গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত গ্রামে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু কাটার সঙ্গে যুক্ত আরও সাতজনের মধ্যে রোগের উপসর্গ পাওয়া গেছে। এর আগে একই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত চারজনের শরীরে উপসর্গ ধরা পড়ে। এ নিয়ে আজ শনিবার পর্যন্ত উপজেলার মোট ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিকে চর্মরোগবিশেষজ্ঞ মনজুরুল করিমের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে নতুন সাতজনের মধ্যে এই উপসর্গ ধরা পড়ে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাবেয়া ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, রংপুর থেকে মনজুরুল করিম প্রতি শুক্রবার গাইবান্ধায় এসে রোগী দেখেন। ওই দিন তিনি ২০-২৫ জন রোগী দেখেন। তাঁদের মধ্যে কিশামত গ্রামের সাতজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি তাঁদের গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তবে রাতে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে কেউ ভর্তি হননি। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

চিকিৎসক মনজুরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে সাধারণত এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় এ রোগ সেরে যায়।

এদিকে কয়েক দিন আগে কিশামত গ্রামে স্থানীয় লোকজন একটি অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজার রহমান জানান, গরু কাটাকাটিতে গ্রামের ১১ জন অংশ নেন। দুই-তিন দিন পর তাঁদের মধ্যে চারজনের শরীরে ফোসকা পড়ে এবং মাংসে পচনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাত, নাক, মুখ ও চোখে এসব উপসর্গ দেখা যায়।

এই চারজন হলেন মোজা মিয়া (৫৬), মোজাফফর মিয়া (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৫০) ও মাহবুর রহমান (৫৫)। তাঁরা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন মোজাম্মেল হক বলেন, ইতিমধ্যে কিশামত গ্রামসহ কয়েকটি ইউনিয়নে গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন রকিবুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ হচ্ছে চর্মরোগ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কারও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরনের রোগী ভর্তি হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ মত গ র ম র উপসর গ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই

রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবু আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তেমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনরংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ আছে এমন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা বলেন, আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ–ছয়জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদপুরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।

বুধবার দুপুরে আমাইপুর গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, গরুর মালিক গরু অসুস্থের কথা বলেননি। বলেছিল, দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। এই দুই স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তাঁরা দেখেননি।

মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সূত্র বলছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের একজন নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তাঁর বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। বেশির ভাগ সময় পানি জমা ঘাস গবাদিপশু খাচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য অ্যানথ্রাক্স প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে।

অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ইমাদপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাঁরা গরু-ছাগল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করার পরেই গত আগস্ট থেকে তাঁরা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করেছে। এ কারণে এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর ও রাজাটহাটেও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ মাংসের জন্য বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেরি করেনি দাবি করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি, সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা আছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসাব্যবস্থা, সেটাও পর্যাপ্ত আছে। এ মুহূর্তে যেটা বিষয়, জনগণকে সচেতন করা। অসুস্থ প্রাণী জবাই না করা, নিজেরা না খাওয়া, লুকিয়ে বিক্রি না করা। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে স্বামীর মৃত্যু, সন্তান নিয়ে দিশাহারা ফেনসী
  • প্রোস্টেট ক্যানসারের যেসব সাধারণ উপসর্গকে অনেকেই অবহেলা করেন
  • শরীয়তপুরে জমি নিয়ে বিরোধে শিশু তায়েবা খুন: এসপি
  • রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই
  • দেশে আবার অ্যানথ্রাক্স, সুস্থ থাকতে যা জানা জরুরি