অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ক্যানসার প্রতিরোধে ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
Published: 5th, October 2025 GMT
বর্তমান বিশ্বে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ শব্দটি এমনভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেন এটি জীবনের সব সমস্যার একমাত্র সমাধান। বিজ্ঞাপন, স্বাস্থ্যপণ্য, এমনকি অনেকে চিকিৎসা পরামর্শেও একে ক্যানসার প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করেন।
কিন্তু বিজ্ঞানের কঠোর পরীক্ষায় এ ধারণা টিকে নেই। বাস্তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটি সাধারণ রাসায়নিক ধারণা। এটি এমন উপাদানকে বোঝায়, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকাল বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ক্যানসার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করার সমার্থক নয়।
আরো পড়ুন:
কত বছর বয়সের পরে মেরুদণ্ডের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে?
গোপালগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি
মানবদেহের প্রতিটি কোষে শ্বাস-প্রশ্বাস, শক্তি উৎপাদন ও অন্যান্য বিপাকীয় কার্যক্রমের ফলেই কিছু ফ্রি র্যাডিকাল তৈরি হয়, যা অতিরিক্ত হলে কোষের ক্ষতি করতে পারে। এই ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য দেহে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে। যেমন- গ্লুটাথায়ন, ক্যাটালেজ ও সুপারঅক্সাইড ডিজমিউটেজ এনজাইম।
উদ্ভিদজাত খাদ্যদ্রব্যের বিভিন্ন যৌগ এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে, যাদের আমরা একত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলি। তবে কোনো খাদ্য বা নির্যাসে এই যৌগের উপস্থিতি মানেই তা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর হবে- এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সত্যিই কার্যকর হত, তাহলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-ই ক্যানসারের মহাঔষধ হয়ে উঠত। বাস্তবে দেখা গেছে, উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে বরং কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত সিলেক্ট ট্রায়ালে দেখা গেছে, ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি, নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি ছিল। একইভাবে, একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ কোষের প্রাকৃতিক সংকেত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে টিউমার কোষের বেঁচে থাকার সুযোগও বাড়াতে পারে।
ননী ফল এই আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ননী ফল নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি শরীরের সব রোগের বিরুদ্ধে এক জাদুকরী ওষুধ। ফলটি স্কোপলেটিন, ফ্লাভোনয়েড, অ্যান্থ্রাকুইনোন গ্লাইকোসাইড, ট্রাইটারপিনয়েড, ফেনল ও বিভিন্ন ভিটামিন-খনিজে সমৃদ্ধ। এসব যৌগের কিছু ল্যাবরেটরি পর্যায়ে প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিক্যানসার কার্যকলাপ প্রদর্শন করেছে।
স্কোপলেটিন নামক উপাদান কিছু ইন-ভিট্রো গবেষণায় ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। তবে মানুষের শরীরে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়। বাস্তবে এই যৌগগুলোর বায়ো-অ্যাভেইলেবিলিটি ও বিপাকীয় স্থায়িত্ব খুব সীমিত। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় পৌঁছে কার্যকর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
ফার্মাকোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, এন্টিঅক্সিডেন্ট কোনো ঔষধ নয়। এটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সহায়ক মাত্র। ক্যানসার একটি জটিল রোগ, যার পেছনে শুধু অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নয়, বরং জেনেটিক পরিবর্তন, সিগন্যালিং পাথওয়ের ত্রুটি, ইমিউন সিস্টেমের ব্যর্থতা এবং পরিবেশগত প্রভাবসহ বহু কারণ কাজ করে। তাই কোনো একক যৌগ বা ফল দ্বারা এর প্রতিকার সম্ভব নয়।
ননী ফলের মতো উদ্ভিজ্জ উপাদানগুলো আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে। কারণ এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে এই উপাদানগুলোকে ‘ক্যানসার প্রতিরোধক’ হিসেবে প্রচার করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বরং অতিরিক্ত সেবন লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি ঘটাতে পারে। এই কারণে চিকিৎসা বা গবেষণার উদ্দেশ্যে ননী বা অনুরূপ ফলের ব্যবহার অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্বাবধানে হওয়া প্রয়োজন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “প্রতিটি উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের ওপর কোন কাজ করে না। এটি স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির জন্য মহা উপকারী। আমি আমার গবেষনায় বহু ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্রায়াল করেছি। যারা বলেন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের উপর কাজ করে, তারা সেটা হওয়ায় না, হাওয়ায় বলে। যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের উপর কাজ করতো, তাহলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো ভিটামিন-ই, সেটাই হত ক্যানসারের মহাঔষধ।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এমন কি কারো কথাও যদি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, সেটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। উদাহরনস্বরূপ, কেউ যদি বলে আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি, আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালো বাসতে বাসতে ফঁতুর করে দেব, সেটিও ওই ব্যক্তির জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটি টার্ম, উপাদান নির্দিষ্ট নয়।”
বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে, কোনো পদার্থকে ‘প্রাকৃতিক’ বললেই তা নিরাপদ হয় না। প্রকৃতির প্রতিটি রাসায়নিকেরই একটি কার্যকারিতা এবং সীমা আছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলো নিঃসন্দেহে দেহে ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে তাদের ভূমিকা চিকিৎসার বিকল্প নয়। একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা এবং সতর্ক বিশ্লেষণই আমাদের এসব প্রাকৃতিক উপাদানের প্রকৃত মূল্য ও সীমাবদ্ধতা বোঝার পথে এগিয়ে নিতে পারে।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক র য় ক জ কর উপ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার ফাইনালে সুপার ওভারে হারলো বাংলাদেশ ‘এ’, পাকিস্তান শাহীনস চ্যাম্পিয়ন
উত্তেজনা, নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, নখ কামড়ানো একেকটি মুহুর্ত, একেকটি বল। হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম। পেণ্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ফাইনাল ম্যাচে কখনো পাকিস্তান শাহীনসের মুখে হাসি। আবার কখনো হাসে বাংলাদেশ ‘এ’। সব সীমা অতিক্রম করে, চরম নাটকীয়তা শেষে ইতিহাসের পাতায় পাকিস্তান শাহীনস।
দোহায় এশিয়া কাপ রাইর্জিং স্টারসের ফাইনাল ম্যাচ। নির্ধারিত ২০ ওভারের ম্যাচে কেউ কাউকে হারাতে পারে না। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে পাকিস্তান শাহীনস কাছে ম্যাচ হেরে শিরোপা হারিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
মূল ম্যাচে পাকিস্তান শাহীনস আগে ব্যাটিং করতে নেমে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে ৯৬ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ম্যাচ পাকিস্তান শাহীনসের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দশম উইকেটে সাকলায়েন আহমেদ ও রিপন মণ্ডল সব এলোমেলো করে দেন। রুদ্ধশ্বাস ব্যাটিংয়ে ২৯ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ে যান সুপার ওভারে।
কিন্তু সুপার ওভারে প্রথমে সাকলায়েন ও পরে জিসান আলম আউট হলে বাংলাদেশ ৩ বলেই গুটিয়ে যায়। স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৬। পাকিস্তান সাদ মাসুদের বাউন্ডারিতে ২ বল আগেই জিতে নেয় সুপার ওভার। তাতে তৃতীয়বারের মতো নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতার শিরোপা।
বিস্তারিত আসছে …
ঢাকা/ইয়াসিন