অনীষাদের পূজার আনন্দ বাড়িয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী
Published: 1st, October 2025 GMT
বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্গা প্রতিমা দেখতে এসেছে ৮ বছরের অনীষা কীর্তনীয়া। বসে ছিল মণ্ডপের ভেতরেই। সেখানেই তার কাছে এগিয়ে যান প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ। কথা বলেন শিশুটির সঙ্গে। খোঁজ নেন পড়াশোনার, কেমন আনন্দ হচ্ছে, আর কোথায় কোথায় মন্দির দেখেছে এমন প্রশ্ন করে করেন তিনি। কথা বলেন শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গেও।
এরপর এমন করে কথা বলেন মন্দিরে উপস্থিত শিশু, বুড়ো থেকে অন্য আরও অনেকের সঙ্গে। প্রটোকলে থাকা সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়েই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। সরকারের উপদেষ্টা পর্যায়ের ব্যক্তির শুভেচ্ছা বিনিময় যেন মন্দিরে আসা শিশুসহ নানা বয়সীদের উদযাপনের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তুললো।
তাইতো তিনি সেখান থেকে চলে গেলেও সবার মধ্যে যেন বয়ে চললো আনন্দের ছটা। এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় ঢাকার ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি দুর্গা পূজার মণ্ডপে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে দুর্গা পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করতে আসেন আব্দুল হাফিজ। প্রথমে উপজেলার ইসলামপুরের কয়েকটি মন্দিরে যান তিনি। সেখান থেকে আসেন ধামরাই যাত্রাবাড়ী দুর্গা মন্দিরে। তার সঙ্গে ছিলেন ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার-ইউএনও মো.
মন্দিরে ঢুকে আয়োজকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। তাকে ঘিরে থাকেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
একপর্যায়ে সবাইকে রেখেই কয়েক গজ দূরে প্রতিমার স্টেজের কাছাকাছি বাঁ দিকে এক শিশুর কাছে এগিয়ে যান তিনি। জিজ্ঞেস করেন, কী নাম তোমার? বাড়ি কোথায়? কেমন লাগছে এমন আরও প্রশ্ন। শিশুটি আঙ্কেল সম্বোধন করে জবাব দেয়। প্রায় এক দেড় মিনিট চলতে থাকে কথোপকথন। এরপর আব্দুল হাফিজ মন্দিরের ডান দিকে চেয়ারে বসে থাকা এক বৃদ্ধা ও বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন। সবশেষে তিনি কথা বলেন আরো এক পরিবারের শিশু ও তার মা-বাবার সঙ্গে। সবার সঙ্গেই কুশল বিনিময় ও পূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করে নানা কথা বলেন তিনি। এতে উচ্ছ্বসিত হন দর্শনার্থীরা। পাশে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করেন উপস্থিত অন্যান্যরাও।
পরে তিনি আয়োজক কমিটির দেওয়া মুড়ি, মোয়া, নাড়ু ও পানিসহ খাবার গ্রহণ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর মণ্ডপ ত্যাগ করেন আব্দুল হাফিজ। তবে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে সবার মধ্যে।
কথা হয় শিশু অনীষা কীর্তনীয়ার সঙ্গে। বলে, ‘‘আমি তো চিনি না। বাবা বললো। আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
তার বাবা গোবিন্দ কীর্তনীয়া বলেন, “আমি আশুলিয়া থেকে এসেছি পূজা দেখতে। এখানে বসে ছিলাম। তখন উপদেষ্টা মহোদয় এসে কথা বললেন। আমার মেয়েকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন। সে তো বিশ্বাসই করতে পারছে না। আমাদের পূজার আনন্দই বেড়ে গেছে। কখনো এত বড় মানুষের সঙ্গে কথা বলিনি। অনেক ভালো লাগছে।”
শ্রীপর্ণা ঘোষ নামে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া আরেক শিশুর সঙ্গেও কথা বলেন লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ। পরিবারের অন্যদের কাছে তার পরিচয় শুনে তো অবাক শিশুটি। চোখেমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলছিল, “একটা আঙ্কেল আসলেন। তারপর নাম, কিসে পড়ি আরও বহু কথা জিজ্ঞেস কররেন। উনি যে উপদেষ্টা তা তো বুঝতেই পারিনি।”
লাকী রানী বিশ্বাস নামে ষাটোর্ধ্ব এক নারী বলেন, “খুব ভালো লাগছে। এরকম মন্দিরে এসে সবার সাথে কথা বললো। খুবই ভালো লাগছে।”
একই কথা বলছিলেন সঙ্গে আসা তার স্বামীও। বললেন, “এরকম মানুষের সবার সঙ্গে মিশে কথা বলার মাধ্যমেই তো সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে যায়।”
এদিকে ধামরাইয়ের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লে. জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘‘আজকে ধামরাই উপজেলায় কয়েকটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করতে এসেছি। এখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে চমৎকার পরিবেশে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে পূজা উদযাপন হচ্ছে। আজকে অষ্টমী, এরপর নবমী, দশমী। আমরা আশা করব, এখন পর্যন্ত যেভাবে চলছে, একইভাবে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হবে। নিরাপত্তা বাহিনী, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনী কীভাবে কাজ করছে দেখছি। হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য, সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় করার জন্য এখানে এসেছি।”
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উপদ ষ ট মন দ র উপজ ল আনন দ সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন
পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি