হাটহাজারীর যে বিমানবন্দর থেকে জ্বালানি নিত যুদ্ধবিমান
Published: 28th, September 2025 GMT
যুদ্ধবিমানের ওঠানামার শব্দে কানে তালা লেগে যেত। রানওয়েতে দেখা যেত বিমানের সারি। সেখানে দাঁড়িয়ে জ্বালানি তেল নিত বিমানগুলো। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পশ্চিম আলমপুর এলাকার বাসিন্দারা এমন গল্প শুনেছেন তাঁদের বাপ-দাদার মুখে। এলাকাটি এখন ‘পাক্কা রাস্তা’ নামে পরিচিত। এই পাক্কা (পাকা) রাস্তা আসলে বিমানবন্দরের রানওয়ে। এখন কেউ বলে না দিলে সেই বিমানবন্দর খুঁজে বের করা কঠিন। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে প্রায় ৮২ বছর আগের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিমানবন্দরটি। চারপাশে গড়ে উঠেছে খেতখামার, বাড়িঘর।
হাটহাজারী সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পশ্চিম আলমপুর এলাকায় ৩৭ একর জায়গায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৩ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল। লোকজনের কাছ থেকে ব্যবহারের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার চুক্তিতে জায়গাগুলো নিয়েছিল। জমির মালিকদের দেওয়া হতো ভাড়া। তখনকার দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থার দিনে এ রকম একটি বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধবিমানের জন্য গোলাবারুদ, রসদ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রয়োজনে।
অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বিমানবন্দরের স্থাপনাগুলো। প্রশাসনিক ভবনের কাঠামোটাই কেবল আছে। ধ্বংস হয়েছে বাকি সব কিছু.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)