ভুল তথ্যের অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়া অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দিল ইউটিউব
Published: 25th, September 2025 GMT
ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে আগে নিষিদ্ধ হওয়া কয়েকজন আধেয় বা কনটেন্ট নির্মাতার অ্যাকাউন্ট আবার চালু করেছে ইউটিউব। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির দীর্ঘ তদন্তের পর ইউটিউবে মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডানকে পাঠানো পাঁচ পৃষ্ঠার এক চিঠিতে অ্যালফাবেট জানায়, কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাইডেন প্রশাসনের চাপের মুখে এসব অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়েছিল। তবে এখন ইউটিউব রাজনৈতিক বিতর্কের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করতে চায়। ভুল তথ্য ছড়ানোর নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে যেসব অ্যাকাউন্ট সরানো হয়েছিল, তার মধ্যে ছিলেন সেবাস্টিয়ান গোরকা, ড্যান বংগিনো, স্টিভ ব্যানন এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চিলড্রেনস হেলথ ডিফেন্স। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস বিভাগের প্রধান রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র অটিজমের কারণ নিয়ে ভিত্তিহীন দাবি তোলা ও ভ্যাকসিন সায়েন্সের ওপর সংশয় সৃষ্টির অভিযোগে সমালোচিত হচ্ছেন। ট্রাম্পের সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজিস স্টিভ ব্যানন সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণে তহবিল জালিয়াতির দায়ে সম্প্রতি দোষ স্বীকার করেছেন। ড্যান বংগিনো এখন এফবিআইয়ের উপপরিচালক এবং গোরকা হোয়াইট হাউসের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যালফাবেটের দাবি, বাইডেন প্রশাসনের রাজনৈতিক চাপ ইউটিউবকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল। বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। যদিও সে সময় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও টিকাবিরোধী প্রচারণা ঠেকাতে ইউটিউব নিজস্ব নীতিমালা কঠোর করেছিল। একই সময়ে আরও অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও একই পদক্ষেপ নিয়েছিল। চিঠি প্রকাশের পর হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি এক বিবৃতিতে একে রাজনৈতিক সেন্সরশিপের স্বীকৃতি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও ফেসবুকের ভুল তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনের চাপের অভিযোগ করেছিলেন। অ্যালফাবেট তাদের চিঠিতে লিখেছে, ‘ডিজিটাল পরিবেশকে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং মুক্ত মতপ্রকাশের জন্য উন্মুক্ত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো সরকার যদি কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে, সেটি অগ্রহণযোগ্য ও ভুল।’ সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের মুক্ত মতপ্রকাশের দাবির মুখে ইউটিউব, মেটা, এক্সসহ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মানব কনটেন্ট পর্যালোচনা দল ছাঁটাই করেছে। ঘৃণাত্মক বক্তব্যবিষয়ক নীতি শিথিল করা হয়েছে এবং আগে নিষিদ্ধ হওয়া বহু অ্যাকাউন্ট পুনর্বহাল করা হয়েছে।
ইউটিউব ও মেটা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার জন্য সমালোচনার মুখে রয়েছে। ভুল তথ্য নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সেই অগ্রগতি আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সূত্র: ম্যাশেবল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য ক উন ট র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)