দীর্ঘ চার মাস পর চাল আমদানিতে সরকারের অনুমতি পেলেও কাস্টমস শুল্ক-কর বেশি থাকায় চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। শুল্ক-কর কমার আশায় অনেক আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি করলেও আর্থিক লোকসানের ভয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে চালের ডিউটি কমেছে এমন কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, গত মঙ্গলবার-বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে ১৫টি ট্রাকে চাল আমদানি করা হয়েছে। তবে চালের চালান দেশে আনা হলেও শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে কাস্টমস থেকে খালাস করছেন না আমদানিকারকরা।

চাল আমদানিকারকরা বলছেন, এই অবস্থায় চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে কাস্টমস শুল্ক-কর পড়বে ৩১ টাকা। আবার ভারতে চালের আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিকটন ৫৩০-৫২০ ডলার। তাতে প্রতি কেজি চাল বাংলাদেশি টাকায় ৬৩-৬৫ টাকা পড়ে। সবমিলিয়ে প্রতি কেজি চাল আমদানি করতে পড়বে ৯৫-৯৬ টাকা। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল আমদানি সম্ভব না। সরকার যদি পূর্বের মতো চাল আমদানিতে দুই শতাংশ শুল্ক-কর বসায় তাহলে আমদানি করা যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে চালের মজুত ও ভোক্তা পর্যায়ে দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার বেসরকারিভাবে পাঁচ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ২৩ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দেশের আমদানিকারকদের কাছে আবেদন আহ্বান করে। আমদানিকারকরা আবেদন করলে সরকার প্রথম পর্যায়ে গত ১০ আগস্ট ২৪২ জন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সায়রাম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ললিত কেশরা বলেন, “সরকারের ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা সম্ভব না। আমরা এলসি করে রাখব। সরকার যদি শুল্ক প্রত্যাহার করে বা পূর্বের ২ শতাংশ শুল্ক যেটা ছিল, সেই শুল্ক করা হয়, তাহলে চাল আমদানি করা যাবে। বর্তমান শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩৫ টাকা শুল্ক দিতে হবে। আর চাল কিনতে পড়বে ৬৮-৭০ টাকা টাকা।”

তিনি আরো বলেন, “সবমিলিয়ে কেজিতে আমদানি ও সরকারের শুল্কসহ পড়বে ১০০ টাকার উপরে। আমরা আমদানিকারকরা চাই সরকার দ্রুত শুল্ক কমিয়ে যেন চাল আমদানি করার সুযোগ দেয়। না হলে আমদানি করা যাবে না। আমদানি করে দেশের বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে আমরা তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা লোকসানে পড়তে পারি না। বাজারে এখনো এমনিতেই চালের দাম কম আছে।”

অপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিফা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, “এক হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির বরাদ্দ পেয়েছি। সরকার শুল্ক না কমালে আমরা এলসি করব না। শুধু আমি না, কেউ করবে না।”

ট্রাক ভর্তি চাল এভাবেই পড়ে আছে কাস্টমসের শেডে

তিনি জানান, সরকারের ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ দিয়ে চাল আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক পড়বে ৩১ টাকার উপরে। আবার ভারতে ৫৫০-৫২০ ডলারের বিপরীতে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে বাংলাদেশি টাকায় খরচ পড়বে ৬৩-৬৫ টাকা। কাস্টমস শুল্ক ৩১ টাকা আর প্রতি কেজি কিনতে ৬৫ টাকা- তাহলে দেখা যায় ৯৬ টাকা পড়ছে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে। বর্তমানে দেশের বাজারে ভালো মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

এদিকে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভারত থেকে ১৫টি ট্রাকে চালের চালান দেশে পৌঁছেছে। নওগাঁর মিঠুন সাহা নামে এক আমদানিককারক তিনটি ভারতীয় ট্রাকে ১২৫ মেট্রিকটন ৯৪৪ কেজি চাল আমদানি করেন।

তিনি বলেন, “সরকার চালের ডিউটি কমাবে এই আশায় চাল আমদানি করেছি। কিন্তু সরকার এখনো চালের ডিউটি কমায়নি। বর্তমান কাস্টমস শুল্ক দিয়ে চাল খালাস করলে বড় ধরনের লোকমান গুনতে হবে। আমদানিকারকরা শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের সাথে যোগাযোগ করছেন। দেখি কী হয়। শুল্ক না কমালে বাজারে আমদানি করা চালের দাম কমবে না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। দাম আরও বেড়ে যাবে।”

হিলি বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী ইউসুফ আলী বলেন, “বুধবার দুপুর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের ৩২ জন আমদানিকারক ৪৫ হাজার মেট্রিকটন চাল ভারত থেকে আমদানি করার জন্য কৃষি অধিদপ্তরের খামারবাড়ি থেকে অনুমতি (আইপি) পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরো আমদানিকারক চাল আমদানির অনুমতি পাবেন। গত ১৬ এপ্রিল থেকে দেশে চাল আমদানি বন্ধ ছিল।”

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, “গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে চালের ডিউটি কমেছে এমন কোনো আদেশ আমাদের কাছে আসেনি। এমনকি কাস্টমস সার্ভারে চালের ডিউটির ব্যাপারে কোনো তথ্য আপলোড হয়নি। তাই বর্তমান যে ডিউটি আছে অর্থাৎ ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারকরা চাইলে তাদের চাল বন্দর থেকে খালাস করে নিতে পারবেন।”

ঢাকা/মোসলেম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক স টমস শ ল ক আমদ ন ক রকর চ ল আমদ ন ত চ ল র ড উট ম ট র কটন খ ল স কর শ ল ক কর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন

ভারত আরও চারটি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ১৫ শতাংশের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা থাকলেও এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। তাই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাতে সমস্যা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ আছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে গতকাল সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি।

এদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
  • ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন