দেশের একসময়কার ফুটবল–উন্মাদনা হারিয়ে গেলেও এ খেলায় নতুন এক জোয়ার এনেছেন নারী ফুটবলাররা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক সাফল্যের কাব্য লিখে চলেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রেখে তারা এখন এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এই সোনালি সাফল্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক চরম হতাশার গল্প। সাফল্যের বিপরীতে নারী ফুটবলারদের পরিচর্যার ঘাটতি বারবার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। 

দেশের হয়ে সম্মান বয়ে আনা নারী ফুটবলারদের সামান্য পাওনাটুকুও মাসের পর মাস আটকে থাকছে। ম্যাচ ফি থেকে শুরু করে বেতন, পুরস্কারের টাকা—সবকিছুই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দায়িত্বহীনতার বেড়াজালে আটকা পড়ে আছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলো সত্যিই পীড়াদায়ক। একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আসা নারী ফুটবলাররা এখনো তাঁদের প্রাপ্য ম্যাচ ফি পাননি। যেখানে এক মিনিটের জন্য মাঠে নামলেও ১০ হাজার টাকা প্রাপ্য, সেই সামান্য অর্থও সময়মতো না পেয়ে দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

ফুটবলাররা জানাচ্ছেন, চুক্তি অনুযায়ী বেতনও বাকি। একুশে পদক জেতার পর সরকারের দেওয়া আর্থিক পুরস্কারের ১২ হাজার টাকাও খেলোয়াড়দের হাতে পৌঁছায়নি। এসব আর্থিক পাওনা আটকে থাকার কারণ হিসেবে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা আরও হতাশাজনক। বাফুফের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘ফাইন্যান্স আমার বিষয় নয়’, আরেকজন বলছেন ‘নো কমেন্ট’, এবং সাধারণ সম্পাদক দাবি করছেন যে তথ্য সঠিক নয়। এ ধরনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা প্রমাণ করে ফুটবলারদের প্রাপ্য নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো, সাফ শিরোপা জয়ের ৯ মাস পার হয়ে গেলেও বাফুফের ঘোষণা করা দেড় কোটি টাকার পুরস্কার এখনো ফুটবলাররা পাননি। এই পুরস্কারের ঘোষণা ছিল তাঁদের প্রাপ্য সম্মানের প্রতীক, যা এখন এক তিক্ত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। একজন খেলোয়াড়ের প্রশ্ন, ‘টাকাই যখন দেবেন না, তখন ঘোষণার কী প্রয়োজন ছিল?’ এই প্রশ্ন কেবল একজন খেলোয়াড়ের নয়, এটি প্রত্যেক নাগরিকের প্রশ্ন। যারা দেশকে সম্মান এনে দিল, তাদের প্রাপ্যটুকুও নিশ্চিত করতে যারা ব্যর্থ, তাদের কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা কী?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যখন ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণা চাকমাকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, তখন বাফুফের মতো প্রতিষ্ঠান নারী ফুটবলারদের ন্যূনতম প্রাপ্যটুকুও নিশ্চিত করতে পারছে না। দেশের ফুটবলের অভিভাবক হয়ে বাফুফে কেবল নিজেদের দায় এড়ানোর খেলায় ব্যস্ত। নারী ফুটবল লিগের অনিয়মিত আয়োজন ও দেশের বাইরে গিয়ে খেলতে গিয়ে ভুটানের মতো দেশের মেয়েদের কাছে লজ্জিত হওয়ার ঘটনা আমাদের ফুটবলের অব্যবস্থাপনারই প্রতিফলন। আমরা চাই নিয়মিত লিগ আয়োজন করা হোক এবং সেটি যেন দায়সারাভাবে না হয়। 

মাঠের বাইরের নানা বঞ্চনা নারী ফুটবলারদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। অথচ তাঁদের কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগই দেশের জন্য এই সম্মান বয়ে এনেছে। বাফুফের উচিত অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা। খেলোয়াড়দের সব বকেয়া পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া, পুরস্কারের অর্থ হস্তান্তর করা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। 

আমাদের দেশের নারী ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন, আবার মাঠের বাইরে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাঁদের। এটি পেশাদারি ফুটবলের চরম ক্ষতির পথ উন্মোচন করবে। আমরা আমাদের ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চাইলে ফুটবলারদের বঞ্চনা–গঞ্জনা থেকে মুক্ত করতে হবে। বাফুফের উচিত শুধু বিজয় উদ্‌যাপন নয়, বরং দেশের এই তারকাদের প্রতি তাদের দায়িত্বটুকুও পালন করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র র স ফল য র ফ টবল র র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯