অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগাগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টি পারপাস হলে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

আরো পড়ুন:

বন্ডহোল্ডাররা পেলেন পূবালী ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দিলেন ওয়াজিদ

বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, বিএসইসির কর্মকর্তাবৃন্দ, পুঁজিবাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ কর্কমর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ পালন করে আসছে।

আসাদুজ্জামান আরো বলেন, ~বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করে একটি আইন করা উচিত। একইসাথে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন রুলসকে সহজবোধ্য করে একটি জায়গাতে আনা উচিত। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস পাবে।” 

তিনি আরো বলেন, “দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি কমিশনার মো.

আলী আকবর। 

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার এবং আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ। প্রেজেন্টেশনটিতে প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রধান ধরণ বা প্রকারসমূহ, জালিয়াতি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের বিএসইসির ভিত্তিসমূহ, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, কঠোর বাজার নজরদারি ও সনাক্তকরণ, এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন, উত্তরণ বা উন্নতির জন্য সুপারিশ এবং বিনিয়োগকারীর অন্তর্দৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রেজেন্টেশনে প্রতারণা ও জালিয়াতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। প্যানেল আলোচনায় আইওএসসিও ঘোষিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ ২০২৫ এর প্রধান বার্তাগুলো তুলে ধরা হয় এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন ও দক্ষ বিনিয়োগকারীতে পরিণত করার নিমিত্তে বিএসইসি ও পুঁজিবাজার  সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

এসময় কীভাবে প্রতারণা এবং জালিয়াতি রোধ করা যায়, কী ধরনের জালিয়াতি বেশি ঘটছে ও সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়সমূহ এবং বিনিয়োগকারী বা ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কাজ করছে এবং সমস্ত সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত রুলসকে এক জায়গায় আনতেও কাজ চলছে। অনিয়ম ও জালিয়াতি রূখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেই বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্পতম সময়ে বিগত সময়ের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছিল। উক্ত কমিটির পেশকৃত ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে কমিশন এরইমধ্যে ৭টি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”


মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপক এর ভূমিকা ও দায়িত্বকে আরো সুসংহত করা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য কমিশন কাজ করছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ রূখতে বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সকল ব্রোকারদের অসংশোধনযোগ্য সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় এনেছে। তিনি দেশের পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন এবং উন্নত পুঁজিবাজার গড়তে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন রাশেদ মাকসুদ।

বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা এবং বিনিয়োগে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তাদের জন্য একটি প্রতারণামুক্ত আধুনিক ও সুরক্ষিত পুঁজিবাজার গড়ার উপর জোর দেন তিনি। এছাড়া দেশে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা আরো ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র ন ব এসইস অন ষ ঠ ন ব যবস থ আর থ ক গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি কঠিন হবে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রস্তাবিত আইপিও বিধিমালা কার্যকর হলে শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এই বিধিমালায় এমন কিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আনার কাজটি যারা করে, সেসব ইস্যু ম্যানেজারের ওপর এমন সব দায়ভার চাপানো হয়েছে, যেগুলো মেনে ইস্যু ব্যবস্থাপকেরা কোনো কোম্পানি বাজারে আনতে আগ্রহী হবেন না।

এ জন্য প্রস্তাবিত বিধিমালার কিছু বিধান সংশোধন জরুরি বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আজ বুধবার ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ নিয়ে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব মতামত তুলে ধরা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রস্তাবিত পাবলিক ইস্যু রুলসে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে তালিকাভুক্তির আগের দুই বছর কোম্পানিটিকে অবশ্যই লাভ করতে হবে। অংশীজনেরা বলছেন, এই বিধানের বদলে তালিকাভুক্তির আগের পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো দুই বছর মুনাফা করলে সেসব কোম্পানিকে বাজারে আসার সুযোগ রাখা উচিত। কারণ, নানা কারণে অনেক সময় ভালো কোম্পানিও পরপর দুই বছর মুনাফা না-ও করতে পারে।

যেসব বিধানে বেশি আপত্তি***আইপিওর অর্থে ঋণ পরিশোধের সুযোগ না রাখা। *** বাজারে আসার দুই বছর আগে থেকে নতুন শেয়ার ইস্যু না করার বিধান। *** ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর সব দায় চাপানো। *** বহুজাতিক ও ভালো কোম্পানির জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান না রাখা।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে যে অর্থ বা মূলধন সংগ্রহ করবে, তা ওই কোম্পানি ব্যাংকঋণ পরিশোধে খরচ করতে পারবে না। শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে ওই অর্থ ব্যবহার করা যাবে। বাজার অংশীজনেরা বলছেন, এই বিধান রাখা হলে বেশির ভাগ কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না। কারণ, শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন অনেকের না-ও হতে পারে। দেশের ভালো মানের ও বড় অনেক করপোরেট কোম্পানিই এ বিধানের কারণে বাজারে আসবে না। তাই বিধানটি সংশোধন করে আইপিওর টাকায় ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেছেন অংশীজনেরা। প্রয়োজনে সে ক্ষেত্রে একটি সীমা আরোপ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশের বড় বড় ভালো কোম্পানির ক্ষেত্রেও সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান নতুন আইনে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে শুধু সরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।

ডিএসই ও ডিবিএ আয়োজিত এই সভায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধিসহ বড় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও অংশ নেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দুই দশকে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি খুব কম এসেছে। ফলে বাজারে ভালো কোম্পানি কীভাবে আনা যায়, সেটি খুঁজে দেখা আমাদের সবার প্রধান উদ্দেশ্য।’

সভায় ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো কোম্পানি বাজারে আনার জন্য আইপিও বিধিমালা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শেয়ারবাজারে আসা নিয়ে কথা বলি। তাঁরা আমাদের জানান বাংলাদেশে নিয়মনীতি অনেক বেশি জটিল। এ কারণে আমাদের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। বাজারের গভীরতাও কম। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর শেয়ারবাজার অনেক বেশি শক্তিশালী। সেসব দেশের ভালো উদাহরণ ও আইনকানুনগুলো আমরাও অনুসরণ করতে পারি।’

ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, নিয়মকানুন যত বেশি সহজ হবে, তত বেশি এসব নিয়মনীতি মেনে চলতে পারবে সবাই। কিন্তু নিয়মনীতি যত বেশি জটিল হবে, তত বেশি ভুল ও মওকুফের দরকার হবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ডিএসই ও নিরীক্ষক—এই তিনটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ঠিক থাকলে শেয়ারবাজারের অর্ধেক সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে।

ডিএসইর অপর পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এত বেশি বিধিনিষেধ দিয়ে ব্যবসা হয় না। ব্যবসা হতে হবে বাজারভিত্তিক।

মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর অতিরিক্ত দায় চাপানো হয়েছে। অথচ কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর তদারকির দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার। সেই জায়গায় তালিকাভুক্তির পরের দায় ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ওপর চাপানো হলে কেউ নতুন কোম্পানি বাজারে আনতে আগ্রহী হবে না।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিএপিএলসির প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালাটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক। বিভিন্ন ধারায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ রকম একটি বিধিমালার আওতায় নতুন কোম্পানি বাজারে আনা কষ্টকর হবে।

সভায় প্রস্তাবিত বিধিমালার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান ও ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি নাফিজ-আল-তারিক। মনিরুজ্জামান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, বিধিমালায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে আসার দুই বছর আগে নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু করা যাবে না, পরিচালনা পর্ষদেও কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ আইপিওর প্রস্তুতির সময় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন, মূলধন বাড়ানো কিংবা বোনাস শেয়ার দেওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এখন এই বিধান কার্যকর হলে আগামী দু-তিন বছর শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির আইপিও আসবে না।

নাফিজ-আল-তারিক তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, বিধিমালায় সরকারি কোম্পানির জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগ বহুজাতিক ও বড় করপোরেটগুলোর জন্যও উন্মুক্ত করা উচিত। অনেক বড় কোম্পানির নতুন মূলধনের প্রয়োজন নেই। তাই তাদের বাজারে আনতে হলে সরাসরি তালিকাভুক্তিই কার্যকর পথ।

সভায় আলোচকদের বক্তব্যের পর বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফুল কবীর বলেন, নতুন এই বিধিমালা প্রণয়নে বাজারকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আগের বিধিমালা ছিল অনেকটাই নির্দিষ্ট কাঠামোর—কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। নতুন বিধিমালা বাজারচাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হচ্ছে। তাই অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি কঠিন হবে