিশকে দেখাতে হবে যে, ওই ব্যক্তি পুলিশের সামনেই অপরাধ করেছেন। যদি অপরাধসম্পর্কিত এজাহার বা নালিশি মামলা তদন্তাধীন থাকে, তবে পুলিশকে দেখাতে হবে যে, ওই ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বলে যুক্তিসংগত সন্দেহের কারণ আছে। শুধু প্রতিরোধমূলক আটক করার জন্য ৫৪ ধারা ব্যবহার করা যাবে না। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে বাধ্য।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে আপস হলেও চুক্তি লিপিবদ্ধ না করায় অনেক আসামি কিস্তিতে কিছু টাকা দেওয়ার পর বন্ধ করে দিতেন। তখন আপস-প্রক্রিয়া থামিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করে রায় দিতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ছিল। এখন চুক্তি থাকলে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই সরাসরি চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে পারবে।পুলিশ তদন্ত ও রিমান্ডফোজদারি কার্যবিধির সংশোধানীতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে আদালতে আনা হলে ম্যাজিস্ট্রেট মোট ১৫ দিনের বেশি নয়, এমন মেয়াদের জন্য হেফাজতের অনুমতি দিতে পারেন। তার বেশি হলে কেবল বিচারিক হেফাজত দেওয়া যাবে। হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে দ্রুত অভিযুক্তকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। হাজিরের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্যাতনের অভিযোগ করলে ম্যাজিস্ট্রেট নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করাবেন। নির্যাতনের প্রমাণ পেলে ম্যাজিস্ট্রেট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শর্ত হলো—ওই ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে, মামলার ডায়েরির কপি দিতে হবে, ব্যক্তিকে নিজের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং আবেদনটি যথাযথ হতে হবে। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের বিশ্বাস হয় যে কোনো কর্মকর্তা বেআইনিভাবে কাউকে আটকের জন্য আবেদন করেছেন, তাহলে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের বিধানতদন্ত চলাকালে পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার বা সমমানের কর্মকর্তা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারবেন।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে যদি দেখা যায়, কোনো আসামির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেটি ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবেন। আদালত যথাযথভাবে সন্তুষ্ট হলে ওই আসামিকে অব্যাহতি দিতে পারবেন; তবে বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। পরবর্তী সময়ে তদন্ত শেষে যদি নতুন ও পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পূর্বে অব্যাহতি পাওয়া আসামিকেও চূড়ান্ত পুলিশ রিপোর্টে অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
তদন্তের সময় ৬০ দিনতদন্ত শেষের সময়সীমা উল্লেখ করে সংশোধনীতে বলা হয়েছে, অপরাধের তথ্য পাওয়ার দিন থেকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। যৌক্তিক কারণে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা না গেলে তদন্ত কর্মকর্তা ডায়েরিতে কারণ লিখবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যুক্তিসংগত সময় বাড়াতে পারেন। তার পরও শেষ না হলে তদন্ত কর্মকর্তা লিখিতভাবে বিলম্বের কারণ ম্যাজিস্ট্রেট ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবেন। ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে অন্য কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করাতে পারবেন। বিলম্ব ও তদন্তে গাফিলতির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারবেন।
এখন থেকে নালিশি দরখাস্তের মাধ্যমে দায়েরকৃত সব সিআর মামলাই বাদীর অনুপস্থিতির কারণে খারিজ হবে। আগে শুধু সমন দেওয়া হয়েছে এমন সিআর মামলা খারিজ করা যেত।
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা রোধে আবশ্যিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করা হয়েছে। আগে এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বিচারকের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা ছিল।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মতো বিচারসংশোধনীতে স্যামারি ট্রায়ালের বিধানে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ানো হয়েছে। আগে চুরি, আত্মসাৎ বা এ ধরনের মামলার বিষয়বস্তুর মূল্যমান অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা হলে তার বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করা সম্ভব ছিল। বর্তমানে এই মূল্যমান বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সংশোধিত বিধান অনুযায়ী, সংক্ষিপ্ত বিচার সম্ভব হলে একই বৈঠকে আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে এবং যেকোনো স্থানে সংক্ষিপ্ত বিচার আদালত পরিচালনা করা যাবে। এর মাধ্যমে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্টের বিকল্প হিসেবে একইভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ স্যামারি ট্রায়াল কোর্টে বিচার করতে পারবেন।
সংশোধিত বিধান অনুযায়ী, এখন থেকে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার করার জন্য ক্রোকি ও হুলিয়া পরোয়ানা জারির কোনো আবশ্যকতা থাকবে না। পলাতক আসামির মামলা দ্রুততর সময়ের মধ্যে বিচারের জন্য প্রস্তুত হবে। পলাতক আসামিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার আদেশ দুটি পত্রিকার পরিবর্তে বহুল প্রচলিত একটি বাংলা পত্রিকায় এবং পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে।
মামলা আপস সহজীকরণফৌজদারি মামলা আপস সহজীকরণ করে সংশোধিত বিধানে ধারা ১৪৩ এখন আপসযোগ্য করা হয়েছে। আগে বেআইনি সমাবেশের অপরাধ আপসযোগ্য ছিল না বিধায় অনেক মামলা আপসে নিষ্পত্তি করা যেত না। আদালত এখন সরাসরি আপস কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে পারবে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসেও মামলা আপসের জন্য আদালত পাঠাতে পারবে।
আপস-চুক্তি নথিভুক্তকরণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশোধিত বিধানে বলা হয়েছে, আপসের ভিত্তিতে কোনো চুক্তি হলে, আদালত সেটি নথিভুক্ত করবে। চুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে আদালত প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে আপস হলেও চুক্তি লিপিবদ্ধ না করায় অনেক আসামি কিস্তিতে কিছু টাকা দেওয়ার পর বন্ধ করে দিতেন। তখন আপস-প্রক্রিয়া থামিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করে রায় দিতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ছিল। এখন চুক্তি থাকলে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই সরাসরি চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এ ছাড়া ধারা ৩৯৬–এর সংশোধনের মাধ্যমে বেত্রাঘাত শাস্তির বিলোপ করা হয়েছে।
হাজিরায় শৈথিল্য, সাক্ষ্যে সুযোগব্যক্তিগত হাজিরা শিথিল ও সাক্ষ্যগ্রহণে নতুন সুযোগ দেওয়া হয়েছে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে। আগে মামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই আসামিকে বারবার ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে হতো। জামিনপ্রাপ্ত আসামিরও এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি ছিল না।
এখন আদালত চাইলে তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানি পর্যন্ত জামিনপ্রাপ্ত আসামিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। এই সময় আসামি তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন।
আইনজীবীরা বলছেন, আগে কিছু ক্ষেত্রে আদালত ধারা ২০৫ অনুযায়ী এ সুবিধা দিতে পারতেন, কিন্তু তা কেবল মামলা আমলে নেওয়ার পর প্রযোজ্য ছিল। নতুন বিধানে আসামিরা উপকৃত হবেন।
এখন থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আসামি উপস্থিত না থাকলেও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আসামির আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করতে পারবেন। আগে অন্তত একজন আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে সাক্ষীর খরচ প্রদানের বিধান থাকলেও তা কার্যকর করতে পৃথক বিধি প্রণয়ন বাধ্যতামূলক ছিল। এখন থেকে সরকারি আদেশ দিয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বিচারব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে বিশেষ কিছু আইনে সাক্ষী সুরক্ষার বিধান থাকলেও ফৌজদারি কার্যবিধিতে এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন সংশোধনীতে আদালতকে সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষায় যেকোনো প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
জামিনঅযোগ্য ৩২৫ ধারাআইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩২৫ আগে জামিনযোগ্য ছিল। ভোতা অস্ত্রে হাত-পা ভাঙা বা চোখ-কান হারানোর মতো গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রেও আসামি সহজেই জামিন পেত। প্রাথমিকভাবে ৩২৬ ধারায় মামলা হলে জামিন পাওয়া কঠিন হতো, কিন্তু পরে অস্ত্রের প্রমাণ না পাওয়া গেলে আসামি সুবিধা পেত। নতুন সংশোধনীতে ধারা ৩২৫-কে জামিনঅযোগ্য করা হয়েছে। ফলে গুরুতর জখমের ক্ষেত্রে কী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল, জামিনের ক্ষেত্রে আর তা বিবেচ্য হবে না।
সংশোধনীগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারী আইনের যে সংশোধনগুলো আনা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে উদ্দেশ্য ভালো। তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলো প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সদিচ্ছা। এটি না থাকলে আইন সংশোধনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ত কর মকর ত গ র প ত রক তদন ত শ ষ তদন ত কর র র জন য উপস থ ত এখন থ ক আইনজ ব প রব ন আস ম র ব য হত অন য য় ক আস ম আস ম ক নত ন স ক ত কর র পর ব পর য় ন স রক ষ বলছ ন ক ষমত র করত গ রহণ র আইন র সময় অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের যে বিধিবদ্ধ আইন, তাতেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা ব্যাপার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যে অভিযোগ করব, তা যেন সুনির্দিষ্ট হয়। আমরা যদি বলে থাকি, তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কোথা থেকে করেছেন, কীভাবে করেছেন, এই অংশগুলো যদি প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগ টিকবে না। এমনকি উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’
সম্প্রতি রাজধানীতে এক সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে। এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।
তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বিবৃতিতে সরকার তাঁর (সাবেক সচিব) কাছে সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘বিষয়টি পত্রিকায় এসেছে। সেটি আমাদের চোখে পড়েছে। এই সরকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া দরকার, এটা রাজনৈতিক সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একেবারেই দুর্নীতির বিপক্ষে একজন মানুষ। এটা যদি তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের কেউ হন, সে ক্ষেত্রেও তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের এখানে কয়েকটি মামলা চলমান। আরও কয়েকটি বিষয় তদন্তাধীন। তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণিত হয়, আমরা মামলা-মোকদ্দমায় চলে যাব।’
সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুদকের অভিযান প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান করছি। বিশেষ করে সেবা প্রদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সেবা গ্রহিতাদের। আমরা অভিযান করছি, যাতে এই অভিযোগগুলো না হয়। ‘
পরে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কর্মকর্তাদের ও কর্মচারীদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। উপস্থিত আছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, পুলিশের রংপুরের রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম প্রমুখ।