হিলিতে আমদানিকৃত চাল খালাস করছেন না আমদানিকারকরা
Published: 15th, August 2025 GMT
দীর্ঘ চার মাস পর চাল আমদানিতে সরকারের অনুমতি পেলেও কাস্টমস শুল্ক-কর বেশি থাকায় চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। শুল্ক-কর কমার আশায় অনেক আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি করলেও আর্থিক লোকসানের ভয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে চালের ডিউটি কমেছে এমন কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত মঙ্গলবার-বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে ১৫টি ট্রাকে চাল আমদানি করা হয়েছে। তবে চালের চালান দেশে আনা হলেও শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে কাস্টমস থেকে খালাস করছেন না আমদানিকারকরা।
চাল আমদানিকারকরা বলছেন, এই অবস্থায় চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে কাস্টমস শুল্ক-কর পড়বে ৩১ টাকা। আবার ভারতে চালের আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিকটন ৫৩০-৫২০ ডলার। তাতে প্রতি কেজি চাল বাংলাদেশি টাকায় ৬৩-৬৫ টাকা পড়ে। সবমিলিয়ে প্রতি কেজি চাল আমদানি করতে পড়বে ৯৫-৯৬ টাকা। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল আমদানি সম্ভব না। সরকার যদি পূর্বের মতো চাল আমদানিতে দুই শতাংশ শুল্ক-কর বসায় তাহলে আমদানি করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে চালের মজুত ও ভোক্তা পর্যায়ে দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার বেসরকারিভাবে পাঁচ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ২৩ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দেশের আমদানিকারকদের কাছে আবেদন আহ্বান করে। আমদানিকারকরা আবেদন করলে সরকার প্রথম পর্যায়ে গত ১০ আগস্ট ২৪২ জন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সায়রাম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ললিত কেশরা বলেন, “সরকারের ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা সম্ভব না। আমরা এলসি করে রাখব। সরকার যদি শুল্ক প্রত্যাহার করে বা পূর্বের ২ শতাংশ শুল্ক যেটা ছিল, সেই শুল্ক করা হয়, তাহলে চাল আমদানি করা যাবে। বর্তমান শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩৫ টাকা শুল্ক দিতে হবে। আর চাল কিনতে পড়বে ৬৮-৭০ টাকা টাকা।”
তিনি আরো বলেন, “সবমিলিয়ে কেজিতে আমদানি ও সরকারের শুল্কসহ পড়বে ১০০ টাকার উপরে। আমরা আমদানিকারকরা চাই সরকার দ্রুত শুল্ক কমিয়ে যেন চাল আমদানি করার সুযোগ দেয়। না হলে আমদানি করা যাবে না। আমদানি করে দেশের বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে আমরা তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা লোকসানে পড়তে পারি না। বাজারে এখনো এমনিতেই চালের দাম কম আছে।”
অপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিফা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, “এক হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির বরাদ্দ পেয়েছি। সরকার শুল্ক না কমালে আমরা এলসি করব না। শুধু আমি না, কেউ করবে না।”
ট্রাক ভর্তি চাল এভাবেই পড়ে আছে কাস্টমসের শেডে
তিনি জানান, সরকারের ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ দিয়ে চাল আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক পড়বে ৩১ টাকার উপরে। আবার ভারতে ৫৫০-৫২০ ডলারের বিপরীতে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে বাংলাদেশি টাকায় খরচ পড়বে ৬৩-৬৫ টাকা। কাস্টমস শুল্ক ৩১ টাকা আর প্রতি কেজি কিনতে ৬৫ টাকা- তাহলে দেখা যায় ৯৬ টাকা পড়ছে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে। বর্তমানে দেশের বাজারে ভালো মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভারত থেকে ১৫টি ট্রাকে চালের চালান দেশে পৌঁছেছে। নওগাঁর মিঠুন সাহা নামে এক আমদানিককারক তিনটি ভারতীয় ট্রাকে ১২৫ মেট্রিকটন ৯৪৪ কেজি চাল আমদানি করেন।
তিনি বলেন, “সরকার চালের ডিউটি কমাবে এই আশায় চাল আমদানি করেছি। কিন্তু সরকার এখনো চালের ডিউটি কমায়নি। বর্তমান কাস্টমস শুল্ক দিয়ে চাল খালাস করলে বড় ধরনের লোকমান গুনতে হবে। আমদানিকারকরা শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের সাথে যোগাযোগ করছেন। দেখি কী হয়। শুল্ক না কমালে বাজারে আমদানি করা চালের দাম কমবে না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। দাম আরও বেড়ে যাবে।”
হিলি বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী ইউসুফ আলী বলেন, “বুধবার দুপুর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের ৩২ জন আমদানিকারক ৪৫ হাজার মেট্রিকটন চাল ভারত থেকে আমদানি করার জন্য কৃষি অধিদপ্তরের খামারবাড়ি থেকে অনুমতি (আইপি) পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরো আমদানিকারক চাল আমদানির অনুমতি পাবেন। গত ১৬ এপ্রিল থেকে দেশে চাল আমদানি বন্ধ ছিল।”
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, “গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে চালের ডিউটি কমেছে এমন কোনো আদেশ আমাদের কাছে আসেনি। এমনকি কাস্টমস সার্ভারে চালের ডিউটির ব্যাপারে কোনো তথ্য আপলোড হয়নি। তাই বর্তমান যে ডিউটি আছে অর্থাৎ ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারকরা চাইলে তাদের চাল বন্দর থেকে খালাস করে নিতে পারবেন।”
ঢাকা/মোসলেম/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক স টমস শ ল ক আমদ ন ক রকর চ ল আমদ ন ত চ ল র ড উট ম ট র কটন খ ল স কর শ ল ক কর সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে পরামর্শ সভা
সাতক্ষীরায় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে স্থানীয়দের চাহিদা নিরুপনে নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৫ শীর্ষক উপজেলা পর্যায়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডো এর আয়োজনে এবং একশনএইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
পূজার ছুটির পর গকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক
নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ ২ দল
সিডো সাতক্ষীরার প্রধান নির্বাহী শ্যামল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. তহিদুজ্জামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর শফিক-উ-দ্দৌলা সাগর, টিআইবি সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হেনরী সরদার, একশনএইড প্রতিনিধি সুইট খান, ইয়ূথ সভাপতি সাকিব হাসান, প্রোগ্রাম অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাতক্ষীরা জেলার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা অনেক শোচনীয়। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে রাস্তা-ঘাটের সংস্কার খুব জরুরি। সুন্দরবন কেন্দ্রিক টেকসই ইকোটুরিজম প্রতিষ্ঠা, সুন্দরবনের পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই ইকোটুরিজম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা জেলার শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষা সুবিধা দেবে।
তারা বলেন, রেল সংযোজন সাতক্ষীরা জেলা দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার। সাতক্ষীরাকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে অন্তভুক্ত করতে হবে, যা জেলা ও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া সাতক্ষীরায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, সীমান্তে মাদক প্রতিরোধে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, স্থলবন্দরকে পূর্নাঙ্গ বন্দরে রুপান্তর, সাতক্ষীরার ভোমরাকে একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কার্যকর পৌরসভার ব্যবস্থাপনা, সুন্দরবন বাঁচাতে জীবশ্ম জ্বালানীকে পরিবর্তে নবায়ন যোগ্য জ্বালানী সংযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনা, সবুজ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণাগার তৈরি, প্রাণ সায়ের খালের দুই ধার সৌন্দর্যবর্ধন, যুবদের মুক্ত চিন্তা, উন্নয়ন ভাবনা ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য শিক্ষালয় কেন্দ্রিক যুববান্ধব স্পেস তৈরি ও কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেন বক্তারা।
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী