Prothomalo:
2025-11-17@11:03:17 GMT

পানামা রোজ ও কনকসুধার কথা 

Published: 13th, August 2025 GMT

চলতি বছরের ১২ জুলাই দুপুরে গিয়েছিলাম পুষ্প, বৃক্ষ, লতা, গুল্মে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। দিনটি ছিল শনিবার। গার্ডেন খোলা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। আষাঢ় মাস হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। খুব গরম পড়েছিল সেই দিন। তারপরও সরকারি ছুটির দিন বলে এই দিনেই যাওয়া। উদ্ভিদ ও ফুল দেখার ইচ্ছাটা তো ছিলই। যদি নতুন কোনো ফুল পাই দারুণ হবে। সেদিনই প্রথমবার দেখা পেয়েছিলাম পানামা রোজ ও কনকসুধা ফুলের। এর আগে এই দুই গাছে ফুলের দেখা পাইনি।

নজরকাড়া সুগন্ধির পানামা রোজ

বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেট দিয়ে সোজা প্রবেশ করে নগ্নবীজী উদ্ভিদের বাগানকে বাঁ পাশে রেখে এগিয়ে গেলাম। তারপর পুকুর পেরিয়ে সামনে যেতেই ছোট একটা গুল্মজাতীয় গাছ চোখে পড়ল। দেখলাম তাতে থোকায় থোকায় নজরকাড়া সুন্দর ফুল ফুটে আছে। হঠাৎ দেখলে রঙ্গন এবং পুটুস বা ল্যান্টানার কথা মনে হয়। এটিই পানামা রোজ। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Rondeletia odorata, এটি Rubiaceae পরিবারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কফি আর রঙ্গনও কিন্তু একই পরিবারের। এই গুল্ম ইংরেজিতে পানামা রোজ, ক্লিভল্যান্ড সানরাইজ ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই গুল্ম খরাসহিষ্ণু। এর আদি নিবাস পানামা ও কিউবা। এই জন্যই এই ফুলের নাম পানামা রোজ হয়েছে।

পানামা রোজ সাধারণত এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা আয়তাকার, দৈর্ঘ্যে ৪ থেকে ৬ সেন্টিমিটার হয়। পাতার ওপরের পিঠ রোমযুক্ত, কিনারা ঢেউখেলানো। পাতা পুরু, চামড়ার মতো। পত্রবিন্যাস বিপরীত। সাত থেকে আট মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে। পাপড়ির আগা ভোঁতা ও মাঝখানে একটি হলুদ রঙের ফোঁটা থাকে।

ফুল ফোটার সময় গ্রীষ্ম থেকে শরৎকাল। ফুল সুগন্ধি, লালচে কমলা, হলুদ গলাসহ নলাকার। একেকটি থোকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। দিনের বেলায় ফুলের একটা হালকা ঘ্রাণ থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘ্রাণ আরও শক্তিশালী হয়। পানামা রোজ ফুলে মধু থাকে, যা প্রজাপতি ও মৌমাছিকে আকর্ষণ করে। ফুল ঝরে গেলেও তাদের বৃত্যংশগুলো থেকে যায়। বৃত্যংশগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন এরাও ফুল। এর ফল ছোট, শুষ্ক। ফলে অনেক বীজ থাকে। বীজগুলো সাদা এবং নরম রোমে আবৃত থাকে। ফ্রান্সের মঁপেলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ, চিকিৎসক এবং উদ্ভিদবিদ্যার প্রশিক্ষক গুইলাম রন্ডেলেটের সম্মানে এই উদ্ভিদের গণের নাম Rondeletia রাখা হয়েছে।

চিরসবুজ এই গাছ প্রচণ্ড গরমেও ঝলমলে হয়ে বাঁচে। আবার একটানা ভারী বৃষ্টির মধ্যেও সজীব থাকে। উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি হয় দাবা কলমে। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডেনে কনকসুধা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ