খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
Published: 26th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক জুম্ম ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় ‘আদিবাসী ছাত্র জনতার’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ধর্ষণ ও নারী নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ সব নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে ও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কণ্ঠশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, ‘আমাদের সমাজকে পাল্টাতে হবে। সমাজ পাল্টালে দেশ পাল্টাতে বাধ্য। পাহাড়ি-বাঙালি এই বিভাজন ভুলে আমাদের এক হয়ে সব ন্যায়সংগত আন্দোলনে আমাদের কণ্ঠস্বর জারি রাখতে হবে। শুধু সম্প্রীতির কথা বললে হবে না। সম্প্রীতিকে চর্চা করতে হবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, ‘আজ যদি দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি না থাকত, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করত, তাহলে আজ আমাদের এখানে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের জন্য দাঁড়াতে হতো না।’
রাষ্ট্র প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেই এই রাষ্ট্রে নতুন নতুন ধর্ষক জন্ম নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দপ্তর সম্পাদক অনিক কুমার দাশ। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের শিশুও বাংলাদেশে নিরাপদ নয়। এই সংকট শুধু পাহাড়ে নয়, পুরো বাংলাদেশে চলমান। এই সমাজকে বসবাসের জন্য নিরাপদ করে তুলুন।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের (বিএমএসসি) নুমংপ্রু মারমা বলেন, ‘উক্যনু মারমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি আমাদের মানুষ না দেখত, তাহলে তাঁকে কল্পনা চাকমার মতো গুমও করতে পারত। এই পর্যন্ত আদিবাসী (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী) নারীদের সহিংসতার ঘটনার কোনো বিচার আমরা পাইনি। আমাদের সংখ্যালঘুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার অবসান চাই।’
পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাকিবুল হাসান, বিএমএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হ্লাশৈ মারমা প্রমুখ।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে সমাবেশ, কাল আবারও অবরোধ৪ ঘণ্টা আগেসভাপতির সমাপনীর বক্তব্যের মাধ্যমে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হয়। পরে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে মিছিলটি শেষ হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, জড়িতদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ২২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।
২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।
৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।
৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫