বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্গা প্রতিমা দেখতে এসেছে ৮ বছরের অনীষা কীর্তনীয়া। বসে ছিল মণ্ডপের ভেতরেই। সেখানেই তার কাছে এগিয়ে যান প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ। কথা বলেন শিশুটির সঙ্গে। খোঁজ নেন পড়াশোনার, কেমন আনন্দ হচ্ছে, আর কোথায় কোথায় মন্দির দেখেছে এমন প্রশ্ন করে করেন তিনি। কথা বলেন শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গেও। 

এরপর এমন করে কথা বলেন মন্দিরে উপস্থিত শিশু, বুড়ো থেকে অন্য আরও অনেকের সঙ্গে। প্রটোকলে থাকা সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়েই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ের ব্যক্তির শুভেচ্ছা বিনিময় যেন মন্দিরে আসা শিশুসহ নানা বয়সীদের উদযাপনের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তুললো। 

তাইতো তিনি সেখান থেকে চলে গেলেও সবার মধ্যে যেন বয়ে চললো আনন্দের ছটা। এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় ঢাকার ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি দুর্গা পূজার মণ্ডপে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে দুর্গা পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করতে আসেন আব্দুল হাফিজ। প্রথমে উপজেলার ইসলামপুরের কয়েকটি মন্দিরে যান তিনি। সেখান থেকে আসেন ধামরাই যাত্রাবাড়ী দুর্গা মন্দিরে। তার সঙ্গে ছিলেন ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার-ইউএনও মো.

মামনুন হাসান অনীক, ধামরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রিদওয়ান আহমেদ রাফি ও ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মন্দিরে ঢুকে আয়োজকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। তাকে ঘিরে থাকেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। 

একপর্যায়ে সবাইকে রেখেই কয়েক গজ দূরে প্রতিমার স্টেজের কাছাকাছি বাঁ দিকে এক শিশুর কাছে এগিয়ে যান তিনি। জিজ্ঞেস করেন, কী নাম তোমার? বাড়ি কোথায়? কেমন লাগছে এমন আরও প্রশ্ন। শিশুটি আঙ্কেল সম্বোধন করে জবাব দেয়। প্রায় এক দেড় মিনিট চলতে থাকে কথোপকথন। এরপর আব্দুল হাফিজ মন্দিরের ডান দিকে চেয়ারে বসে থাকা এক বৃদ্ধা ও বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন। সবশেষে তিনি কথা বলেন আরো এক পরিবারের শিশু ও তার মা-বাবার সঙ্গে। সবার সঙ্গেই কুশল বিনিময় ও পূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করে নানা কথা বলেন তিনি। এতে উচ্ছ্বসিত হন দর্শনার্থীরা। পাশে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করেন উপস্থিত অন্যান্যরাও।

পরে তিনি আয়োজক কমিটির দেওয়া মুড়ি, মোয়া, নাড়ু ও পানিসহ খাবার গ্রহণ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর মণ্ডপ ত্যাগ করেন আব্দুল হাফিজ। তবে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে সবার মধ্যে। 

কথা হয় শিশু অনীষা কীর্তনীয়ার সঙ্গে। বলে, ‘‘আমি তো চিনি না। বাবা বললো। আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

তার বাবা গোবিন্দ কীর্তনীয়া বলেন, “আমি আশুলিয়া থেকে এসেছি পূজা দেখতে। এখানে বসে ছিলাম। তখন উপদেষ্টা মহোদয় এসে কথা বললেন। আমার মেয়েকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন। সে তো বিশ্বাসই করতে পারছে না। আমাদের পূজার আনন্দই বেড়ে গেছে। কখনো এত বড় মানুষের সঙ্গে কথা বলিনি। অনেক ভালো লাগছে।” 

শ্রীপর্ণা ঘোষ নামে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া আরেক শিশুর সঙ্গেও কথা বলেন লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ। পরিবারের অন্যদের কাছে তার পরিচয় শুনে তো অবাক শিশুটি। চোখেমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলছিল, “একটা আঙ্কেল আসলেন। তারপর নাম, কিসে পড়ি আরও বহু কথা জিজ্ঞেস কররেন। উনি যে উপদেষ্টা তা তো বুঝতেই পারিনি।”

লাকী রানী বিশ্বাস নামে ষাটোর্ধ্ব এক নারী বলেন, “খুব ভালো লাগছে। এরকম মন্দিরে এসে সবার সাথে কথা বললো। খুবই ভালো লাগছে।” 

একই কথা বলছিলেন সঙ্গে আসা তার স্বামীও। বললেন, “এরকম মানুষের সবার সঙ্গে মিশে কথা বলার মাধ্যমেই তো সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে যায়।”

এদিকে ধামরাইয়ের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘‘আজকে ধামরাই উপজেলায় কয়েকটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করতে এসেছি। এখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে চমৎকার পরিবেশে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে পূজা উদযাপন হচ্ছে। আজকে অষ্টমী, এরপর নবমী, দশমী। আমরা আশা করব, এখন পর্যন্ত যেভাবে চলছে, একইভাবে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হবে। নিরাপত্তা বাহিনী, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনী কীভাবে কাজ করছে দেখছি। হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য, সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় করার জন্য এখানে এসেছি।”

ঢাকা/সাব্বির/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উপদ ষ ট মন দ র উপজ ল আনন দ সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

শাটডাউনের বিপক্ষে জনজীবন

আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায় জনজীবনে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি হয়নি।

রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চানখারপুল, সচিবালয়, জিপিওসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে- যান চলাচল স্বাভাবিক, মানুষের চলাচল স্বাভাবিক এবং বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডও অন্যান্য দিনের মতোই চলছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষক এরশাদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি ছাত্র ফ্রন্টের

ঢাবিতে কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা-বিষয়ক জাতীয় প্রতিযোগিতা

সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে রিকশা ও অটোরিকশার আধিক্য যেমন লক্ষ্য করা গেছে, বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীও দেখা গেছে। কোথাও যান সংকট হয়নি, বরং কিছু বাসে বাড়তি যাত্রীর চাপ ছিল।

গুলিস্তানে এক বেসরকারি অফিসকর্মী রিফাত হোসেন বলেন, “শাটডাউন বলে আজকে কিছুই বুঝলাম না। প্রতিদিন যেমন বের হই, আজও ঠিক তেমনই বের হয়েছি। রাস্তায় কোনো সমস্যা দেখিনি।”

চানখারপুলে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ মাহমুদা আক্তার বলেন, “শাটডাউনের নামে মানুষকে ভয় দেখানো ঠিক না। বাস কম হলেও চলাচল পুরোপুরি থেমে যায়নি। আমরা স্বাভাবিকভাবেই অফিসে যাচ্ছি।”

ঠিকানা পরিবহন শ্রমিক শহীদুল ইসলাম বলেন, “শাটডাউন ডেকেছে শুনেছি, কিন্তু রাস্তায় কোনো প্রভাব নেই। পুলিশের বাড়তি অবস্থানও দেখি নাই। গাড়ি চলছে, যাত্রীও আছে।”

সচিবালয়ের কাছে একজন সরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল করিম বলেন, “শাটডাউনের মতো কর্মসূচি কখনোই জনস্বার্থের পক্ষে নয়। এতে ব্যবসার ক্ষতি হয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়। আজকে যানচলাচল প্রতিদিনের মতোই।” 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক

নিষিদ্ধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সতর্ক উপস্থিতি বিশেষভাবে দেখা যায়নি। নিয়মিত দায়িত্বপালন ছাড়া আলাদা কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি।

শাটডাউনের বিপক্ষে জনমতই শক্তিশালী

সরেজমিন চিত্র, সাধারণ মানুষের বক্তব্য এবং বিভিন্ন পরিবহন সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট- রাজধানীবাসী শাটডাউনের পক্ষে নয়। বরং জনজীবন স্বাভাবিক রাখার পক্ষেই তাদের মত।

রাজধানীর ৩৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন বলেন, ব্যস্ত সকাল, মানুষের স্বাভাবিক আনাগোনা এবং চলমান পরিবহন কার্যক্রম প্রমাণ করেছে- শাটডাউন ঢাকার জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বরং জনগণ নিষেধাজ্ঞামূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানই দেখিয়েছে।

ঢাকা/আসাদ/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের
  • এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম
  • ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা জোরদার, আছে সেনাবাহিনী-র‍্যাব-পুলিশ
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশজুড়ে ‘সতর্কতা’
  • শেখ হাসিনাসহ অন্যদের মামলার রায় যা-ই হোক না কেন, তা কার্যকর হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ঢাকাসহ ৪ জেলায় বিজিবি মোতায়েন
  • ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি
  • শাটডাউনের বিপক্ষে জনজীবন