শ্রম আইন সংশোধনীতে কমপক্ষে ১০ শ্রমিক নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন করার বিধান চান শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতারা। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকসংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন স্কপ নেতারা। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল কাদের হাওলাদার, স্কপ নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, রাজেকুজ্জামান রতন, চৌধুরী আশিকুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা, শামিম আরা, মাহবুব আলম, চট্টগ্রাম স্কপের সমন্বয়ক নুরুল্লা বাহার প্রমুখ।

স্কপের নেতারা বলেন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন, শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮-র আলোকে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, ইপিজেডসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য একই আইন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন, রেশনিং ব্যবস্থা, শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা, পেনশন ইত্যাদি দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে।

শ্রম আইন সংশোধনে স্কপ সুপারিশ করেছিল। তার মধ্যে আইনের ১০১টি ধারা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে দেখা গেছে, অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে শুধু ট্রেড ইউনিয়ন গঠন–সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা কেন্দ্রীভূত রয়েছে।

আগে স্কপ ২০ জন সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের করার প্রস্তাব দেয়। তবে সরকার ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্যসংখ্যার ধাপ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়ায় স্কপ সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্রস্তাব তুলে ধরে।

যে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকসংখ্যা ২১-৫০ জন, সেখানে ১০ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের বিধান চায় স্কপ। এ ছাড়া শ্রমিকসংখ্যা ৫১-১০০ জন হলে ১৫ জন, ১০১-২০০ জন হলে ২০ জন, ২০১-৪০০ জন শ্রমিক হলে ৩০ জন, ৪০১ -৫০০ জন শ্রমিক হলে ৪০ জন, ৫০১ থেকে ১ হাজার জন শ্রমিক হলে ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন নিবন্ধন চায় স্কপ।

কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকসংখ্যা ১ হাজার ১ থেকে ৩ হাজার হলে ১০০ জন সদস্য এবং ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক হলে ৩০০ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন গঠনের বিধান চায় স্কপ। তাদের প্রস্তাব, কোনো প্রতিষ্ঠানে একটি ইউনিয়ন থাকলে সেটিই সিবিএ হিসেবে শ্রমিকের পক্ষে দর–কষাকষি করবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে একাধিক ইউনিয়ন থাকলে সিবিএ নির্বাচন করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া ইউনিয়ন সিবিএ হিসেবে দর–কষাকষি করবে।

সংশোধিত শ্রম আইনে আইএলও কনভেনশন ৮৭, ৯৮–এর প্রতিফলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, স্থায়ী কাজে অস্থায়ী ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আইএলও কনভেনশন ১২১ মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ, চাকরি এবং সামাজিক নিরাপত্তার সুরক্ষা, ইপিজেডসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য একই আইন করার দাবি জানান স্কপ নেতারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য নিয়োগ সুবিধায় ঢাকায় ওইপি উদ্বোধন

ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি) উদ্বোধন করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করা হয়।

আরো পড়ুন:

সোনালী আঁশ লিমিটেডের মুনাফা বেড়েছে ১৭.৮৮ শতাংশ

শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ওয়ালটন

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে।

জাতীয় সমন্বিত এই ডিজিটাল গেটওয়ে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পক্ষকে এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করবে। এর মধ্যে রয়েছেন বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মী, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি, ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি), টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বিদেশি নিয়োগকর্তা, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে এটি দালালচক্রের ভূমিকা কমাতে এবং কর্মীদের জন্য অভিবাসন ব্যয় হ্রাসে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মি. ডেইপাক এলমার এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনন।

এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাস, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ সংস্থা, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি, নিয়োগদাতা সংস্থার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া।

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং কার্যকর অভিবাসনের জন্য এই উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। দেশের জন্য তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। তাদের এই যাত্রা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং সম্মানজনক করার দায়িত্ব আমাদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই প্ল্যাটফর্মে আরো নতুন ফিচার যুক্ত করতে পারব, যা শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও সরকার, সব পক্ষের জন্যই কাজে আসবে।”

পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বলেন, “ন্যায্য ও স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গন্তব্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “ওইপি গন্তব্য দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনন বলেন, “ওইপি মূলত ন্যায্য নিয়োগ নীতিমালাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য ও সেবাকে কেন্দ্রীভূত করায় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি আরো ভালোভাবে তদারকি করা সম্ভব হবে, কর্মীরা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবে এবং সামগ্রিকভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক হবে।”

বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মি. ডেইপাক এলমার বলেন, “শুধু প্রযুক্তি দিয়েই অভিবাসন শাসন ব্যবস্থার সমস্যাগুলো সমাধান হবে না। এই প্ল্যাটফর্মের প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, রিক্রুটিং এজেন্সি, নিয়োগকর্তা এবং অভিবাসী নিজে কতটা দায়বদ্ধতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এটিতে যুক্ত হয় এবং ব্যবহার করে তার ওপর। সব অংশীজনের প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতাই শেষ পর্যন্ত এর কার্যকারিতা নির্ধারণ করবে।”

সমাপনী বক্তব্যে সিনিয়র সচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “ওইপি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একটি প্রকল্পের সমাপ্তি নয়, বরং শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থাপনাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা হলো। আমরা প্ল্যাটফর্মটির ফিচার আরো সমৃদ্ধ করব, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় আরো সুদৃঢ় করব এবং অংশীজনদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাব, যাতে অভিবাসী কর্মীরা মর্যাদা, নিরাপত্তা ও আস্থার সঙ্গে তাদের বিদেশযাত্রা পরিকল্পনা করতে পারে।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরাপদ অভিবাসন ও ন্যায্য নিয়োগ সুবিধায় ঢাকায় ওইপি উদ্বোধন