বিশ্বজুড়েই নানাবিধ কাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও বাড়ছে এআইসহ সংশ্লিষ্ট টুলসের ব্যবহার। এবার বাংলাদেশের সাংবাদিক, গণমাধ্যম পেশাজীবী ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের সুযোগ এসেছে আগামীর ডিজিটাল সাংবাদিকতার জন‍্য প্রস্তুতির।

গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ‘ইনফরমেশন ক্রেডিবিলিটি অ্যান্ড এআই লিটারেসি ট্রেনিং’ শীর্ষক কর্মসূচি।

পাঁচটি মডিউলে সাজানো মোট ১০ ঘণ্টার কোর্সটি করা যাবে অনলাইনে। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে নির্বাচিত এক হাজার জন অংশ নিতে পারবেন এই কোর্সে। এ জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কোনো কোর্স ফি দিতে হবে না। সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারীরা মূল্যায়ন শেষে পাবেন সার্টিফিকেট।

প্রশিক্ষণ কোর্সে যা থাকছে

এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ডিজিটাল সাংবাদিকতায় দক্ষতা বৃদ্ধি। এ জন্য তথ্য সংগ্রহ, যাচাই, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরিতে এআইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে কোর্সটিতে। নোটবুক এলএম, জেমিনি, পিনপয়েন্টের মতো এআই টুলস এবং সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত টুলস—যেমন রিসার্চ, রিপোর্টিং ভেরিফিকেশন ও গুগল ট্রেন্ডস থাকবে এই প্রশিক্ষণের কেন্দ্রে। কোর্সটির অর্থায়ন ও পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন করেছে গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ (জিএনআই)।

প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন যাঁরা

জিএনআইয়ের মাস্টার ট্রেইনার আইদিলা রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে কোর্সটি পরিচালনা করবেন দেশের সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম পেশাজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। প্রশিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.

সাইফুল আলম চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল কাবিল খান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সহকারী অধ্যাপক মালিহা তাবাসসুম, ডিজিটালি রাইটসের ফ্যাক্ট–চেকার মিনহাজ আনাম, যমুনা টিভির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মাহফুজ মিশু, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আজাদ বেগ ও সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম, ঢাকা পোস্টের ফিচার এডিটর আরিফুল ইসলাম আরমান, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ এবং ডিজিটাল বিজনেস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার আ ফ ম খায়রুল বাশার।

আয়োজনটির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।

নিবন্ধন করবেন যেভাবে

অনলাইন কোর্সটিতে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। আগ্রহীরা নিবন্ধনের সময়ই সুবিধামতো ‘কোর্স টাইম’ বাছাই করতে পারবেন। ৩০ আগস্ট ২০২৫–এর মধ্যে GNitrainingBD.com লিংকে গিয়ে সহজেই নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ