বিসিবির একপেশে নির্বাচনে সভাপতি হচ্ছেন কে
Published: 6th, October 2025 GMT
সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ, একযোগে ১৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, পরে আরও চার প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা, আদালতে পাল্টাপাল্টি রিট–বিতর্কের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের বিতর্কিত ও একপেশে নির্বাচন।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। তফসিল অনুযায়ী বোর্ড পরিচালক নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। এর পরপরই পরিচালনা পর্ষদের সভায় নির্বাচিত হবেন বিসিবির নতুন সভাপতি ও দুজন সহসভাপতি। সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার কথা রাত ৯টায়।
বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের এবারের নির্বাচন অনেকটাই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার করা ছকে হচ্ছে। বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলামের নতুন করে বোর্ড সভাপতি হওয়াটা তাই অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর অ্যাডহক কমিটিতে শেষ মুহূর্তে বদল এনে ক্রীড়া উপদেষ্টার পছন্দের ব্যক্তিদের বিসিবির কাউন্সিলর করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লাব কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও আছে। এই অভিযোগ এর আগে করেছিলেন ওল্ড ডিওএইচএসের কাউন্সিলর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও।
আরও পড়ুনবিসিবি নির্বাচন: কীভাবে নির্বাচিত হন পরিচালকেরা, কে হন সভাপতি১১ ঘণ্টা আগেতবে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম গতকালও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিসিবি কার্যালয়ে নিজের নির্বাচন করা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আমার কাছে (সরকারের) প্রভাব কিছু মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার (বিসিবিতে) চালিয়ে যাওয়া দরকার। আমাকে যাঁরা ভোট দিচ্ছেন বা ভোট দেবেন না অথবা আপনারা (সাংবাদিক) যাঁরা আছেন, যদি মনে করেন আমি যথেষ্ট ভালো না, আমি চলে যেতে আগ্রহী আছি যেকোনো সময়।’ এর আগে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টাও।
বিসিবি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কমিশনের সাবেক সহসভাপতি এবং সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নটা আপনি (প্রশ্নকর্তা) তুলেছেন, সেটি তথ্যগতভাবে ভুল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোনো মিথ্যাচার করে থাকে, তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।’
বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন সম্মেলনের একটি পর্বে বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথাগুলো বলেন। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত সাত কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি টাকার কম খরচ করা হয়েছে এবং কীভাবে খরচ করা হয়েছে, সেটা চিফ অ্যাডভাইজারের (প্রধান উপদেষ্টা) অফিস থেকে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
অভিযোগকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে কমিশনের সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, ‘আপনি যে মিথ্যাচারটা রিপিট (পুনরাবৃত্তি) করেছেন, সেটার জন্য আপনাকে আমি আরেকবার শুধু স্মরণ করিয়ে দেব, যেকোনো তথ্যের সর্বশেষ ভাষ্যটি লক্ষ করা খুব জরুরি। কেননা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যাঁরা এই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁরা কিন্তু এই হিসাবের পরে আর কোনো কথা বলেননি।’
এ ছাড়া আলী রীয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের বিষয়ে। জবাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন, এমন পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি একে মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশটার খানিকটা হলো কথাবার্তা বলার, চর্চার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেকোনো রকম কাজ করলে তাদের সমালোচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পেরেছে। এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা করছি।’
জনগণের সমর্থনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে কাঠামোগত এবং সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব হবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘ফলে যদি কেউ মনে করেন যে সংস্কারের প্রশ্নটি ইতিমধ্যে মারা গেছে এবং যাঁরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে চান, তাঁরা লিখতে পারেন। কারণ, অবিচ্যুয়ারি লেখার অভ্যাস তাঁদের আছে এবং অন্যরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে পারেন।’
‘বাংলাদেশের একটা ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে’ এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যখন জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়, সেই অনুষ্ঠানে সুস্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে একটি দলিল দিয়ে আসলে সমস্ত রকম সংস্কার সম্ভব নয়। এটি সূচনা মাত্র এবং জাতীয় সনদের যে শিরোনাম করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে—ভবিষ্যতের পথরেখা। আশা করি, সেটা আপনাদের সবারই নজরে থাকবে।’
এর আগে সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দেশেই ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। কর্তৃত্ববাদীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করলেও গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারায় বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, সরকারের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে অথবা রাষ্ট্রগুলো দমনমূলক হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সরকার সংকটকে টিকিয়ে রাখছে। আবার তার বিপরীতে প্রায়ই রাষ্ট্র নিজেও বহিরাগত শক্তির চাপে ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সমসাময়িক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি।