এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মণ্ডপ-মন্দিরে দুর্গাপূজা হবে
Published: 26th, September 2025 GMT
এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ১ হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে।
আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি এক মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানিয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এতে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৫২টি পূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরে সাতটি পূজা বেশি হবে।
পূজার সূচি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামীকাল শনিবার শারদীয় দুর্গাপূজার বোধন। রোববার মহাষষ্ঠী। সোমবার মহাসপ্তমী। মঙ্গলবার মহাষ্টমী। বুধবার মহানবমী। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। সেদিন বেলা তিনটায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এবার দেবীর আগমন গজে, গমন দোলায়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পূজা আয়োজনের নানা দিক আলোচনায় এসেছে। তাঁরা তাঁদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। দুই উপদেষ্টাও সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনের কথা তাঁদের জানিয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
দেশে বিভিন্ন মণ্ডপে ইতিমধ্যে হওয়া হামলার চিত্র লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, দুর্গাপূজার প্রস্তুতির মধ্যেই ১৩ জেলায় দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলাগুলো হলো কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নাটোর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত এসব ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্বৃত্তদের অনেকে ধরা পড়েছে। পূজার মধ্যে তাঁরা এমন হামলা দেখতে চান না।
৩৬৫ দিনই নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে উল্লেখ করেন জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সহিসংতার অবসান ঘটাতে হবে। পূজার পাঁচ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমনটা তাঁরা দেখতে চান।
দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপ কিংবা প্যান্ডেলে দুটি দাবি তুলে ধরতে বলা হয় লিখিত বক্তব্যে হয়। এক.
সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। দাবিগুলো হলো সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যর্পণ। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সব সংস্থায় অংশীদারত্ব-প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন। বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করাসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন। হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী—তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে পূজার আয়োজন-উদ্যাপনে স্থানীয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ত করা। ২ অক্টোবর যথানিয়মে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করা। দুর্গম এলাকায় পূজার আয়োজন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে আয়োজকেরা স্থির করবেন।
উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো, পিএসেট-আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে—এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং-ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে, প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও উপদেষ্টা আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রক ষ ক র উপদ ষ ট মন দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি
ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরের সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
বিজিবি সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেদিন ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ৭ নভেম্বর রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়। আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অনলাইনে আবার কর্মসূচির কথা বলছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।