আল্লামা শিবলি নোমানির ভাবনায় আধুনিক শিক্ষা
Published: 7th, October 2025 GMT
১৮৫৭ সালের ৪ জুন ভারতের আজমগড়ের বান্দলে জন্ম নেন দেওবন্দি মতাদর্শের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ.)। ১৮ নভেম্বর ১৯১৪ সালে তাঁর ইন্তেকাল হয়৷ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সংক্ষিপ্ত ইসলামি বিশ্বকোষ: ২/৩৮৩–৩৮৪)
এত সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি যে অসাধারণ কাজ করেছেন, তা বর্ণনাতীত। তিনি সর্বাঙ্গীণ প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। সাহিত্য, ইতিহাস, জীবনী, গবেষণা–সমালোচনা এবং শিক্ষা ও ধর্ম প্রচার—যেকোনো ক্ষেত্রে তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাঁর জ্ঞানচর্চা ও জাতীয় সেবা এর প্রমাণ। তিনি মুসলমানদের শিক্ষাকে অত্যন্ত জরুরি মনে করতেন।
শিবলি নোমানি তাঁর যুগের মুসলমানদের শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা দেখে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। তাঁর রচনায় মুসলমানদের অতীত শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সোনালি যুগের কৃতিত্ব স্মরণ করিয়ে দেন—কীভাবে তারা জ্ঞান ছড়িয়েছিল, কোন কোন বিদ্যা উদ্ভাবন করেছিল এবং কীভাবে তা উচ্চতায় পৌঁছেছিল। (বিপান চন্দ্র, হিস্ট্রি অব মডার্ন ইন্ডিয়া, পৃ.
সমগ্র জীবনে তিনি শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত ছিলেন। তবে তিনি শুধু লেখালেখিই করেননি, মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রতি উদ্দীপনা ছড়িয়েছেন। তাঁর শিক্ষাভাবনা এত বিস্তৃত ছিল, তিনি নারীদের উচ্চশিক্ষারও প্রবল সমর্থক ছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে এমন একটি পাঠ্যসূচি হওয়া উচিত, যা ছেলেমেয়ের জন্য সমান।
একবার এক চিঠিতে মাওলানা হাবিবুর রহমান খান শেরওয়ানিকে তিনি লিখেছিলেন যে তিনি মুম্বাইয়ে নারী শিক্ষার বিস্ময়কর উদাহরণ দেখেছেন। রোম, মিশর ও সিরিয়া ভ্রমণের সময় তুরস্কে নারীর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দেখে তিনি তুর্কি জনগোষ্ঠীর প্রশংসা করেন। (আল্লামা সাইয়িদ সুলাইমান নদভি, মাকালাতে শিবলী: ৮/৭৮)
মুসলমানদের জন্য কেবল ইংরেজি শিক্ষা যথেষ্ট নয়, ঠিক তেমনি শুধু প্রাচীন আরবি মাদ্রাসার শিক্ষা পুরোপুরি সঙ্গী হতে পারে না। আমাদের রোগের চিকিৎসা হলো একটি সংমিশ্রণ।আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ.)আরও পড়ুনবিপ্লবী চিন্তাবিদ ইমাম ইবনে তাইমিয়া১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫আধুনিক শিক্ষার অনুরাগীতাঁর বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিক্ষা ও ধর্ম। তিনি শিক্ষাবিজ্ঞানে গভীর মনোযোগী ছিলেন। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ্ণৌর নদওয়াতুল ওলামার শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি বিপুল ত্যাগ ও সাধনা করেছিলেন। কেবল ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে নয়; বরং তিনি সারা বিশ্বে ইসলামের শিক্ষাগত চাহিদা ও অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
প্রাচীন শিক্ষাপন্থাকে তিনি সমর্থন করলেও আধুনিক বিজ্ঞান ও শিক্ষার কার্যকর বিষয়গুলোও গ্রহণ করেন। (বারবারা মেটকাফ, ইসলামিক রিভাইবল ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া–দেওবন্দ: পৃ. ৩৪১–৩৪২)
নদওয়ায় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি আদ–দুরুসুল উলা ফিল ফালসাফাতিত তাবিয়্যাহ পাঠ্য করেন, যা ১৮৮২ সালে বৈরুত থেকে প্রকাশিত খ্রিষ্টান পণ্ডিত জ্যাকসনের লেখা। এতে পদার্থবিদ্যা, গতি, মহাকর্ষ, তরল, অপটিকস, বিদ্যুৎপ্রবাহ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বইটি পড়ানোর জন্য আল্লামা মুহাম্মদ হামিদুদ্দিন ফারাহি ও মির্জা মুহাম্মদ হাদি রসওয়াকে নিযুক্ত করেন।
১৯০১ সালে তিনি নদওয়ায় মাত্র ১৫ রুপি মাসিক বেতনে একজন ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগ করেন। এখান থেকে ইংরেজি শিখেই মাওলানা আবদুল বারি নদভি অনেক আধুনিক দর্শনের বই অনুবাদ করতে সক্ষম হন।১৯০১ সালে তিনি নদওয়ায় মাত্র ১৫ রুপি মাসিক বেতনে একজন ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগ করেন। এখান থেকে ইংরেজি শিখেই মাওলানা আবদুল বারি নদভি অনেক আধুনিক দর্শনের বই অনুবাদ করতে সক্ষম হন।
শিবলির এ পাঠ্য উদ্যোগ ছিল এক বিপ্লবী পদক্ষেপ। যদিও ১৯১৩ সালে তিনি পদত্যাগ করার পর এ বইগুলো পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
প্রাচীন ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়তাঁর নিজের শিক্ষা অর্জন হয়েছিল প্রাচীন ধাঁচের মাদ্রাসায়। তিনি তাঁর সময়ের জ্ঞানী ও দক্ষ ব্যক্তিদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আধুনিক শিক্ষিত ব্যক্তিদের সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিলেন। তাই আধুনিক শিক্ষার ভাবনা ও নীতিগুলো তাঁর কাছে অপরিচিত ছিল না।
তিনি মুসলমানদের প্রাচীন শিক্ষার ইতিহাস, পাঠ্যক্রম সংস্কার ও পরিবর্তনের বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছিলেন। এ ছাড়া আধুনিক শিক্ষার নতুন প্রবণতা ও ধারা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রাচীন ও আধুনিক শিক্ষার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা বোঝেন এবং তা সমন্বয়ের চিন্তাভাবনা করতেন। তিনি চাইতেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা ও উদ্যোগের মানসিকতা তৈরি করবে।
যারা প্রাচীন শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয় মনে করত, তারা তাঁর মতের সঙ্গে একমত ছিল না। ফলে তিনি ‘প্রাচীন ও আধুনিক শিক্ষা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এতে তিনি আধুনিক শিক্ষিত গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেন, যারা প্রাচীন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না।
তাঁর মূল বক্তব্য ছিল, মুসলিম জাতির অস্তিত্ব ধর্মের ওপর নির্ভরশীল। ধর্ম ছাড়া জাতি সুরক্ষিত থাকবে না। যেহেতু ধর্ম অপরিহার্য, তাই প্রাচীন শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় শিক্ষা না হলে, তা সম্ভব নয়।
যদি কেউ বলত, ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন, তবে তা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি; শিবলি বলতেন, এমন শিক্ষা দিয়ে পবিত্র কোরআন–হাদিস রক্ষা করা সম্ভব নয়৷ এমন শিক্ষিতরা ইসলামের জটিল সমস্যা ব্যাখ্যা করতে পারবে না।
তাঁর মতে, ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাসে উত্থাপিত সমালোচনার উত্তর দিতে গভীর জ্ঞান দরকার। (আল্লামা সাইয়িদ সুলাইমান নদভি, হায়াতে শিবলি: পৃ. ৩০৪)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ.)উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আল ল ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার ফাইনালে সুপার ওভারে হারলো বাংলাদেশ ‘এ’, পাকিস্তান শাহীনস চ্যাম্পিয়ন
উত্তেজনা, নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, নখ কামড়ানো একেকটি মুহুর্ত, একেকটি বল। হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম। পেণ্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ফাইনাল ম্যাচে কখনো পাকিস্তান শাহীনসের মুখে হাসি। আবার কখনো হাসে বাংলাদেশ ‘এ’। সব সীমা অতিক্রম করে, চরম নাটকীয়তা শেষে ইতিহাসের পাতায় পাকিস্তান শাহীনস।
দোহায় এশিয়া কাপ রাইর্জিং স্টারসের ফাইনাল ম্যাচ। নির্ধারিত ২০ ওভারের ম্যাচে কেউ কাউকে হারাতে পারে না। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে পাকিস্তান শাহীনস কাছে ম্যাচ হেরে শিরোপা হারিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
মূল ম্যাচে পাকিস্তান শাহীনস আগে ব্যাটিং করতে নেমে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায়। জবাব দিতে নেমে ৯৬ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ম্যাচ পাকিস্তান শাহীনসের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দশম উইকেটে সাকলায়েন আহমেদ ও রিপন মণ্ডল সব এলোমেলো করে দেন। রুদ্ধশ্বাস ব্যাটিংয়ে ২৯ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ে যান সুপার ওভারে।
কিন্তু সুপার ওভারে প্রথমে সাকলায়েন ও পরে জিসান আলম আউট হলে বাংলাদেশ ৩ বলেই গুটিয়ে যায়। স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৬। পাকিস্তান সাদ মাসুদের বাউন্ডারিতে ২ বল আগেই জিতে নেয় সুপার ওভার। তাতে তৃতীয়বারের মতো নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতার শিরোপা।
বিস্তারিত আসছে …
ঢাকা/ইয়াসিন