ভারতের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত পাকিস্তান: শাহবাজ শরিফ
Published: 27th, September 2025 GMT
ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শুক্রবার এ কথা জানান। পাশাপাশি তিনি পাকিস্তান-ভারতের গত মে মাসের সংঘাত সমাধানে ভূমিকা রাখায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। এই সংঘাত সমাধানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকাকে খাটো করে দেখে নয়াদিল্লি, যা ট্রাম্পকে কিছুটা বিরক্ত করেছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন শাহবাজ শরিফ। এর আগের দিন তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আসিম মুনির ট্রাম্পকে বলেন, ভারতের সঙ্গে গত মে মাসে সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতা করায় তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।
অন্যদিকে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব অমীমাংসিত বিষয়ে যৌক্তিক, বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য প্রস্তুত। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য উসকানিমূলক নয়, বরং সক্রিয় নেতৃত্ব প্রয়োজন।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের নেতৃত্বকে ‘সাহসী ও দূরদর্শী’ বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যদি সময়মতো ও দৃঢ়ভাবে হস্তক্ষেপ না করতেন, একটু পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ফলাফল ভয়াবহ হতে পারত।’
গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছিলেন। নয়াদিল্লির দাবি, এর সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু ইসলামাবাদ তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তা সত্ত্বেও পরের মাসে পাকিস্তানের কিছু সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার নির্দেশ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে দুই দেশের মধ্যে চার দিন পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলে।
শুক্রবারের ভাষণে শাহবাজ শরিফ ভারতের হামলাকে ‘আগ্রাসন’ বলে মন্তব্য করেন এবং এতে ইসলামাবাদের জয় হয়েছে বলে দাবি করেন। শরিফের ভাষায়, ‘ভারত দম্ভ নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের লজ্জিত করে ফিরিয়ে দিয়েছি।’
চার দিনের লড়াইয়ের পর ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের মতভেদ সমাধান করতে একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।
মে মাসের সংঘাতের ঠিক আগে ট্রাম্প পরিবারের একটি কোম্পানি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভূমিকা চাইছে। কিন্তু ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। নয়াদিল্লির দাবি, পুরো হিমালয় অঞ্চল ভারতের। এই অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হিন্দু জনসংখ্যাও রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)