যশোরে অতিবর্ষণে ভেসে গেছে ১৩৪ কোটি টাকার মাছ
Published: 13th, August 2025 GMT
পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষে দেশের প্রথম স্থানে রয়েছে যশোরের অবস্থান। জেলাটিতে অতিবর্ষণে এবার মৎস্য খাতে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। টানা ভারি বর্ষণে মাছের ঘের, পুকুর ও বিল তলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।
মাছ চাষিদের ভাষ্য, গত ৪ দশকের মধ্যে এবার ক্ষতির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে মৎস্য খাতে চাহিদার তুলনায় যশোরে উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ৬ হাজার ২১৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১২৭টি, অভয়নগরে ৩৪০টি, ঝিকরগাছায় ৩৬০টি, মণিরামপুরে ৫৪০টি, কেশবপুরে ২৬০টি, শার্শায় ১ হাজার ৩২টি, চৌগাছা ও বাঘারপাড়ায় ২৮০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
স্থগিত হওয়া জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু ১৮ আগস্ট
মাছ ছিনতাইয়ের মামলায় সাবেক এমপির ছেলে কারাগারে
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি রয়েছেন ৫ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে সদরে ২ হাজার ৮৯৩ জন, অভয়নগরে ৩১৫ জন, ঝিকরগাছায় ৩৬০ জন, মণিরামপুরে ৫১০ জন, কেশবপুরে ১৯০ জন, শার্শায় ৭৬০ জন, চৌগাছায় ১৬০ জন ও বাঘারপাড়ায় ২২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৭৮১ হেক্টর।
ভারি বর্ষণে পুকুর, ঘের ও বিল তলিয়ে ৫ হাজার ৩৪১ টন মাছ ও ৮৩০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। ফলে মাছে ১০৪ কোটি ৮ লাখ ও পোনায় ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার।
বিগত ৪৭ বছরে জেলায় মৎস্য খাতে এমন ক্ষতি কখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন ফিরোজ মৎস্য হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী ফিরোজ খান। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পর এই প্রথম এমন ভারি বর্ষণের মুখোমুখি হতে হয়েছে কৃষকদের। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের ধারণার বাইরে চলে গেছে। যদি কয়েক বছর এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে চাষিরা আর মাছ চাষ করবে না।”
তিনি আরো বলেন, “কৃষিতে সরকার প্রচুর পরিমাণ প্রণোদনা দিলেও মৎস্যখাতে সরকারের কোনো নজর নেই। অথচ আমরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
যশোর জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি জাহিদুর গোলদার বলেন, “একদিকে খাবারের দাম বেশি, অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরা। সবমিলিয়ে বিগত ৮ থেকে ১০ বছর চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “মাছের খাবারের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আবার কৃষি থেকে আমাদের শিল্পখাতে উন্নিত করে বিদ্যুৎ বিলের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় কৃষি হিসেবে এই খাতে বিদ্যুৎ ছিলো ২ টাকা ৪৫ পয়সা রেট। এখন আমাদের বিল দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা রেটে। এ বছর কৃষকরা যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আমরা আবেদন করেছি। তবে এখনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে বিদ্যুতের রেট কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যশোর জেলায় মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এর বিপরীতে জেলার নিজস্ব চাহিদা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। ফলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উদ্বৃত্ত ছিল, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়েছিল।
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মৎস য খ পর ম ণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বন্দরে বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এল তরফদার ট্রেডার্স নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা হয়েছে, যাতে তাদের তিনজন কর্মচারী আহত হয়েছেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই হামলায় চালানো হয়।
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ডাকাত ধরতে গিয়ে হামলায় আহত র্যাব সদস্যরা
হিরো আলমের ওপর হামলা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নওয়াপাড়া রেলস্টেশন বাজারে বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অফিস লক্ষ্য করে দুটি ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একটি ককটেল প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও একটি বাইরে বিস্ফোরিত হয়। এতে মাসুম (৩২), শাওন(৩০) ও জাহাঙ্গীর (২৮) নামে তিন কর্মচারী আহত হন।
এর কিছুসময় পর নওয়াপাড়া ফেরিঘাট এলাকায় এল তরফদার টেড্রার্সের সামনে আরো একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অভয়নগর থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
এর আগে গত ১৮ জুলাই নওয়াপাড়া গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুফলা ভবনে বোমা হামলা হয়, ওই ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা যেন পিছুই ছাড়ছে না বন্দরশহর নওয়াপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার। হামলা, পাল্টা হামলা, গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা রয়েছে অভয়নগরে। এ ছাড়া বিএনপির আন্তর্কোন্দলেও গ্রুপি-ভিত্তিক সংঘাতের খবর রয়েছে।
ঢাকা/রিটন/রাসেল