গ্রী এসি কিনলে পাওয়া যাবে নগদ অর্থছাড় ও উপহার
Published: 7th, October 2025 GMT
গ্রী এসির ফরচুন অফার নিয়ে এসেছে ইলেকট্রো মার্ট। এই অফারের আওতায় গ্রি বা হাইকো ব্র্যান্ডের এসি কিনলে নগদ অর্থছাড়সহ আকর্ষণীয় উপহার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইলেকট্রো মার্টের সব রিটেইল ও পার্টনার বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ক্রেতারা গ্রী বা হাইকো ব্র্যান্ডের এসি কিনে উপহার পেতে পারেন। অংশগ্রহণকারীরা মোবাইলের মাধ্যমে স্পিনিং হুইল ঘুরিয়ে অর্থছাড় বা উপহার পাবেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি রাজধানীতে ইলেকট্রো মার্টের ঢাকার করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন অফার ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো.
সংবাদ সম্মেলনে মো. নুরুল আফছার বলেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে গ্রী এসি দেশের গ্রাহকদের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী ১৮০টির বেশি দেশে প্রায় ৬০ কোটি গ্রাহক গ্রী এসি ব্যবহার করে। গ্রী এসি ঘরের বাতাসের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। পরিবেশকে রাখে নির্মল, সুন্দর ও জীবাণুমুক্ত। গ্রী এসি বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব এসি উৎপাদনের শীর্ষে রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপহ র
এছাড়াও পড়ুন:
জনতুষ্টিবাদের ঢেউয়ে বিশ্বজুড়ে বিধ্বস্ত মূলধারার রাজনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রাজনীতির ব্যাপারে খুবই বিভক্ত। দেশটির ৪৩ শতাংশ নাগরিক নিজেদের দাবি করেন ‘স্বাধীন ভোটার’। তাঁরা রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক—দুটো পার্টিকেই ভালো চোখে দেখেন না। দলগুলোও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। কখনো নতুন রাজনীতিবিদ, কখনো মিডিয়ার তারকা, কখনো ছোট ছোট গোষ্ঠীর কর্মীরা সহজেই দলগুলো দখল করতে পারছেন। উদাহরণ হিসেবে ট্রাম্পের কথাই ধরুন।
প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এখন ৬০ শতাংশের বেশি মার্কিন মনে করেন যে দেশে তৃতীয় একটি বড় দল থাকা উচিত। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন নতুন দল গঠনের সুযোগ দেয় না।
সারা বিশ্বেই গণতান্ত্রিক দেশগুলোর একই অবস্থা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে গেছে, দলীয় বিরোধ বাড়ছে। এদিকে নির্বাচনও আর স্বাভাবিক নেই, হয়ে উঠছে জীবন-মরণ লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা অনেক দেশের বড় দলগুলো আজ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিছু দল তো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। অন্যদিকে জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করা পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী দলগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টির শত বছরের আধিপত্য এখন ভেঙে পড়ছে। বর্তমান লেবার সরকার খুবই অজনপ্রিয়। ১৪ বছর টোরি শাসনের পর ক্ষমতায় এলেও তারা এখনো জানে না কীভাবে দেশ চালাতে হবে। অর্ধেকের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের পদত্যাগ করা উচিত। যদি এখনই নির্বাচন হতো, নিগেল ফারাজের নেতৃত্বে ডানপন্থী রিফর্ম পার্টিই সম্ভবত সরকার গঠন করত।
ফ্রান্সেও একই চিত্র। ওই দেশে আগে সোশ্যালিস্ট ও রিপাবলিকানরা ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু ২০১৭ সালে এমানুয়েল মাখোঁ মধ্যপন্থী দল গড়ে ক্ষমতায়
আসার পর তাদের পতন শুরু হয়। এদিকে গত ২০ বছরে মারিন লো পেনের ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দল ন্যাশনাল র্যালি এখন প্রায় সরকার গঠনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
জার্মানিতেও একই সংকট। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বহুদিনের শক্তিশালী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি খারাপ ফল করেছে। বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস কোনোভাবে বাম বা ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদী দলগুলোকে পাশে না নিয়েও অল্প ব্যবধানে সরকার গঠন করেছেন। এদিকে চরম ডানপন্থী দল এএফডি এবার ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
নেদারল্যান্ডসে ২০২৩ সালের নির্বাচনে মুসলিমবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত ‘পার্টি ফর ফ্রিডম’ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল। স্ক্যান্ডিনেভিয়া বা উত্তর ইউরোপের দেশগুলোতেও একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কল্যাণমূলক ব্যবস্থা ও আয়বৈষম্য কম হওয়ার পরও সেখানে জনতুষ্টিবাদী দলগুলো বেড়ে উঠেছে। সুইডেনে অভিবাসনবিরোধী সুইডিশ ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ফিনল্যান্ডেও ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদী দল জোট সরকারে আছে।
ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমা পিকেটি আধুনিক রাজনীতিকে দুই ভাগে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘ব্রাহ্মণ বামপন্থী’ ও ‘ব্যবসায়ী ডানপন্থী’। ২০টির বেশি গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরন দেখা যায়। গবেষক আন্না গ্রিজমালা-বুসের মতে, যেসব অঞ্চলে মূলধারার দলগুলো কোনো পরিষ্কার বিকল্প দিচ্ছে না, সেখানেই ডানপন্থী জনতাবাদীদের জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে।ইউরোপের বাইরেও এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জাপানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে বহুদিনের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। অভিবাসনবিরোধী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ‘সানসেইতো’ উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্বজুড়ে জনতুষ্টিবাদী দলগুলো নিজেদের উপস্থাপন করছে ‘জাতীয় সংস্কৃতির রক্ষক’ হিসেবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান প্রতিযোগিতা ছিল অর্থনৈতিক উন্নতির লাভ শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে কীভাবে ভাগ হবে, তা নিয়ে। বড় বড় জনপ্রিয় দল তখন ছিল জনগণভিত্তিক। বামপন্থী দলগুলো শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। ডানপন্থী অনেক দল ধর্মালয়গুলোতে প্রভাবশালী ছিল। তাঁদের দৃঢ় অবস্থান ছিল সাম্যবাদের বিপক্ষে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভিত্তিগুলো ভেঙে পড়তে শুরু করে।
১৯৭০-এর দশকে মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রোনাল্ড ইনগেলহার্ট ‘পোস্টম্যাটেরিয়ালিজম’ বা উত্তর-বস্তুবাদ তত্ত্ব দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, অর্থনৈতিক উন্নতি বাড়লে মানুষ কেবল দৈনন্দিন প্রয়োজন নয়, পরিচয়, লিঙ্গ ভূমিকা, বৈচিত্র্যসহ নানা ধরনের মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে। পোস্টম্যাটেরিয়ালিস্ট মূল্যবোধই রাজনীতির নতুন প্রধান দ্বন্দ্বকে ব্যাখ্যা করে। যা আর শুধু বাম বনাম ডান নয়; বরং জাতীয় সার্বভৌমত্ব, সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা ও সমাজে অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি নিয়ে গঠিত।
ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমা পিকেটি আধুনিক রাজনীতিকে দুই ভাগে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘ব্রাহ্মণ বামপন্থী’ ও ‘ব্যবসায়ী ডানপন্থী’। ২০টির বেশি গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরন দেখা যায়। গবেষক আন্না গ্রিজমালা-বুসের মতে, যেসব অঞ্চলে মূলধারার দলগুলো কোনো পরিষ্কার বিকল্প দিচ্ছে না, সেখানেই ডানপন্থী জনতাবাদীদের জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে একসময় ‘প্রগতিশীল যুগ’ তৈরি হয়েছিল জনগণের ব্যাপক ক্ষোভের ফলে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো সেই ক্ষোভকে নিজেদের মধ্যে জায়গা করে দিয়েই টিকে ছিল। আজ যে নতুন জনতুষ্টিবাদী যুগ এসেছে, সেটিও ঠিক একই ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে।
ইদরিস কাহলুন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দ্য ইকোনমিস্ট–এর সাবেক ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ
দ্য আটলান্টিক থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত