সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে
Published: 6th, October 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ায় অবস্থিত আয়েশা ক্লথিং লিমিটেড নামে পোশাক কারাখানায় লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট এবং সেনা সদস্যদের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পানি সংকটে আগুনে নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে কারখানার দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আশুলিয়া শিল্প এলাকার বিভিন্ন স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আরো পড়ুন:
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট
টঙ্গীতে কাপড়ের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড
অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহত হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লথিং লিমিটেড পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সংবাদ পায় ১২ টা ১৯ মিনিটে। ১২ টা ৩৮ মিনিটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানিয়েছেন জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার সবুজ ইসলাম। তিনি জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন কমে আসে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফ্যান্টাসি কিংডমের বিপরীত পাশে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। প্রথমে জিরাবো ফায়ার স্টেশনের তিন ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যায়। এরপর আগুন বাড়তে থাকায় ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট যোগ দেয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা কাজ শুরু করেন বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস জোন-৪ এর উপপরিচালক আলাউদ্দিন বলেন, “শুধু দোতলায় আগুন লাগে। নয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ৪টা ২৭ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ হয়।’’ অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহত হয়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
উপপরিচালক আলাউদ্দিন আরো বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। আগুনের সূত্রপাতের কারণও জানা যায়নি।’’
আগুন নেভাতে পানি সংকট
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী একটি পোশাক কারখানা ও একটি পুকুর থেকে পানির ব্যবস্থা করা হয়।
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার বলেন, “ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ওই কারখানায় আগুনের খবর পায় ১২ টা ১৯ মিনিটে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় জিরাবো ফায়ার সার্ভিসের আরো তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজ শুরু করে।”
দুপুরে ফায়ার সার্ভিস জোন-৪ এর উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন বলেন, “এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের তিনটি, জিরাবো ফায়ার সার্ভিসের তিনটিসহ মোট নয়টি ইউনিট কাজ করছে। আট তলা কারখানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওয়্যারহাউজে আগুন লেগেছে। প্রচুর ধোয়া ও তাপ এখানে। আমরা চেষ্টা করছি আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে। তবে আরো সময় লাগবে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”
সড়কে যান চলাচল ব্যাহত
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় করায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর সোয়া ১২টা থেকে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ৪টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়। সড়ক দিয়ে চলাচলরত গাড়ি দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে একই স্থানে আটকে ছিল।
সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির এক পাশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি রাখা হয়েছে। অপর পাশে উৎসুক জনতার ভিড় করে সড়কটি বন্ধ করে রেখেছে। প্রায় চার ঘন্টা ধরে সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানান পরিবহন চালকেরা।
স্মার্ট পরিবহনের চালক আল-আমিন বলেন, ‘‘বাইপাইল থেকে ১২টার দিকে গাড়ি ছেড়ে জামগড়ার কাছাকাছি আসলে যানজটের কবলে পড়ি। পরে গাড়ি নিয়ে আর সামনের দিকে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শুনি কারখানায় আগুন লেগেছে। উৎসুক জনতা ভিড় করে সড়ক বন্ধ করে দেয়।’’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ‘‘সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ ছিল না। মূলত বাইপাইল থেকে কোনো যানবাহন যেতে দেওয়া হয়নি, যাতে ফায়ার সার্ভিস নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে।’’
ঢাকা/সাব্বির/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন খবর প য় ন বল ন আগ ন র য় আগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের ‘মিনি বন্দরবান’ দেখতে কেমন
উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কটি দিয়ে যেতে দুপাশের সবুজ গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচির ডাক যে কাউকেই মুগ্ধ করে। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত এই সড়কের নাম ‘গোয়ালিয়া-মরিচ্যা’ সড়ক। পর্যটননগর কক্সবাজারের এই এলাকা এখন পরিচিত পেয়েছে ‘মিনি বান্দরবান’ নামে। পর্যটকেরাও সাগর দেখার পাশাপাশি এলাকাটিতে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছেন পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর আমেজ।
কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে টেকনাফের দিকে ১৮ কিলোমিটার গেলে সামনে পড়ে উখিয়ার রেজুখাল সেতু। সেতুর পূর্ব পাশে বিজিবির তল্লাশিচৌকি। পাশে টাঙানো একটি দিকনির্দেশক সাইনবোর্ডে লেখা—‘মিনি বান্দরবান’। নির্দেশনা অনুযায়ী সাইনবোর্ডের পূর্ব দিকে গেলেই ১২ কিলোমিটারের সড়কটি।
রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে অবস্থিত এই সড়ক সম্প্রতি ঘুরে দেখা হয়। সড়কে গিয়ে দেখা যায় ‘মিনি বান্দরবান’ দেখতে খোলা জিপ, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। সড়কটির দুপাশে কোথাও সুপারিবাগান, কোথাও আবার ধান ও সবজির খেত। এ ছাড়া কিছু স্থানে রয়েছে ঘরবাড়ি। সড়কটি ধরে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ‘গোয়ালিয়া পার্ক’।
গোয়ালিয়া পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আবার চুপচাপ চারপাশের সবুজ পরিবেশ উপভোগ করছেন। পার্কের এক পাশে স্থাপন করা হয়েছে কাঠের চৌকি। এসব চৌকিতেও বসে রয়েছেন কিছু পর্যটক। পাশে চা-কফি ও খাবারের দোকানেও পর্যটকদের জটলা চোখে পড়ে।
একটি খোলা জিপ নিয়ে গোয়ালিয়া পার্কে আসেন ঢাকার আদাবর এলাকার ৩টি পরিবারের ১২ সদস্য। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তোলার সময় কথা হয় এই দলেরই এক সদস্য সাজিদুর রহমানের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।’
গোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠেছেন। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়টিরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত, ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।সাজিদুর রহমান আরও বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক এমনিতেই আকর্ষণীয়। সাগরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে পাহাড়সারি, ঝরনা, পানের বরজ, সুপারিবাগানের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এর সঙ্গে পথে ‘মিনি বান্দরবান’ পর্যটকদের নতুন কিছু দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
দলের আরেক সদস্য বিলকিস আকতার (৩২) বলেন, বান্দরবানের তাঁর দুবার যাওয়া হয়েছে। দুবারই নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে দেখেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচল প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচুতে। সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশে যে দৃশ্য অবলোকন করা যায়, সে রকম দৃশ্য দেখা গোয়ালিয়াতে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘গোয়ালিয়ার পাহাড় বড়জোর ৮০ ফুট হবে। এর সঙ্গে বান্দরবানের তুলনা চলে না। হয়তো দেখতে বান্দরবানের মতো লাগে বলেই মিনি বান্দরবান নাম দেওয়া হয়েছে।’
মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে মিনি বান্দরবান সাইনবোর্ডটি হঠাৎ চোখে পড়ে। এরপর এলাকাটি ঘুরতে এসেছি। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা কখনো তিন পার্বত্য জেলার—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি—মনোরম দৃশ্য দেখেননি, তাঁদের অপূর্ণতা কিছুটা হলেও ঘোচাবে এই পর্যটন এলাকা।সাজিদুর রহমান, পর্যটকগোয়ালিয়া পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু আরেকটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি নেই। অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠতে। মিনি বান্দরবানের মতো এই পাহাড়েরও নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি চিম্বুক’। পাহাড়ের ওপরে উঠে সাগর, সৈকত ও ঝাউবাগান দেখা যায়। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে থাকা উঁচু–নিচু পাহাড়সারি, রেজুখালও চোখে পড়ে।
পাহাড়চূড়ায় কথা হয় দিনাজপুরের মুহসিনা আক্তার ও তাঁর স্বামী মকবুল আহমদের সঙ্গে। তিন দিনের ভ্রমণে কক্সবাজারে এসে দ্বিতীয় দিনে তাঁরা মিনি বান্দরবান দেখতে আসেন। মকবুল আহমদ (৩২) বলেন, ‘বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় সাত থেকে আট হাজার ফুট উঁচুতে। চান্দের গাড়ি (খোলা জিপ) নিয়ে সেখানে যেতে গা হিম হয়ে আসে। পথে পথে ঝরনা, পাহাড়িদের বাজার, টংঘর—কত কিছু রয়েছে। কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। তারপরও সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য মিনি বান্দরবান আনন্দের মাত্রা কিছুটা বাড়াবে।’
নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি করা গেলে মিনি বান্দরবানে লোকসমাগম আরও বাড়ত বলে জানান কয়েকজন পর্যটক। ফেনীর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, তাঁরা চারজন ফেনী থেকে এসেছেন। মিনি চিম্বুকে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগের ইচ্ছা ছিল তাঁদের। কিন্তু পাহাড়ি এলাকাটিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় এর আগেই ফিরে যাচ্ছেন।
‘মিনি বান্দরবান’ এলাকা