গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে করণীয়
Published: 12th, August 2025 GMT
দেশে এখন অনেকের চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বরের পাশাপাশি শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ কারণে চিকিৎসকদের বিভিন্ন রকমের ব্যথা ও প্রদাহনাশক ওষুধ দিতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে সব ওষুধ ব্যবহার নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যথা ও কষ্ট কমাতে করণীয় কী, তা একটি ভাবনার বিষয়।
চিকুনগুনিয়া কী
চিকুনগুনিয়া একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ ছড়ায়। এই একই মশা দিয়ে ডেঙ্গুও হয়। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বর এবং শরীর ও অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে র্যাশ হতে পারে। এ ছাড়া অরুচি ও মাথাব্যথা হতে পারে।
সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকুনগুনিয়া ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকেরই শরীর ও অস্থিসন্ধিতে এই ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থেকে যেতে পারে। এটা হলে অনেক দিন পর্যন্ত ভুগতে হয়।
গর্ভবতীদের জটিলতা হয় কি
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অন্যদের মতোই হবে। বেশির ভাগ সময়ই কোনো রকম গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। অনেকে আতঙ্কিত হন এই ভেবে যে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর কোনো সমস্যা হবে কি না বা গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না। স্বস্তির বিষয় এই যে এখনো গবেষণায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বেশ কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এমন কোনো ঝুঁকি নেই।
চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসায় জোর দিতে হবে। প্রথমত, মা ও তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করতে হবে। গর্ভে থাকা শিশুর ঝুঁকির কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে মা আরও অসুস্থবোধ করতে পারেন। এ সময় মায়ের পাশে থাকতে হবে।
বেশি করে পানি, তরলজাতীয় খাবার ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। অনেকের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও অন্যান্য পানীয় খেতে হবে। মা যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম পান, নিশ্চিত করতে হবে।
জ্বর, শরীর ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারবে। প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় নিরাপদ একটি ওষুধ। তবে ব্যথানাশক ওষুধ; অর্থাৎ পেইনকিলার খাওয়ানো নিষেধ। বিশেষ করে গর্ভকালীনের তৃতীয় পর্যায়ে এটি একেবারেই নিরাপদ নয়। ব্যথানাশক ওষুধ শিশুর জন্মগত ত্রুটি করতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধও খাওয়ানো যাবে না।
ব্যথা হলে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশু যাতে সুস্থ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভের শিশু ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না, হৃৎস্পন্দন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ডা.
সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
আগামীকাল পড়ুন: বংশে কারও ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আপনিও কি ঝুঁকিতে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।
পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।
কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।
আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগেপরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগেবিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে