গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে ‘অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ’, একজনের মৃত্যু
Published: 5th, October 2025 GMT
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১ জনের শরীরে ‘অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ’ দেখা দিয়েছে। তারা সবাই উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সাতজন শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্সের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল বলেন, “শনিবার (৪ অক্টোবর) আজেদা বেগম (৪৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। তিনি একটি রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করেছিলেন।”
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে শিক্ষার্থীসহ ২ জনের মৃত্যু
হোমনায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু
গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আক্রান্তদের সাতজন এখানে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন- মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.
অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স জানান, সাতজন রোগীর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের হাত, মুখ, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা ও পচন ধরেছে। জ্বর, ব্যথা, ঘা ও চুলকানিতে ভুগছেন তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু থেকেই এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্তরা একটি অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। আক্রান্তরা এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমার ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু জবাই করে সেই মাংস গ্রামের অন্তত ১২০ জনের মধ্যে ভাগ করা হয়। জবাই ও মাংস কাটাকাটির কাজে ১০ থেকে ১৫ জন সরাসরি যুক্ত ছিলেন। পরে তাদের শরীরে ফোসকা ও ঘা দেখা দেয়। আমার এলাকায় এ পর্যন্ত ১১ জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “শনিবার (৪ অক্টোবর) আজেদা বেগম (৪৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। তিনি একটি রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করেছিলেন। আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত দুইটি গরু মারা গেছে।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, “১ অক্টোবর তিনজন, ২ অক্টোবর আটজন এবং ৪ অক্টোবর একজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাদের উপসর্গ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অ্যানথ্রাক্স।”
তিনি আরো বলেন, “শনিবার এক নারী উপসর্গ নিয়ে এসেছিলেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তিনি মারা গেছেন।”
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, “প্রথমে পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ ছিল। পরবর্তীতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা, সোনারায়, পৌরসভা ও বেলকা ইউনিয়নে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় কয়েকটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে ২৪ হাজার টিকা প্রদান করা হয়েছে। আরো ২ লাখ টিকা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পাওয়া যাবে।”
তিনি বলেন, “আক্রান্ত পশু জবাই করলে সেই রক্ত এবং মাংস থেকে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। তবে মাংস খেলে এ রোগ ছড়ায় না। তাই কোনো অবস্থাতেই রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা যাবে না। ইতোমধ্যে এ ধরনের তিনটি আক্রান্ত পশু জবাই করার কারণে জবাই করার সঙ্গে জড়িতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।”
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে এলাকায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত পশু জবাই না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপসর গ জন র ম এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
গাজীপুরের শ্রীপুরে সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণী লেমুর চুরির ঘটনায় পাচার চক্রের সদস্য অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার মজনু মিয়া (৫৫) পাচার চক্রের একজন সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে কাজ করছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। পরে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, চুরি হওয়া তিনটি রিংটেইল লেমুরের মধ্যে একটি উদ্ধার করা গেছে। অন্য দুটির খোঁজ নেই। সেগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, চক্রটি গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি করা বিরল প্রাণীগুলো বিদেশে পাচারের পরিকল্পনা করেছিলেন। মজনু মিয়া ছিলেন এই প্রক্রিয়ার মূল সহযোগী।
গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে পার্কের নিরাপত্তাবেষ্টনী কেটে তিনটি রিংটেইল লেমুর চুরি করা হয়। পরদিন পার্কের কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
২০১৮ সালে মাদাগাস্কার থেকে পাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু প্রাণী উদ্ধার করে। সেগুলোর মধ্যে চারটি লেমুর গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। একটি মারা যায়, তিনটি জীবিত ছিল। এই তিন লেমুরই গত মার্চে চুরি হয়। ফলে লেমুর বেষ্টনী এখন খালি।