রেস্তোরাঁর একটি টেবিলের চারপাশের চেয়ারে বসা ছয়জন বৃদ্ধা। সবার মুখে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের ঢেউ। প্রত্যেকের মাথার চুলে পাক ধরেছে। তবে তাদের চোখে-মুখে যে আনন্দের উচ্ছ্বাস, তা সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে।  

জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তার ফেসবুকে দুটো ছবি শেয়ার করেছেন। তার একটিতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এসব পোস্টের ক্যাপশনে ছবির পেছনের গল্পও জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী। 

আরো পড়ুন:

আমি এত বোকা মেয়ে মানুষ না: পিয়া

একাত্তরে হারিয়েছি, আজকেও হারাব: চমক

শাহনাজ খুশি লেখেন, “রেস্টুরেন্টে ঠিক আমাদের পাশের টেবিলে ছয় বান্ধবী, বান্ধবীই তো, নাও হতে পারে। অথবা পথ চলতে গিয়ে চিনে নেওয়া সারথী! আইসক্রিমের অর্ডার করে, কিশোরীদের মতো খাওয়া শুরু করল।” 

পরের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে শাহনাজ খুশি লেখেন, “চোখ আটকে গেল। এদের চেনা বয়সের ভিড়ে কি আমি আমার মাকে খুঁজছিলাম? না কি অদূর ভবিষ্যতের আমাকে? ঠিক জানি না, শুধু চোখ ভিজে গেল! মনে হলো, এদেরও সকাল/দুপুর/রাত কত ব্যস্ততম ছিল! স্কুল/টিফিন/বাজার/রান্না/কারো চাকরি/স্বামীর ফর্দি ফলো করে সঙ্গ দেয়া, সবার ইচ্ছাপূরণ করতে করতে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া…।” 

অনুমতি নিয়েই ছবি তোলার তথ্য জানিয়ে শাহনাজ খুশি লেখেন, “কাছে গিয়ে বললাম, একটা ছবি তুলি? রাজনীতি/নীতিহীনতা/স্বার্থপরতা আর প্রতিযোগিতার ভিড়ে মানুষকে নিয়ে ভাববার মানুষই এখন কোথায়! তারা রয়ে গেল সেখানেই, ভাবনাটা আমার জামার খুঁট ধরে চলল আমারই সাথে…!” 

শাহনাজ খুশির এই পোস্টে তার সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগী ও নেটিজেনরা নানা ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী লেখেন, “কী অভূতপূর্ব।” শাহনাজ খুশিকে উদ্দেশ করে শ্রাবণী লেখেন, “আপনি একটা মায়া। আর তার থেকে বড় মায়া হলো কত স্বিগ্ধভাবে আমাদের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের অব্যক্ত আবেগ ভাষার চাদরে মেলে ধরেন।” 

আলম এহসান লেখেন, “সময় বহতা নদী, জীবনের স্রোতকে থামায় কার সাধ্য.

..। একদিন আমিও মোহনায় মিশে যাব হারিয়ে।” শাহজাহান লেখেন, “জীবনের বহমান সময়ের ভাঁজে সবাই অসহায়।” রওনক জাহান লেখেন, “ব্যস্ততম জীবন থেকে কিছুক্ষণ ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে হয়তো একটু শান্তির খোঁজে।” এমন অসংখ্য মন্তব্য শোভা পাচ্ছে কমেন্ট বক্সে। 

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক শ হন জ খ শ

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ