গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১ জনের শরীরে ‘অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ’ দেখা দিয়েছে। তারা সবাই উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সাতজন শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্সের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল বলেন, “শনিবার (৪ অক্টোবর) আজেদা বেগম (৪৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। তিনি একটি রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করেছিলেন।”

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে শিক্ষার্থীসহ ২ জনের মৃত্যু

হোমনায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু

গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আক্রান্তদের সাতজন এখানে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন- মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.

মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স আক্রান্তদের চিকিৎসা দেন।

অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স জানান, সাতজন রোগীর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের হাত, মুখ, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা ও পচন ধরেছে। জ্বর, ব্যথা, ঘা ও চুলকানিতে ভুগছেন তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু থেকেই এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্তরা একটি অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। আক্রান্তরা এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমার ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামের মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু জবাই করে সেই মাংস গ্রামের অন্তত ১২০ জনের মধ্যে ভাগ করা হয়। জবাই ও মাংস কাটাকাটির কাজে ১০ থেকে ১৫ জন সরাসরি যুক্ত ছিলেন। পরে তাদের শরীরে ফোসকা ও ঘা দেখা দেয়। আমার এলাকায় এ পর্যন্ত ১১ জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।” 

তিনি বলেন, “শনিবার (৪ অক্টোবর) আজেদা বেগম (৪৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। তিনি একটি রোগাক্রান্ত ছাগল জবাই করেছিলেন। আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত দুইটি গরু মারা গেছে।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, “১ অক্টোবর তিনজন, ২ অক্টোবর আটজন এবং ৪ অক্টোবর একজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাদের উপসর্গ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অ্যানথ্রাক্স।” 

তিনি আরো বলেন, “শনিবার এক নারী উপসর্গ নিয়ে এসেছিলেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তিনি মারা গেছেন।”

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, “প্রথমে পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ ছিল। পরবর্তীতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা, সোনারায়, পৌরসভা ও বেলকা ইউনিয়নে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় কয়েকটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে ২৪ হাজার টিকা প্রদান করা হয়েছে। আরো ২ লাখ টিকা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পাওয়া যাবে।”

তিনি বলেন, “আক্রান্ত পশু জবাই করলে সেই রক্ত এবং মাংস থেকে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। তবে মাংস খেলে এ রোগ ছড়ায় না। তাই কোনো অবস্থাতেই রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা যাবে না। ইতোমধ্যে এ ধরনের তিনটি আক্রান্ত পশু জবাই করার কারণে জবাই করার সঙ্গে জড়িতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।” 

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে এলাকায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত পশু জবাই না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/মাসুম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপসর গ জন র ম এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সহকারী শিক্ষকের বেতন কম্পিউটার অপারেটরের সমান, কলেজ অধ্যাপকের বেতন যুগ্ম সচিবেরও নিচে

শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড কম্পিউটার অপারেটরের স্কেলের সমান। আর সরকারি কলেজের অধ্যাপকের স্কেল একজন যুগ্ম সচিবেরও নিচে। এটি  মনে রাখতে হবে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এসব কথা বলেন। আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সম্মান জানাতে আজ সারা বিশ্বেই পালিত হচ্ছে দিবসটি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশে এমন সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকেরা আর্থিক ও মর্যাদার দাবিতে নানা রকমের আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি০৪ অক্টোবর ২০২৫

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষা ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আমরা দেখব, সবচেয়ে নিচে রয়েছেন আমাদের প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকেরা। তাঁরা কত গ্রেডে বেতন পান? ১৩ (জাতীয় বেতনস্কেলের ১৩তম গ্রেড)। অর্থাৎ একজন কম্পিউটার অপারেটরের স্কেলে...। এই হচ্ছে তাঁর সম্মান। উপজেলা হেড কোয়ার্টারে যেখানে তিনি বেতন পান, সেই হিসাবরক্ষক, তাঁর স্কেল হচ্ছে ১২তম। তাঁকে স্যার ডাকার মতো অবস্থা।’

অন্যান্য স্তরের শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘সরকারি কলেজের অধ্যাপকের স্কেল কত, চার (চতুর্থ গ্রেড)। অর্থাৎ একজন যুগ্ম সচিবেরও নিচে অবস্থান করেন। আমরা এই মর্যাদা দিচ্ছি শিক্ষকদের। সুতরাং শিক্ষকদের যদি সত্যি মর্যাদা দিতে হয়, তাহলে শুধু মুখের কথায় চিড়া ভিজবে না। এই কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুনপ্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পেলেন ১০ জন১৫ ঘণ্টা আগে

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ১২ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সিআর আবরার)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের মহাসচিব সালিম এম. আল মালিক, ইউনেসকোর ঢাকা অফিসের প্রধান সুসান ভাইজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানহানি, থানায় অভিযোগ  
  • একজন ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং না পাওয়াই হয়তো জীবনের রেখা অনেকটাই নির্ভর করে
  • আমি ব্যর্থ হয়েছি: বাঁধন
  • নাটোরে পাখি শিকার করতে নিষেধ করায় গুলি, একজন আহত
  • আলোচনায় নুহাশ হুমায়ূনের ফেসবুক পোস্ট
  • সহকারী শিক্ষকের বেতন কম্পিউটার অপারেটরের সমান, কলেজ অধ্যাপকের বেতন যুগ্ম সচিবেরও নিচে
  • গাইবান্ধায় প্লাস্টিক বোতলের দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, দেখতে ভিড়
  • অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে স্বামীর মৃত্যু, সন্তান নিয়ে দিশাহারা ফেনসী
  • অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটার সঙ্গে যুক্ত আরও ৭ জনের উপসর্গ শনাক্ত