৩২ ঘণ্টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ, ধারণা গাড়ির গ্যাস থেকে মৃত্যু
Published: 13th, August 2025 GMT
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেট কার থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিনটি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার প্রায় ৩২ ঘণ্টার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে পুলিশ। ফুটেজে এই সময়ের মধ্যে পার্কিংয়ে থাকা ওই গাড়ির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতে দেখা যায়নি। আবার গাড়ি থেকেও কাউকে বের হতে দেখা যায়নি বলে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত সোমবার দুপুরে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে জাকির (২৪) ও মিজান (৩৮) নামে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা-পুলিশ। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গিয়েছিল। তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।
পরদিন মঙ্গলবার এ ঘটনায় গাড়ির চালক জাকিরের বাবা আবু তাহের বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। রমনা-থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।
প্রাইভেট কারটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে জাকির তাঁর গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গত শনিবার এই গাড়িতে করে জোবায়ের তাঁর স্ত্রীর বড় ভাইকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে ঢাকায় যান। এ সময় গাড়িতে জাকিরের সঙ্গে তাঁর বন্ধু মিজানও ওঠেন। মিজান তাঁর প্রতিবেশী এক শিশুকে হাসপাতালটি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। রোববার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তাঁরা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালটিতে পৌঁছান। এরপর মিজান তাঁকে মালিবাগ থেকে নোয়াখালীর একটি বাসে তুলে দেন। বিদায় দেওয়ার সময় জাকির বলেছিলেন, বেলা ১১টার দিকে রোগীকে ছাড়পত্র দেবে, ততক্ষণ তাঁরা দুজন গাড়িতেই ঘুমাবেন। কিন্তু বেলা পৌনে ১১টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি জাকিরকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও পাননি। সোমবার দুপুরে তাঁদের লাশ উদ্ধার হয়।
আরও পড়ুননিহতদের বাড়ি নোয়াখালীতে, হাসপাতাল থেকে রোগী নিতে এসেছিলেন তাঁরা ১১ আগস্ট ২০২৫তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পার্কিংয়ে থাকা দুটি এবং হাসপাতালের সামনের অংশে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে। তারপর আর বের হয়নি। এই সময়ের মধ্যে ওই গাড়ির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতেও দেখা যায়নি। পরে লাশ উদ্ধারের সময় পরীক্ষা–নিরীক্ষায় দেখা যায় অনেক সময় ধরে চালু থাকার কারণে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যাটারির চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস বের হয়ে কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। আবার দীর্ঘ সময় এসি চালু থাকায় সেখান থেকেও অতিমাত্রায় কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস বের হয়ে থাকতে পারে। এই গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে তাঁদের শরীরে প্রবেশ করে তাঁদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আর দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ির মধ্যে বদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে গরমে এক দিনেই তাদের শরীর অস্বাভাবিক ফুলে যায়। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে তাঁরা ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।
রাজধানীর মৌচাকে ডা.সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা এই প্রাইভেট কারের ভেতরে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে