ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের অনেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বৃহস্পতিবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

এ সময় ‘ভিসি স্যার জানেন নাকি, নীলক্ষেতের নায়ক আপনি’, ‘নীলক্ষেত না ডাকসু, নীলক্ষেত-নীলক্ষেত’, ‘ভিসি না নীলক্ষেত, নীলক্ষেত-নীলক্ষেত’ স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কারচুপির বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অভিযোগ একপ্রকার অগ্রাহ্য করেছে। প্রতিটি অভিযোগেরই কোনো না কোনো ভিত্তি আছে। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চান তাঁরা।

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ মহমিতুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থী ডাকসু নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছিল, আমরা জানতে চাই ব্যালটগুলো কোথায় ছাপানো হয়েছিল। একই সঙ্গে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ভোটার লিস্টও (তালিকা) আমরা জানতে চাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, নীলক্ষেতে জ্যান্ত মানুষ বানানো সম্ভব হলেও সেখান থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি। এটি অত্যন্ত গোপনীয় বিষয় বিধায় আমরা তা প্রকাশ করতে পারছি না।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমরা আজ একটি প্রতিবেদন দেখলাম। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভোট হয়েছে, সেই ব্যালটগুলো সম্পূর্ণভাবে নীলক্ষেত থেকেই ছাপানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার গোপনীয়তার নিয়ম দেখিয়ে ব্যালট কোথায় ছাপা হয়েছে তা বলছে না। আমরা মনে করি, প্রশাসন সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনিয়ার্ড ইলেকশন (কারচুপির) আয়োজন করেছে এবং সেটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে সব অভিযোগের একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক। সেই তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি এগিয়ে নেব।

৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে বড় জয় পায় ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের প্রার্থীরা ভিপি (সহসভাপতি), জিএস (সাধারণ সম্পাদক), এজিএসসহ (সহসাধারণ সম্পাদক) ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জিতেছেন।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনে ১২ অনিয়মের অভিযোগ প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন লক ষ ত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি

কঠোর পরিশ্রম করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেছিলেন, তারপর পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে জিতে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন সানায়ে তাকাইচি। গত ২১ অক্টোবর ভোটে জেতার পর থেকে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছেন জাপানের এই ‘লৌহমানবী’।

কিন্তু তাকাইচি যেভাবে বিশ্রাম না নিয়ে, না ঘুমিয়ে, বিরতিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন, তাতে তাঁর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনাও।

নিজের প্রথম পার্লামেন্টারি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোররাত ৩টায় নিজের কার্যালয়ে আসেন তাকাইচি। পার্লামেন্টে একটি বাজেট কমিটির ওই বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়।

জাতিগতভাবে জাপানিরা সারা বিশ্বে ‘কাজপাগল’ ও ‘পরিশ্রমী’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সকাল ৯টার বৈঠকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভোররাত ৩টায় কার্যালয়ে হাজির হওয়ার খবর জানতে পেরে অনেক জাপানির চোখও কপালে উঠেছে।

তাকাইচির প্রশাসন জাপানে কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সময়সীমা শিথিল করার পক্ষে। অথচ তিনিই ভোর হওয়ার আগে কাজ শুরু করেন। এটা একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করেছে বলে অনেকে এর সমালোচনা করছেন।

এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুজি নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেন, ‘যখন আমি শুনলাম, তিনি ভোররাত ৩টায় এসেছেন, আমি যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি।’

স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের আগেই তাকাইচির কাজ শুরু করা নিয়ে পরে কমিটির সভায় কয়েকজন আইনপ্রণেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

‘আমি খুবই কম ঘুমাই’

জাপানের প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির তাকাহিরো কুরোইওয়া বলেন, ‘আমি অনুমান করতে পারছি, কয়েকজন কর্মী রাতভর জেগে খসড়া জবাব প্রস্তুত করেছেন।’

রাজধানী টোকিওর মধ্যাঞ্চলে জাপানের পার্লামেন্ট সদস্যদের জন্য বসবাসের সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। তাকাইচি এখনো সেখানেই আছেন। তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বাসভবনে যাননি।

ভোর হওয়ার আগেই নিজের কার্যালয়ে চলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাকাইচি বলেন, তিনি এখন যে ভবনে থাকছেন, সেখানে একটিমাত্র পুরোনো ফ্যাক্স মেশিন আছে। এ কারণে লজিস্টিক সমস্যায় পড়তে হয়।

কুরোইওয়া তখন জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হননি। তাকাইচি বলেন, কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর তিনি সেখানে যাবেন।

সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে এবং একটি নির্বিঘ্ন পার্লামেন্টারি আলোচনার জন্য নিখুঁত প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিলমিনোরু কিহারা, জাপান সরকারের মুখপাত্র

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাতে ঘুমানোর জন্য তিনি দুই থেক চার ঘণ্টা সময় পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার হাতে মালপত্র গোছানোর সময় একেবারেই নেই...এমনকি আমি ঘুমানোর সুযোগও খুব কম পাই।’

তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা তাঁর আছে বলে জানান জাপানের এই নতুন প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু এর আগে তাকাইচিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হতে চলা জি–২০ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলেও জানান তাকাইচি। ২২ ও ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জি–২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী নজির স্থাপন করছেন কি না, এমন প্রশ্নের বাইরে আরও একটি বিষয় নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেটি হলো তাকাইচির স্বাস্থ্য।

পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালে জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) আইনপ্রণেতা কেন সাইতো নিজ দলের নেতাকে বলেন, যখনই পারবেন, কৌশলে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেবেন।

সাইতো আরও বলেন, ‘আপনি বলেন, আপনি কাজ, কাজ আর কাজ করতে চান। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন।’

নিজের প্রথম পার্লামেন্টারি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোররাত ৩টায় নিজের কার্যালয়ে আসেন তাকাইচি। পার্লামেন্টে একটি বাজেট কমিটির ওই বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়।

অধিবেশনে কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কাতসুহিতো নাকাজিমাও প্রধানমন্ত্রী তাকাইচিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলেন। এ পরামর্শ শুনে হেসে একটু মাথা নোয়ান প্রধানমন্ত্রী।

তাকাইচির প্রশাসন জাপানে কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সময়সীমা শিথিল করার পক্ষে। অথচ তিনিই ভোর হওয়ার আগে কাজ শুরু করেন। এটি একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করেছে বলে অনেকে এর সমালোচনা করছেন। সমালোচকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি অনেকে ‘কারোশি’–এর (অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যু) কথাও বলছেন।

বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপলের (ডিপিপি) সাধারণ সম্পাদক কাজুয়ু শিমবা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, তিনি তাঁর কর্মীদের কল্যাণের বিষয়টিকে অবহেলা করেছেন।

স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যদি প্রধানমন্ত্রী ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন, তবে কর্মীদের মধ্যরাত, দেড়টা বা ২টায় কাজ শুরু করতে হবে। মানুষের শারীরে এটা সহ্য হবে না।’

জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ শতাংশ নারী দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বেশি ভাগের উদ্বেগ, প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোম্পানিগুলোকে কর্মীর কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করবে।

সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বলেন, সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে এবং একটি নির্বিঘ্ন পার্লামেন্টারি আলোচনার জন্য ‘নিখুঁত প্রস্তুতি’ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাজ এবং সুস্থ জীবনযাপনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টির গুরুত্ব অস্বীকার করেন না। কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন বৈচিত্র্যময় প্রতিভার অধিকারীরা শান্ত মনে কাজ করতে পারেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

‘কাজ, কাজ এবং কাজ’

চারজন পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এলডিপির নেতৃত্বে আসেন তাকাইচি। এরপরই গত ৪ অক্টোবর এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, তিনি কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য কথাটি থেকে দূরে থাকবেন।

তাকাইচি বলেছিলেন, ‘আমি কাজ, কাজ আর কাজ করব।’ তিনি এলডিপির সদস্যদের অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে বলেছেন।

অনেক কর্মজীবী নারী তাকাইচির মন্তব্যকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।

যদি প্রধানমন্ত্রী ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন, তবে কর্মীদের মধ্যরাত, দেড়টা বা ২টায় কাজ শুরু করতে হবে। মানুষের শারীরে এটা সহ্য হবে না

উইমেন টাইপ নামের একটি ওয়েবসাইট তাকাইচির ওই মন্তব্যের চার দিন পর একটি জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৫৩ শতাংশ নারী তাকাইচির বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।

২৯ শতাংশ নারী দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বেশি ভাগের উদ্বেগ, প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোম্পানিগুলোকে কর্মীর কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করবে।

আরও পড়ুনজাপানে ইতিহাস গড়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তাকাইচি২১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাত ৩টায় কাজ শুরু করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি