ইটনায় ইউএনওর বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ১
Published: 14th, August 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হানুল ইসলামের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে আব্দুর নূর (৪৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আব্দুর নূর ইটনা সদরের বড়হাটি গ্রামের মৃত খুর্শিদ মিয়ার ছেলে।
ইউএনও রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্থানীয় কয়েকজন উপজেলা মিনি স্টেডিয়ামে জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন খেলাধুলা পরিচালনা করছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে ওই মাঠে খেলাধুলার বিষয়ে কিছু বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শতাধিক দুর্বৃত্ত পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যায় আমার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দিতে চাইলে আনিস মিয়া নামে এক এসআইসহ কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্য আহত হন। ঘটনার সময় আমি বাসার বাহিরে ছিলাম। হামলাকারীরা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় আহত এক আনসার সদস্য বাদী হয়ে ইটনা থানায় মামলা করেছেন।’’
আরো পড়ুন:
প্রবাসীর পরিত্যক্ত ঘরে মিলল ৩০ হাতবোমা
গাছের পাতা খাওয়ায় কুপিয়ে মারা হলো ছাগলকে
ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/রুমন/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব সভবন র সদস য আনস র
এছাড়াও পড়ুন:
ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি
কঠোর পরিশ্রম করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন, তারপর পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে জিতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন সানায়ে তাকাইচি। গত ২১ অক্টোবর ভোটে জেতার পর থেকে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছেন জাপানের এই ‘লৌহমানবী’।
কিন্তু তাকাইচি যেভাবে বিশ্রাম না নিয়ে, না ঘুমিয়ে, বিরতিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন, তাতে তাঁর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনাও।
নিজের প্রথম পার্লামেন্টারি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোররাত ৩টায় নিজের কার্যালয়ে আসেন তাকাইচি। পার্লামেন্টে একটি বাজেট কমিটির ওই বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়।
জাতিগতভাবে জাপানিরা সারা বিশ্বে ‘কাজপাগল’ ও ‘পরিশ্রমী’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সকাল ৯টার বৈঠকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভোররাত ৩টায় কার্যালয়ে হাজির হওয়ার খবর জানতে পেরে অনেক জাপানির চোখও কপালে উঠেছে।
তাকাইচির প্রশাসন জাপানে কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সময়সীমা শিথিল করার পক্ষে। অথচ তিনিই ভোর হওয়ার আগে কাজ শুরু করেন। এটা একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করেছে বলে অনেকে এর সমালোচনা করছেন।এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুজি নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেন, ‘যখন আমি শুনলাম, তিনি ভোররাত ৩টায় এসেছেন, আমি যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি।’
স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের আগেই তাকাইচির কাজ শুরু করা নিয়ে পরে কমিটির সভায় কয়েকজন আইনপ্রণেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘আমি খুবই কম ঘুমাই’
জাপানের প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির তাকাহিরো কুরোইওয়া বলেন, ‘আমি অনুমান করতে পারছি, কয়েকজন কর্মী রাতভর জেগে খসড়া জবাব প্রস্তুত করেছেন।’
রাজধানী টোকিওর মধ্যাঞ্চলে জাপানের পার্লামেন্ট সদস্যদের জন্য বসবাসের সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। তাকাইচি এখনো সেখানেই আছেন। তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বাসভবনে যাননি।
ভোর হওয়ার আগেই নিজের কার্যালয়ে চলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাকাইচি বলেন, তিনি এখন যে ভবনে থাকছেন, সেখানে একটিমাত্র পুরোনো ফ্যাক্স মেশিন আছে। এ কারণে লজিস্টিক সমস্যায় পড়তে হয়।
কুরোইওয়া তখন জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হননি। তাকাইচি বলেন, কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর তিনি সেখানে যাবেন।
সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে এবং একটি নির্বিঘ্ন পার্লামেন্টারি আলোচনার জন্য নিখুঁত প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিলমিনোরু কিহারা, জাপান সরকারের মুখপাত্রজাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাতে ঘুমানোর জন্য তিনি দুই থেক চার ঘণ্টা সময় পান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার হাতে মালপত্র গোছানোর সময় একেবারেই নেই...এমনকি আমি ঘুমানোর সুযোগও খুব কম পাই।’
তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা তাঁর আছে বলে জানান জাপানের এই নতুন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এর আগে তাকাইচিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হতে চলা জি–২০ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলেও জানান তাকাইচি। ২২ ও ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জি–২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী নজির স্থাপন করছেন কি না, এমন প্রশ্নের বাইরে আরও একটি বিষয় নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেটি হলো তাকাইচির স্বাস্থ্য।
পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালে জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) আইনপ্রণেতা কেন সাইতো নিজ দলের নেতাকে বলেন, যখনই পারবেন, কৌশলে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেবেন।
সাইতো আরও বলেন, ‘আপনি বলেন, আপনি কাজ, কাজ আর কাজ করতে চান। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন।’
নিজের প্রথম পার্লামেন্টারি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোররাত ৩টায় নিজের কার্যালয়ে আসেন তাকাইচি। পার্লামেন্টে একটি বাজেট কমিটির ওই বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়।অধিবেশনে কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কাতসুহিতো নাকাজিমাও প্রধানমন্ত্রী তাকাইচিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলেন। এ পরামর্শ শুনে হেসে একটু মাথা নোয়ান প্রধানমন্ত্রী।
তাকাইচির প্রশাসন জাপানে কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সময়সীমা শিথিল করার পক্ষে। অথচ তিনিই ভোর হওয়ার আগে কাজ শুরু করেন। এটি একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করেছে বলে অনেকে এর সমালোচনা করছেন। সমালোচকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি অনেকে ‘কারোশি’–এর (অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যু) কথাও বলছেন।
বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপলের (ডিপিপি) সাধারণ সম্পাদক কাজুয়ু শিমবা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, তিনি তাঁর কর্মীদের কল্যাণের বিষয়টিকে অবহেলা করেছেন।
স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যদি প্রধানমন্ত্রী ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন, তবে কর্মীদের মধ্যরাত, দেড়টা বা ২টায় কাজ শুরু করতে হবে। মানুষের শারীরে এটা সহ্য হবে না।’
জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ শতাংশ নারী দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বেশি ভাগের উদ্বেগ, প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোম্পানিগুলোকে কর্মীর কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করবে।সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বলেন, সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে এবং একটি নির্বিঘ্ন পার্লামেন্টারি আলোচনার জন্য ‘নিখুঁত প্রস্তুতি’ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাজ এবং সুস্থ জীবনযাপনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টির গুরুত্ব অস্বীকার করেন না। কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন বৈচিত্র্যময় প্রতিভার অধিকারীরা শান্ত মনে কাজ করতে পারেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
‘কাজ, কাজ এবং কাজ’
চারজন পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এলডিপির নেতৃত্বে আসেন তাকাইচি। এরপরই গত ৪ অক্টোবর এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, তিনি কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য কথাটি থেকে দূরে থাকবেন।
তাকাইচি বলেছিলেন, ‘আমি কাজ, কাজ আর কাজ করব।’ তিনি এলডিপির সদস্যদের অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে বলেছেন।
অনেক কর্মজীবী নারী তাকাইচির মন্তব্যকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।
যদি প্রধানমন্ত্রী ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন, তবে কর্মীদের মধ্যরাত, দেড়টা বা ২টায় কাজ শুরু করতে হবে। মানুষের শারীরে এটা সহ্য হবে নাউইমেন টাইপ নামের একটি ওয়েবসাইট তাকাইচির ওই মন্তব্যের চার দিন পর একটি জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৫৩ শতাংশ নারী তাকাইচির বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
২৯ শতাংশ নারী দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বেশি ভাগের উদ্বেগ, প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোম্পানিগুলোকে কর্মীর কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করবে।
আরও পড়ুনজাপানে ইতিহাস গড়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তাকাইচি২১ অক্টোবর ২০২৫