সাংবাদিকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস) টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের আরও দক্ষ করে তুলতে পারবেন। প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও বিশ্লেষণে তাঁদের জন্য এআই টুলস সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে সাংবাদিকতায় নৈতিক ও দায়িত্বশীলভাবে এআই ব্যবহার করতে হবে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘ইনফরমেশন ক্রেডিবিলিটি অ্যান্ড এআই লিটারেসি ট্রেনিং’ শিরোনামে এআই টুলস ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সভা শেষে এ কথা বলেন মালয়েশীয় প্রশিক্ষক আইদিলা রাজ্জাক। তিনি আরও বলেন, এআই টুলস ব্যবহার সম্পর্কে যত জ্ঞান অর্জন করা যাবে, ততটাই যথাযথভাবে এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করাও সম্ভব হবে।

গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ‘ইনফরমেশন ক্রেডিবিলিটি অ্যান্ড এআই লিটারেসি ট্রেনিং’ শিরোনামের এই কোর্স। দেশের সাংবাদিক, গণমাধ্যম পেশাজীবী ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ডিজিটাল সাংবাদিকতার জন‍্য প্রস্তুতির লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে কোর্সটি। পাঁচটি মডিউলে সাজানো মোট ১০ ঘণ্টার কোর্সটি করা যাবে অনলাইনে। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে নির্বাচিত এক হাজার জন অংশ নিতে পারবেন এই কোর্সে। ৩০ আগস্টের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কোনো কোর্স ফি দিতে হবে না। আগ্রহীরা নিবন্ধনের সময়ই সুবিধামতো ‘কোর্স টাইম’ বাছাই করতে পারবেন। GNitrainingBD.

com লিংকে গিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

তথ্য সংগ্রহ, যাচাই, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরিতে এআইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে কোর্সটিতে। নোটবুক এলএম, জেমিনি, পিনপয়েন্টের মতো এআই টুলস এবং সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণা, রিপোর্টিং ভেরিফিকেশন ও গুগল ট্রেন্ডস থাকবে এই প্রশিক্ষণে। কোর্সটির অর্থায়ন ও পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন করেছে গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ (জিএনআই)।

জিএনআইয়ের মাস্টার ট্রেইনার আইদিলা রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে কোর্সটি পরিচালিত হবে। আজ প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সভা শেষে আইদিলা রাজ্জাক প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই কোর্সের মূল লক্ষ্য হলো সাংবাদিক ও ভবিষ্যতের সাংবাদিকদের মধ্যে এআই-সংক্রান্ত জ্ঞান বৃদ্ধি করা। শুধু এআই জানা নয়, বরং নৈতিকভাবে ও দায়িত্বশীলভাবে এর ব্যবহার শেখানোও এই কোর্সের উদ্দেশ্য। এখানে এমন কিছু টুলস দেখানো হবে, যা সাংবাদিকদের কাজ দ্রুত ও ভালোভাবে করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি শেখানো হবে, কীভাবে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা এআই চেনা যায়।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এআইয়ের প্রভাব কী হতে পারে জানতে চাইলে আইদিলা বলেন, এআই সাংবাদিকদের জায়গা দখল করবে, এমন কিছু অনুমাননির্ভর ধারণা রয়েছে। আসলে এআই সাংবাদিকদের প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। সাংবাদিকদের কীভাবে এআই আরও দক্ষ করে তুলতে পারে, সেটাই দেখানো হবে কোর্সে। সাংবাদিকেরা অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন, এআইয়ের পক্ষে যা করা সম্ভব নয়। বরং রুটিন ও একঘেয়ে কাজ—যেমন অনুবাদ, উপাত্তগুলো বের করা, এসব কাজ এআইয়ের ওপর দিয়ে দিতে হবে। তাহলে সাংবাদিকেরা মূল বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে পারবেন।

আইদিলা বলেন, ‘যেসব রুটিন কাজে সময় নষ্ট হয়, সেগুলো এআইকে দিয়ে দিন। সাংবাদিক হিসেবে আপনার এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতাকে কাজে লাগান।’

এ বিষয়ে আইদিলা রাজ্জাক আরও বলেন, ‘এআই একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত বিশ্লেষণ করতে পারে। যেমন কেউ ১০ বছর আগে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, সেই প্রতিবেদন সম্পর্কে এআই তেমন কিছু তথ্য দিতে পারে না। যেমন আমি গতকাল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জানার জন্য একটি এআই টুল ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু সে আমাকে ভাসা ভাসা তথ্য দিচ্ছিল। আমি আমার সাংবাদিকতার বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে অনেক তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করেছি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জানতে।’

এআইকে নিজের জন্য সহায়ক টুলস উল্লেখ করে আইদিলা রাজ্জাক বলেন, ‘অনেকে দৈনন্দিন কাজে মাত্রাতিরিক্তভাবে এআই ব্যবহার করেন। এত বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। অনেকে এআইকে মানুষের মতো বিবেচনা করে চ্যাট করেন। এটারও কোনো প্রয়োজন নেই। আমি নিজে কখনো এআইকে মানুষ বা বন্ধু বিবেচনা করে কথা বলি না। আমার কাজের সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করি।’

এআই টুলসে পক্ষপাতের ঝুঁকি আছে কি না, জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার প্রশিক্ষক বলেন, সে ধরনের ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। বিশেষ করে যদি এআই দিয়ে তথ্য সংগ্রহ বা কোনো বিষয়ে ধারণা নেওয়া হয়। তাই তথ্যের উৎস কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা সাংবাদিককে যাচাই করতে হবে। এআই সাংবাদিকদের কাজ দ্রুত করবে; কিন্তু সে তথ্য সঠিক, যথাযথ ও নিরপেক্ষ কি না, তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, বিবেচনাবোধ ও বিচক্ষণতা থাকা জরুরি।

রাজনীতি ও সমাজে এআইনির্ভর ভুয়া তথ্য ও ডিপফেকের ঝুঁকি কতটা আছে জানতে চাইলে আইদিলা রাজ্জাক বলেন, এটি খুবই গুরুতর বিষয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এআইনির্ভর বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। অনেক মানুষ, বিশেষ করে যাঁদের ডিজিটাল জ্ঞান কম, সহজেই এসব মিথ্যা বিশ্বাস করে বসেন। তাই এই কোর্সের মতো বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দরকার, যাতে মানুষ এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট চিনতে পারেন এবং বুঝতে পারেন এগুলো কীভাবে তৈরি হয়।

প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন যাঁরা

জিএনআইয়ের মাস্টার ট্রেইনার আইদিলা রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে কোর্সটি পরিচালনা করবে দেশের সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম পেশাজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। প্রশিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল কাবিল খান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সহকারী অধ্যাপক মালিহা তাবাসসুম, অ্যাকটিভেট রাইটসের রিসার্চ লিড মিনহাজ আমান, যমুনা টিভির স্পেশাল করেসপনডেন্ট মাহফুজ মিশু, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আজাদ বেগ ও সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম, ঢাকা পোস্টের হেড অব নিউ মিডিয়া ইনিশিয়েটিভ আরিফুল ইসলাম আরমান, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ এবং ডিজিটাল বিজনেস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার আ ফ ম খায়রুল বাশার।

আয়োজনটির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ব যবহ র কর শ ক ষকদ র প রথম আল ব দ কত র এই ক র স এআই ট ল এআইয় র র জন ত প রব ন র জন য এআই স আইদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এআই নিয়ে টার্মিনেটর সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরনের সতর্কবার্তা

১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য টার্মিনেটর’ সিনেমা দেখেছেন অনেকেই। জেমস ক্যামেরনের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় সেই সিনেমায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির স্কাইনেট নামের একটি কাল্পনিক এআইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, যেটি পুরো মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। কাল্পনিক সেই এআইয়ের স্রষ্টা জেমস ক্যামেরন এবার বাস্তবের আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার আশঙ্কা, এআই প্রযুক্তি লাগামহীনভাবে সামরিক প্রযুক্তিতে যুক্ত হলে মানবসভ্যতা টার্মিনেটরের মতো সর্বনাশের মুখে পড়তে পারে।

রোলিং স্টোন সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন জানান, সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি মানুষের সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নাও হতে পারে। মানবজাতি এখন একসঙ্গে তিনটি বড় সংকটের মুখে। এগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ধ্বংস, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার এবং অতিবুদ্ধিমান এআই। এই তিনটি সংকট একই সময়ে তীব্র আকার ধারণ করছে, যা মানব ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, এআই পারমাণবিক বিপর্যয়ের সমতুল্য দুর্যোগ ঘটাতে পারে বলে মনে করেন ৩৬ শতাংশ এআই গবেষক। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করে বলেছেন, খুব শিগগির এআই ও পারমাণবিক অস্ত্রের সমন্বয় প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

যুদ্ধাস্ত্রে এআই ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও চলচ্চিত্র নির্মাণে এর সীমিত ও পরিকল্পিত ব্যবহারকে সমর্থন করেন ক্যামেরন। তার মতে, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের ক্ষেত্রে এআই ব্যয় প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিতে পারে। এআই সৃজনশীল প্রক্রিয়ার গতি বাড়ালেও চিত্রনাট্যকার বা অভিনেতার জায়গা নিতে পারবে না।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআই নিয়ে টার্মিনেটর সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরনের সতর্কবার্তা