জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আজ রোববার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ মূলত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য কতটা কমেছে, তা শুনতে চাইবে কমিশন। দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত পরামর্শগুলোও প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবে ঐকমত্য কমিশন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা শুরু হবে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, এর আগে সকাল ১০টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন কমিশনের সদস্যরা।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কমিশন। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিন আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি।

কমিশন সূত্র জানায়, আলোচনা আজ শেষ করতে না পারলে আরও এক দিন তা হতে পারে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চায় কমিশন।

জুলাই সনদে বেশ কিছু প্রস্তাব আছে, যেগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা যায়। এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে। মূল বিতর্ক সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রস্তাব আকারে তুলে ধরেছিল কমিশন। সে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।

তবে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। পরে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দুই দিন আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বা প্রস্তাবটি পরিমার্জন করে আরও সুনির্দিষ্ট ও বিস্তৃত করা হয়েছে। সংবিধান আদেশ জারি ও গণভোটের পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে জুলাই সনদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা গঠনের বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। গণভোট হলে তা জাতীয় নির্বাচনের দিনই হতে পারে। আর গণপরিষদ করা হলে সেটাও আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে করা যায়। সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদ একই সঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করবে।

সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের একমাত্র বৈধ পথ বা ফোরাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। আগামী সংসদের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও পক্ষে দলটি।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ ও পরে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক।

সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোট ছয়টি সুপারিশ পেয়েছিল কমিশন। সেগুলো হলো গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, গণপরিষদ গঠন, আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া।

ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শনিবার সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে বৈঠক করে কমিশন। সেখানে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করা হয়।

বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে অংশ নেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দীর্ঘ বিরতিতে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনায় মতপার্থক্য কমে এসেছে। কমিশন আশা করে, আজকের আলোচনায় মতপার্থক্য কমে সুনির্দিষ্ট এক-দুটি প্রস্তাবের মধ্যে সীমিত থাকবে দলগুলো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ দলগ ল র স প রস ত ব র মত মত গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো দলের অভিসন্ধির কাছে মাথা নত করতে পারি না: সালাহউদ্দিন আহমদ

কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে বিএনপি কোনো দিন মাথা নত করতে পারে না, বলেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র কোনো ছেলেখেলা নয়। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনো দিন মাথা নত করতে পারি না। এই দেশের জনগণই হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক।’

আজ শনিবার রাজধানীর  রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

সংবিধান বদলের অধিকার কারও নেই

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘কোনো একটি আইনানুযায়ী বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের কারও নেই।’ এমনটা হলে  আগামী দুই বছর বা পাঁচ বছর পরে বারবার এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান বদলের দাবি উঠবে বলেন তিনি।  

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশ হয়েছে বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা যখনই একটা বৈধ প্রক্রিয়ার কথা বলি, তখন তারা বলে জনগণের অভিপ্রায় এখানে চূড়ান্ত। হ্যাঁ জনগণের অভিপ্রায় চূড়ান্ত। জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সেই অভিপ্রায়ের মধ্য দিয়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা সঠিক; কিন্তু এই অভিপ্রায়কে বাস্তবায়নের জন্য তো আমাদের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে, আর্টিকেল ১০৬–এর দ্বারস্থ হতে হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন দেখেছি। উপদেষ্টাদের শপথ দেখেছি। আমরা সেটিকে বৈধ প্রক্রিয়া মনে করি।’

৫৬ শতাংশ  মানুষ যে পিআর–পদ্ধতি বোঝেই না সেই পদ্ধতি চাইতে পারি?

সংখ্যানুপাতিক–পদ্ধতি (পিআর) নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ যে পিআরপদ্ধতি বোঝেই না সেই পদ্ধতি কি আমরা চাইতে পারি? সুতরাং এসব কথাবার্তা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা না করাই উচিত।’

যারা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে—দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে, তাদের বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সঠিক রাস্তায় ফেরত আসার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।

নির্বাচন বানচালে একটি রাজনৈতিক দল কাজ করছে

নির্বাচনে অস্থিরতা সৃষ্টি করা,  বিলম্বিত এবং বানচাল করার জন্য যে শক্তি কাজ করছে, তার পক্ষে একটি রাজনৈতিক দল কাজ করছে বলে সন্দেহ সালাহউদ্দিন আহমদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের উৎপাত হবে আবার।’

বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, এখন কথা উঠছে যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভিত্তিতেই নাকি আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হয়ে যাচ্ছে বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধু সংবিধানের অংশটুকু  বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সংসদের প্রয়োজন এবং সংবিধান সংশোধনের নির্ধারিত প্রক্রিয়া প্রয়োজন। সেই অংশগুলোতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী জাতীয় সংসদকেই দায়িত্ব দিতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি)  চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হারুন। এতে  বক্তব্য দেন অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, গণদলের সভাপতি এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অধস্তন রাখার দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই নারীদের যথাযথ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি: বদিউল আলম মজুমদার
  • চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন : বিএনপি-জামায়াতের বিপরীত মেরুতে অবস্থান
  • কোনো দলের অভিসন্ধির কাছে মাথা নত করতে পারি না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • শাপলা প্রতীকের জন্য লড়াই করবে এনসিপি: সারজিস আলম
  • মনোযোগ জুলাই সনদে, আছে নির্বাচনী ঐক্যের চিন্তাও
  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে