পাকিস্তান দলটাই তো এমন—কখন কী করে ফেলে বলা মুশকিল। এই এশিয়া কাপের শুরু থেকে ছন্নছাড়া দলটাই যেমন এখন ফাইনাল থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে। সেই পথে তাদের বাধা আজ বাংলাদেশ। যে ম্যাচটাকে অলিখিত সেমিফাইনাল বলাই যায়।

ভারতের কাছে হেরে সুপার ফোর শুরু করা পাকিস্তান পরশু হারিয়েছে এশিয়া কাপের টি–টোয়েন্টি সংস্করণের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশও লঙ্কানদের হারিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। তবে কাল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ভারতের কাছে। আর এই জয়ে প্রথম দল হিসেবে ভারত উঠে গেছে ফাইনালে, ছিটকে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এখন বাংলাদেশ না পাকিস্তান, কারা ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে সেটি নির্ধারিত হবে আজকের বাংলাদেশ–পাকিস্তান ‘সেমিফাইনালে’।

এমন ম্যাচের আগে ছন্দ খুঁজে পাওয়া পাকিস্তান বেশ আত্মবিশ্বাসীই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের জয়ের নায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি তো বলছেন, তাঁরা এবারের এশিয়া কাপে এসেছেন চ্যাম্পিয়ন হতেই। তবে সেই পথে এগোতে আপাতত তাঁদের মনোযোগ বাংলাদেশ ম্যাচেই।

বাংলাদেশ ভালো দল। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে। আপনি যখন ওদের বিপক্ষে খেলবেন, প্রথমে নিজেদের দিকেই নজরটা রাখতে হবে। এমনভাবে খেলতে হবে যেন ওরা কোনো সুযোগ না পায়।শাহিন আফ্রিদি, ক্রিকেটার, পাকিস্তান

পরশু রাতে আবুধাবিতে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর দুটি সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে পাকিস্তান দলকে। একটি শ্রীলঙ্কা ম্যাচ নিয়ে ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন, যেখানে হাজির ছিলেন সাহিবজাদা ফারহান। আরেকটি বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে। ম্যাচ–পূর্ব সেই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন শাহিন আফ্রিদি। সেখানেই পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার কথা বললেন বাংলাদেশ দল নিয়ে, ‘বাংলাদেশ ভালো দল। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে। আপনি যখন ওদের বিপক্ষে খেলবেন, প্রথমে নিজেদের দিকেই নজরটা রাখতে হবে। এমনভাবে খেলতে হবে যেন ওরা কোনো সুযোগ না পায়। সব বিভাগেই আমাদের ভালো খেলতে হবে। আমাদের চোখ এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের দিকেই।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহিন আফ্রিদি (ডানে).

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ঐহিক অমরতায় রণদা প্রসাদ সাহা

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে তাঁর গ্রামের ছোট–বড় সবাই ডাকে জেঠামনি। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া উপাধি ছিল রায়বাহাদুর। সে নামেও তাঁকে ডাকতেন অনেকে। কিন্তু তিনি সেই অভিজাত সম্বোধন পছন্দ করতেন না। তবে আর পি সাহা নামটিই ছিল সাধারণের মধ্যে অধিক পরিচিত। দাতা বা দানবীর এই মানুষটি মির্জাপুরবাসীর কাছে আজও জেঠামনি হিসেবেই যেন ঘরের মানুষ, প্রাণের ভালোবাসার মানুষটি। এক উচ্চতর মূল্যবোধের অধিকারী, বিস্ময়কর রকম শক্তিমান মানুষ ছিলেন দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। তাঁর প্রাণশক্তি, শ্রমশক্তি ও চিন্তাশক্তি ছিল বিস্ময়কর। আর বোধের জায়গাটিতে—মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাকে তিনি মানবীয় কর্তব্য মনে করতেন। পৃথিবীকে সবার জন্য সুখকর করে তোলা সম্ভব এই বিশ্বাসেই তিনি জনহিতকর কাজ করে যেতেন অক্লান্তভাবে। এই ব্রত থেকেই লাভ করেছিলেন ‘দানবীর’ অভিধা। তাঁর কীর্তির চেয়ে অনেক বড় ছিলেন তিনি।

রণদা প্রসাদ সাহার জন্ম ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কম্পাউন্ড থেকে পুত্র ভবানী প্রসাদসহ তাঁকে রাতের গভীরে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর তাঁদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ৭৪ বছরের কর্মময় জীবন রণদা প্রসাদ সাহার।

মির্জাপুর তখন একেবারেই অজপাড়াগাঁ। পিতা দেবেন্দ্র সাহার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। রুটিরুজির সন্ধানে বারবার তাঁকে পেশা বদল করতে হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ে দলিল লেখকের কাজ করেছেন তিনি।

প্রসবকালে ধনুষ্টঙ্কারে অকালে মারা যান মা কুমুদিনী দেবী। তিনি রোগশয্যায় না পেয়েছেন এতটুকু ওষুধ-পথ্য, না পেয়েছেন সেবাযত্ন। শৈশবের এই অসহ্য স্মৃতি রণদা প্রসাদকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এমনভাবে যে পরবর্তীকালে তাঁকে তা একজন সেবকে পরিণত করেছিল। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুস্থ মানুষের সেবাপ্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী’।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অতুলনীয় মাতৃভক্তির কথা আমরা সবাই জানি। রণদা প্রসাদ বিদ্যাসাগরের মতো মাতৃভক্তি দেখানোর সুযোগ পাননি। তিনি মাকে হারান মাত্র সাত বছর বয়সে। মায়ের স্নেহের আঁচল জড়িয়ে ধরতে না ধরতে তিনি বিদায় নেন। অভাবের সংসারে প্রসূতি মায়ের যত্ন দূরে থাকুক, উপযুক্ত আহারই সময়মতো জোটেনি। চিকিৎসার জন্য সারা গ্রাম খুঁজে একজন ডাক্তারও সেদিন মেলেনি কিংবা অর্থাভাবে কোনো ডাক্তার আনা যায়নি। প্রসবকালে ধনুষ্টঙ্কারে অকালে মারা যান মা কুমুদিনী দেবী। তিনি রোগশয্যায় না পেয়েছেন এতটুকু ওষুধ-পথ্য, না পেয়েছেন সেবাযত্ন। অশৌচের অসিলায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুই ছিল তখনকার দিনে মেয়েদের এক মর্মান্তিক নিয়তি। মায়ের এই মৃত্যুদৃশ্যের নীরব দর্শক ছিল সাত বছরের অবোধ বালক রণদা প্রসাদ। শৈশবের এই অসহ্য স্মৃতি রণদা প্রসাদের নিদ্রা-জাগরণের প্রতিটি মুহূর্ত আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এমনভাবে যে পরবর্তীকালে তাঁকে তা একজন সেবকে পরিণত করেছিল। নিজের মায়ের জীবন দেখে তিনি নারী জীবনের অসহায়ত্ব উপলব্ধি করেন এবং নারী জাতির কল্যাণ্যে কিছু করার সংকল্প গ্রহণ করেন। সামর্থ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দুঃখ-স্মৃতিকে রূপ দিয়েছিলেন দুস্থ মানুষের সেবাপ্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী’তে—স্থাপন করেছিলেন মাতৃভক্তির এক অনন্য নজির।

রণদা প্রসাদ সাহা কোলাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঐহিক অমরতায় রণদা প্রসাদ সাহা