দেশে এখন অনেকের চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বরের পাশাপাশি শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ কারণে চিকিৎসকদের বিভিন্ন রকমের ব্যথা ও প্রদাহনাশক ওষুধ দিতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে সব ওষুধ ব্যবহার নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যথা ও কষ্ট কমাতে করণীয় কী, তা একটি ভাবনার বিষয়।

চিকুনগুনিয়া কী

চিকুনগুনিয়া একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ ছড়ায়। এই একই মশা দিয়ে ডেঙ্গুও হয়। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বর এবং শরীর ও অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে র‍্যাশ হতে পারে। এ ছাড়া অরুচি ও মাথাব্যথা হতে পারে।

সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকুনগুনিয়া ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকেরই শরীর ও অস্থিসন্ধিতে এই ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থেকে যেতে পারে। এটা হলে অনেক দিন পর্যন্ত ভুগতে হয়।

গর্ভবতীদের জটিলতা হয় কি

গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অন্যদের মতোই হবে। বেশির ভাগ সময়ই কোনো রকম গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। অনেকে আতঙ্কিত হন এই ভেবে যে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর কোনো সমস্যা হবে কি না বা গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না। স্বস্তির বিষয় এই যে এখনো গবেষণায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বেশ কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এমন কোনো ঝুঁকি নেই।

চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসায় জোর দিতে হবে। প্রথমত, মা ও তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করতে হবে। গর্ভে থাকা শিশুর ঝুঁকির কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে মা আরও অসুস্থবোধ করতে পারেন। এ সময় মায়ের পাশে থাকতে হবে।

বেশি করে পানি, তরলজাতীয় খাবার ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। অনেকের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও অন্যান্য পানীয় খেতে হবে। মা যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম পান, নিশ্চিত করতে হবে।

জ্বর, শরীর ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারবে। প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় নিরাপদ একটি ওষুধ। তবে ব্যথানাশক ওষুধ; অর্থাৎ পেইনকিলার খাওয়ানো নিষেধ। বিশেষ করে গর্ভকালীনের তৃতীয় পর্যায়ে এটি একেবারেই নিরাপদ নয়। ব্যথানাশক ওষুধ শিশুর জন্মগত ত্রুটি করতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধও খাওয়ানো যাবে না। 

ব্যথা হলে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশু যাতে সুস্থ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভের শিশু ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না, হৃৎস্পন্দন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। 

ডা.

সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা

আগামীকাল পড়ুন: বংশে কারও ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আপনিও কি ঝুঁকিতে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই

রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবু আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তেমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনরংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ আছে এমন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা বলেন, আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ–ছয়জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদপুরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।

বুধবার দুপুরে আমাইপুর গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, গরুর মালিক গরু অসুস্থের কথা বলেননি। বলেছিল, দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। এই দুই স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তাঁরা দেখেননি।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সূত্র বলছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের একজন নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তাঁর বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। বেশির ভাগ সময় পানি জমা ঘাস গবাদিপশু খাচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য অ্যানথ্রাক্স প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে।

অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ইমাদপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাঁরা গরু-ছাগল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করার পরেই গত আগস্ট থেকে তাঁরা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করেছে। এ কারণে এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর ও রাজাটহাটেও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ মাংসের জন্য বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেরি করেনি দাবি করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি, সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা আছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসাব্যবস্থা, সেটাও পর্যাপ্ত আছে। এ মুহূর্তে যেটা বিষয়, জনগণকে সচেতন করা। অসুস্থ প্রাণী জবাই না করা, নিজেরা না খাওয়া, লুকিয়ে বিক্রি না করা। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রোস্টেট ক্যানসারের যেসব সাধারণ উপসর্গকে অনেকেই অবহেলা করেন
  • রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই
  • দেশে আবার অ্যানথ্রাক্স, সুস্থ থাকতে যা জানা জরুরি
  • রংপুরে ৯ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, ছড়িয়ে পরার শঙ্কা 
  • পীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী
  • প্রোস্টেট ক্যানসারে সচেতনতা