‘ঘুষ নিতে’ সহকারী নিয়োগ, বেনাপোলের সেই রাজস্ব কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
Published: 7th, October 2025 GMT
অভিযানের সময় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে জনরোষে পড়ার পর বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। ধরা হয়েছে তাঁর সহযোগীকেও, যাঁর মাধ্যমে ওই রাজস্ব কর্মকর্তা ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আজ মঙ্গলবার শামীমা এবং তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের খবর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এক দিন আগে বেনাপোল কাস্টম হাউসে অভিযানের সময় শামীমাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিলে স্থানীয় মানুষেরা দুদক কর্মকর্তাদেরও অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমার সঙ্গে গ্রেপ্তার তাঁর সহযোগী হাসিনুর রহমান স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মী।
দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে বেনাপোল বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে উদ্ধার করা টাকা জব্দ দেখানো হয়েছে।
দুদকের অভিযোগ, রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমদানি পণ্যের শুল্ক মওকুফ করে দিয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নিতেন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করতেন হাসিবুর রহমান।
গতকাল সোমবার ছদ্মবেশে বেনাপোল কাস্টম হাউসের আশপাশে অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। অভিযানের সময় তথ্য আসে, শামীমা আক্তারের হয়ে নিয়মিত ঘুষের টাকা সংগ্রহ করতেন হাসিবুর রহমান। সেই টাকা মুঠোফোনে আর্থিক সেবা দেওয়া এক এজেন্টের দোকানে রেখে দিতেন তিনি। পরে ওই রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে দিতেন।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে কাস্টম হাউসের ফটকের কাছে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঘুষের অর্থসহ হাসিবুর রহমানকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে দুদকের আভিযানিক দল। পরে তাঁকে বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি এর আগে জানিয়েছিলেন, জব্দ করা টাকার নম্বর মিলিয়ে তালিকাবদ্ধ করতে সোমবার রাত সাড়ে আটটা বেজে যায়। একপর্যায়ে দুদক কর্মকর্তারা রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে কাস্টমস কমিশনারের জিম্মায় রেখে কাস্টম হাউসের প্রধান ফটকের সামনে রাখা গাড়িতে ওঠেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে শতাধিক লোক গাড়িটি আটকে ফেলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন দুদক কর্মকর্তারা।
খবর পেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর রাত সোয়া নয়টার দিকে বেনাপোল বন্দর থানা থেকে পুলিশ কাস্টম হাউসে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে। এরপর পুলিশি পাহারায় গাড়িটি যশোরের উদ্দেশে বেনাপোল কাস্টম হাউস ছেড়ে যায়।
মঙ্গলবার যশোর শহরের কারবালা রোড এলাকা থেকে রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমাকেও গ্রেপ্তার করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হাসিবুরের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগের কথা স্বীকার করেন। টাকা অফিসে আনার নির্দেশ দেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেন বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, আসামিদের কাছে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ও তথ্য রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে।
আরও পড়ুনবেনাপোল কাস্টমসে দুদকের অভিযান, ফেরার পথে দুদকের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ব র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
লিও তলস্তয়ের গ্রামে
আমি এখন যে গ্রামে এসেছি, সেই গ্রামে ১৮২৮ সালে লেখক লিও তলস্তয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাশিয়ার ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নাম গ্রামটির। এটি আসলে তাঁদের পারিবারিক জমিদারির একটি অংশ। এখানে তিনি জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছেন। এখানেই লিখেছেন অমর উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ‘আনা কারেনিনা’ এবং অসংখ্য গল্প।
তলস্তয়কে আইন পড়তে কাজান শহরে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু পড়তে তাঁর ভালো লাগেনি। জমিদারি ছিল, তাই রোজগারের চিন্তাও করতে হয়নি। মাঝখানে সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আট বছর মস্কোতে একটি বাড়ি কিনে বসবাস করেছিলেন।
লিও তলস্তয় শেষ জীবনে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। একসময় গৃহত্যাগ করেছিলেন। ১৯১০ সালে ৮২ বছর বয়সে আস্তাপোভো রেলস্টেশনে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে একাকী, আত্মীয়, বন্ধু থেকে দূরে, নীরবে তিনি দেহত্যাগ করেন। এরপর তাঁকে ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় এনে সমাহিত করা হয়।
ইয়াস্নায়া পলিয়ানা গ্রামে আমি যখন পৌঁছালাম, তখন রোদ ঝলমল করছে। গত কয়েক দিন খুব বৃষ্টি পড়েছে মস্কো শহরে। মস্কো থেকে আমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে ২২০ কিলোমিটার। সরাসরি মস্কো থেকে তলস্তয়ের গ্রামে আসার কোনো ট্রেন বা বাস নেই। আমাকে ট্রেনে করে আসতে হয়েছে প্রথমে তুলা শহরে৷
ট্রেনে করে আসার পথে রাশিয়ার সবুজ গ্রামের যে রূপ আমি দেখেছি, তার তুলনা হয় না। পথের পাশে ফুটে আছে হলুদ বুনো ফুল আর হঠাৎ হঠাৎ করে একটা বা দুটো দোচালা বাড়ি। মাঝে পড়ে গেল একটা নদী, আবার এসে গেল ঘন সবুজ জঙ্গল। এমন অসামান্য প্রকৃতি যে দেশের আছে, সে দেশের প্রতি এমনিতেই মায়া জন্মে যায়।
রাশিয়ার ইয়াস্নায়া পলিয়ানা গ্রামে ১৮২৮ সালে লেখক লিও তলস্তয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি তাঁদের পারিবারিক জমিদারির একটি অংশ। এখানে তলস্তয় জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছেন। এখানেই লিখেছেন অমর উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ‘আনা কারেনিনা’।মাঝখানে ধূসর লম্বা পথ আর দুপাশে ঘন বনানী