১৯ আসনে তৎপর জামায়াত, শক্ত অবস্থানে ৬ প্রার্থী
Published: 4th, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসন চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অধিকাংশ আসনে দলের প্রার্থী যেন জয় পান, সে জন্য তৃণমূলে দলের কর্মীরা ব্যাপকভাবে কাজ করছেন। বিশেষ করে যেসব আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে দলটি নির্বাচনী প্রচারে বিশেষ নজর দিচ্ছে।
জামায়াতের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জামায়াতে ইসলামী সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠে নামে। তবে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট-১ আসনে দলটি প্রার্থী বদল করে। এসব প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ছয়টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী শক্ত অবস্থানে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশির ভাগ আসনে আমাদের প্রার্থীরা জয় পাবেন বলেই মনে করছি। আমি নিজেও একটি আসনের প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি। আশা করছি, আসছে নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’
সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান ও সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মৌলভীবাজারে আসন চারটি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী ও বড়লেখা) আসনে আমিনুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জেলা আমির এম শাহেদ আলী, মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে সাবেক জেলা আমির আবদুল মান্নান ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনে আবদুর রব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে জেলা আমির তোফায়েল আহমেদ খান, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে সিলেটের জজকোর্টের এপিপি ইয়াছিন খান, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে সুনামগঞ্জ জেলার নায়েবে আমির মুহাম্মদ শামসউদদীন ও সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে গোবিন্দনগর ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুস সালাম আল মাদানী।
এ ছাড়া হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো.
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-৩ আসনে লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ আসনে জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৬ আসনে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে মুহাম্মদ শিশির মনির, মৌলভীবাজার-১ আসনে আমিনুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. শাহজাহান আলী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের জয় পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে এলাকায় প্রচার আছে। অন্যদিকে সিলেট-১ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-৫ আসনে আনোয়ার হোসেন খান এবং সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আবদুস সালাম আল মাদানী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন বলেও স্থানীয়ভাবে আলোচনা আছে। এর বাইরে অপর প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন।
জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের যে কয়েকটি অঞ্চলে জামায়াতের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের আধিক্য রয়েছে, এর মধ্যে সিলেট বিভাগ অন্যতম। তাই এই অঞ্চলের ১৯টি আসনকে টার্গেট করে কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। প্রতিদিনই দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন এবং সভা-সমাবেশও করছেন। যেসব আসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছেন, সেখানে দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে জামায়াতের প্রার্থীরা মণ্ডপ পরিদর্শন গিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। মূলত বিভাগের অধিকাংশ আসনে জয় পেতে মরিয়া জামায়াত ভেতরে–ভেতরে কাজ করছে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও হবিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট মহানগরের রাজনীতিতে থাকলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে সব সময়ই আমি যুক্ত ছিলাম। হবিগঞ্জ-১ আসনের ভোটারদের কাছ থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন ছিলাম না। এখন প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় সেটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই আমাকে গ্রহণ করছেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ম হ ম মদ র রহম ন করব ন ইসল ম করছ ন ১ আসন আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে বারবার সাম্প্রদায়িক উসকানি, বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দেবালয় আক্রমণ-ভাঙচুরসহ নানা অপ্রীতিকর সাজানো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তাদের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর।
শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই বাণী দেওয়া হয়।
বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী। এ উপলক্ষে আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। তাঁদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি।’
শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর সব মানুষের জীবনে এক আলোকদীপ্ত বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশসহ বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর এই ধর্মীয় উৎসব এক ঐশ্বর্যময় ঐতিহ্য মহিমামণ্ডিত। দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক।
পৃথিবীতে অঞ্চলভেদে যেকোনো উৎসবই মানুষের মধ্যে স্বর্গীয় আনন্দ ও শুভেচ্ছার বার্তা নিয়ে আসে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, উৎসবের প্রাঙ্গণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সেটি প্রত্যেক মানুষেরই মিলনক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৃত্তিকার গভীর থেকে যে ইতিহাস-ঐতিহ্য উৎসারিত হয়, সেটি ধর্মীয় স্বাধীনতা-মূল্যবোধকে অন্তর্ভুক্ত করে। দুর্গাপূজার মূল বাণী হচ্ছে, অশুভের ওপর শুভের জয়। দুর্গা তাঁর গৌরবময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য মন্দকে উপলব্ধি করেন, তা প্রতিহত করেন।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তবে অশুভ চক্রের চক্রান্ত ঠেকাতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে পূজামণ্ডপে পাহারা দিচ্ছে। যাতে শান্তি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে। তাদের প্রতিহত করতে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ।
ধর্মীয় উৎসব সাম্প্রদায়িক কোনো বৃত্তে আবদ্ধ থাকে না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, উৎসব বৃত্ত অতিক্রম করে সব মানুষকে নিয়ে উদ্যাপিত হয়। মানুষের আত্মাকে মিলনের বোধে উদ্দীপ্ত করে।
অপশক্তির অশুভ তৎপরতা দুর্গাপূজার উৎসবে যাতে কোনোভাবেই বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমরা সবাই বাংলাদেশি এটিই আমাদের গর্ব, এটিই আমাদের একমাত্র পরিচয়।’