টেস্ট ক্রিকেটে রজতজয়ন্তী : উদ্যাপনে মিশে থাকে দীর্ঘশ্বাস
Published: 10th, November 2025 GMT
দেখতে দেখতে ২৫ বছর! অথচ মনে হয়, এই তো সেদিন! এমনিতে একটু আলস্যভরা শুক্রবারের সকাল সেদিন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা, উৎসবের অদৃশ্য রঙে রঙিন। সব পথ গিয়ে যেন মিলেছে জাতীয় স্টেডিয়ামে। যেটির নাম তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ব্যানার, ফেস্টুন আর নানা রঙে সেজে তা যেন এক বিয়েবাড়ি। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি প্রায় অর্ধেক ভরিয়ে ফেলেছে মানুষের স্রোত। কিছুক্ষণ পর যখন আকাশে উড়ে যেতে শুরু করল তিন হাজার বেলুন, ততক্ষণে গ্যালারি প্রায় পূর্ণ।
সেই গ্যালারিতে হর্ষধ্বনি তুলে আনন্দ-আয়োজনের পরের পর্ব। ১০ হাজার ফুট ওপর থেকে একে একে মাঠে নেমে আসছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ প্যারাট্রুপার। একজনের হাতে ধরা পতাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের লোগো। বাকি ১০ জনের হাতে ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের পতাকা। ক্রিকেটের আদি পিতা ইংল্যান্ডের পতাকাবাহী নেমে এলেন সবার আগে, গ্যালারির চিৎকারকে সপ্তগ্রামে তুলে সবার শেষে টেস্ট পরিবারের নবীনতম সদস্য বাংলাদেশ। সবচেয়ে নিখুঁত অবতরণ হলো লাল-সবুজ প্যারাট্রুপারেরই। সেটির প্রতীকী অর্থও খুঁজে নিয়েছিলাম আমরা অনেকে।
স্মারক এক স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে টস হলো একটু পর। যে টস করতে নামার সময় টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই অধিনায়ক বাংলায় কথা বলতে বলতে মাঠের মাঝখানে। বাংলাদেশের নাঈমুর রহমান ও ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী। গ্যালারিকে আবার জাগিয়ে তুলে টসে বাংলাদেশের জয়। সকাল সাড়ে ৯টায় টেস্টের প্রথম বলটি করতে দৌড় শুরু করলেন ভারতের পেস বোলার জাভাগাল শ্রীনাথ। তাঁর সামনে বাংলাদেশের ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন, বিদ্যুৎ নামেই যাঁকে মানুষ বেশি চেনে।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর সকালে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনায় ভীরু ভীরু পা পড়ল বাংলাদেশের।
২৫ বছর আসলে কতটা সময়বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এটিকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম একটি লেখায়। তা থেকে সরে আসার কোনো কারণ দেখছি না। আর কোনো খেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নেই—এটাই যথেষ্ট এই দাবির যৌক্তিকতা বোঝাতে। সেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর, মানে রজতজয়ন্তী উদ্যাপনের একটা উপলক্ষ তো বটেই। এরই সঙ্গে চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোরও। তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা মনে হয় জরুরি। ২৫ বছর একেবারে কম সময় নয়, আবার টেস্ট ক্রিকেটের বৃহত্তর ছবিতে আসলেই কি খুব দীর্ঘ সময়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসটা একটু জানতে হবে।
ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল ১৮৭৭ সালের মার্চে। এবার তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের বয়সটা হিসাব করে ফেলুন। মাস-দিন ধরে একেবারে নিখুঁত হিসাবে না গেলে টেস্ট ক্রিকেটের বয়স এখন ১৪৮ বছর। এটা না বললেও চলছে, প্রথম টেস্টের দুই দল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটে পদচারণও ঠিক ১৪৮ বছর ধরে।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার পর টেস্ট পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে আবাহন দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথম টেস্টের প্রায় এক যুগ পর, ১৮৮৯ সালের মার্চেই দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অভিষেক। টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার তাই ১৩৬তম বছর চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি দেশগুলোর কথা যদি বলে যাই—টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আছে ৯৭ বছর, নিউজিল্যান্ড ৯৫, ভারত ৯৩, পাকিস্তান ৭৩, শ্রীলঙ্কা ৪৩ ও জিম্বাবুয়ে ৩৩ বছর। টেস্ট পরিবারে বাংলাদেশের জুনিয়র দুই দেশ আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের এটি সপ্তম বছর চলছে।
এসব বলার অর্থ অবশ্যই এটা নয় যে বাংলাদেশ যখন টেস্ট খেলে, তখন আমরা প্রতিপক্ষ দলগুলো কত বছরের সিনিয়র-জুনিয়র—এ হিসাব করতে বসব। খেলায় জয়-পরাজয় এসব মেনে হয় না। তাহলে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিতে পারত না বা হেরে বসত না আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই। তাহলে কোন দেশ কত বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, এটা ঘটা করে জানানো কেন? কারণ একটাই—বৃহত্তর চিত্রটা সম্পর্কে ধারণা থাকায় অনেক কিছু বুঝতে সুবিধা হবে তাহলে। সে জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে টেস্ট পরিবারে বরণ করে নেওয়ার পটভূমিটাও জানা দরকার। এর আগে একচিমটি হলেও এই অঞ্চলের ক্রিকেট–ইতিহাস।
টেস্ট ক্রিকেটে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের জন্য এসেছে স্মরণীয় সব মুহূর্ত।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট স ট পর ব র প রথম ট স ট ২৫ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট ক্রিকেটে রজতজয়ন্তী : উদ্যাপনে মিশে থাকে দীর্ঘশ্বাস
দেখতে দেখতে ২৫ বছর! অথচ মনে হয়, এই তো সেদিন! এমনিতে একটু আলস্যভরা শুক্রবারের সকাল সেদিন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা, উৎসবের অদৃশ্য রঙে রঙিন। সব পথ গিয়ে যেন মিলেছে জাতীয় স্টেডিয়ামে। যেটির নাম তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ব্যানার, ফেস্টুন আর নানা রঙে সেজে তা যেন এক বিয়েবাড়ি। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি প্রায় অর্ধেক ভরিয়ে ফেলেছে মানুষের স্রোত। কিছুক্ষণ পর যখন আকাশে উড়ে যেতে শুরু করল তিন হাজার বেলুন, ততক্ষণে গ্যালারি প্রায় পূর্ণ।
সেই গ্যালারিতে হর্ষধ্বনি তুলে আনন্দ-আয়োজনের পরের পর্ব। ১০ হাজার ফুট ওপর থেকে একে একে মাঠে নেমে আসছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ প্যারাট্রুপার। একজনের হাতে ধরা পতাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের লোগো। বাকি ১০ জনের হাতে ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের পতাকা। ক্রিকেটের আদি পিতা ইংল্যান্ডের পতাকাবাহী নেমে এলেন সবার আগে, গ্যালারির চিৎকারকে সপ্তগ্রামে তুলে সবার শেষে টেস্ট পরিবারের নবীনতম সদস্য বাংলাদেশ। সবচেয়ে নিখুঁত অবতরণ হলো লাল-সবুজ প্যারাট্রুপারেরই। সেটির প্রতীকী অর্থও খুঁজে নিয়েছিলাম আমরা অনেকে।
স্মারক এক স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে টস হলো একটু পর। যে টস করতে নামার সময় টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই অধিনায়ক বাংলায় কথা বলতে বলতে মাঠের মাঝখানে। বাংলাদেশের নাঈমুর রহমান ও ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী। গ্যালারিকে আবার জাগিয়ে তুলে টসে বাংলাদেশের জয়। সকাল সাড়ে ৯টায় টেস্টের প্রথম বলটি করতে দৌড় শুরু করলেন ভারতের পেস বোলার জাভাগাল শ্রীনাথ। তাঁর সামনে বাংলাদেশের ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন, বিদ্যুৎ নামেই যাঁকে মানুষ বেশি চেনে।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর সকালে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনায় ভীরু ভীরু পা পড়ল বাংলাদেশের।
২৫ বছর আসলে কতটা সময়বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এটিকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম একটি লেখায়। তা থেকে সরে আসার কোনো কারণ দেখছি না। আর কোনো খেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নেই—এটাই যথেষ্ট এই দাবির যৌক্তিকতা বোঝাতে। সেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর, মানে রজতজয়ন্তী উদ্যাপনের একটা উপলক্ষ তো বটেই। এরই সঙ্গে চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোরও। তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা মনে হয় জরুরি। ২৫ বছর একেবারে কম সময় নয়, আবার টেস্ট ক্রিকেটের বৃহত্তর ছবিতে আসলেই কি খুব দীর্ঘ সময়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসটা একটু জানতে হবে।
ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল ১৮৭৭ সালের মার্চে। এবার তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের বয়সটা হিসাব করে ফেলুন। মাস-দিন ধরে একেবারে নিখুঁত হিসাবে না গেলে টেস্ট ক্রিকেটের বয়স এখন ১৪৮ বছর। এটা না বললেও চলছে, প্রথম টেস্টের দুই দল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটে পদচারণও ঠিক ১৪৮ বছর ধরে।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার পর টেস্ট পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসেবে আবাহন দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথম টেস্টের প্রায় এক যুগ পর, ১৮৮৯ সালের মার্চেই দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অভিষেক। টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার তাই ১৩৬তম বছর চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি দেশগুলোর কথা যদি বলে যাই—টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আছে ৯৭ বছর, নিউজিল্যান্ড ৯৫, ভারত ৯৩, পাকিস্তান ৭৩, শ্রীলঙ্কা ৪৩ ও জিম্বাবুয়ে ৩৩ বছর। টেস্ট পরিবারে বাংলাদেশের জুনিয়র দুই দেশ আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের এটি সপ্তম বছর চলছে।
এসব বলার অর্থ অবশ্যই এটা নয় যে বাংলাদেশ যখন টেস্ট খেলে, তখন আমরা প্রতিপক্ষ দলগুলো কত বছরের সিনিয়র-জুনিয়র—এ হিসাব করতে বসব। খেলায় জয়-পরাজয় এসব মেনে হয় না। তাহলে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিতে পারত না বা হেরে বসত না আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই। তাহলে কোন দেশ কত বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, এটা ঘটা করে জানানো কেন? কারণ একটাই—বৃহত্তর চিত্রটা সম্পর্কে ধারণা থাকায় অনেক কিছু বুঝতে সুবিধা হবে তাহলে। সে জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে টেস্ট পরিবারে বরণ করে নেওয়ার পটভূমিটাও জানা দরকার। এর আগে একচিমটি হলেও এই অঞ্চলের ক্রিকেট–ইতিহাস।
টেস্ট ক্রিকেটে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের জন্য এসেছে স্মরণীয় সব মুহূর্ত।