জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে দুটি বিকল্প সুপারিশ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। একটি হলো জুলাই সনদ নিয়ে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট করা। অন্যটি হলো আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেওয়া। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করবে আগামী জাতীয় সংসদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই সূত্রমতে, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য খসড়াটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। আজ বুধবার সকালে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন মনে করে, সংবিধান–সম্পর্কিত যেসব সংস্কার প্রস্তাব জুলাই সনদে আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসবে। নিয়মিত সংসদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ আছে। এভাবে সংবিধান সংশোধন করা হলে পরে এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু যদি আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকবে না। সংস্কার টেকসই করতে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনগণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের ভিন্ন মত০৫ অক্টোবর ২০২৫গণভোট হয়ে গেলে সংসদকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া বা অন্য কিছু করার প্রয়োজন হবে না। কারণ, গণভোটের মাধ্যমে জনগণ ম্যান্ডেট দেবে।সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, কমিশনের চিন্তা হলো আগামী সংসদকে ‘কনস্টিটিউশন রিফর্ম অ্যাসেম্বলি’র (সংবিধান সংস্কার সভা) ক্ষমতা দেওয়া। আগামী নির্বাচনের আগে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এ ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদের কাজ হবে দুটি—একটি জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার করা, আরেকটি নিয়মিত সংসদের কাজ পরিচালনা করা।

গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ গ্রহণ করা হলেও এসব বাস্তবায়নের জন্য আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কেউ কেউ। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, গণভোটে জুলাই সনদ গৃহীত হলে তখন সংসদকে আর বিশেষ ক্ষমতা না দিলেও চলবে।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের (সংসদের দ্বৈত ভূমিকা) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এনসিপি বলেছিল গণপরিষদ গঠনের কথা। তবে গণপরিষদ নাম না দিয়ে আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভার ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে ঐকমত্য কমিশন।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে সংবিধান-সংক্রান্ত কিছু সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। বাস্তবায়ন পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে একাধিক বিকল্প সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।

অবশ্য বাস্তবায়ন প্রশ্নে দলগুলোর মতভিন্নতা আগের চেয়ে কমে এসেছে। গত রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় দলগুলো সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে একমত হয়। কিন্তু গণভোট কি জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে নাকি আগে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, গণভোটের আগে সংবিধান আদেশ জারি করতে হবে কি না—এসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। আজ বুধবার দুপুরে এ বিষয়ে আবার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে সংবিধান-সংক্রান্ত কিছু সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।বিএনপি, জামায়াতের ভিন্ন অবস্থান

সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করার বিকল্প নেই বলে মনে করে বিএনপি। আর গণভোট হলে পরবর্তীতে সংসদকে সংবিধান সংস্কারের জন্য বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও মনে করে দলটি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করার পক্ষে বিএনপি। রোববারের আলোচনায় প্রায় সব দলই একই মত দিয়েছিল। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট হবে।

আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার বিষয়ে কমিশনের চিন্তার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশন এরকম চিন্তা করতে পারে। কিন্তু গণভোট হয়ে গেলে সংসদকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া বা অন্য কিছু করার প্রয়োজন হবে না। কারণ, গণভোটের মাধ্যমে জনগণ ম্যান্ডেট দেবে। সংসদ সেটা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। তিনি মনে করেন, এখানে জটিলতা তৈরি করা ঠিক হবে না।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, জাতীয় নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করা হলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চায়। আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে একাধিক ব্যালট নিয়ে ভোটাররা ঝামেলায় পড়বেন। ভোট গ্রহণে সময় বেশি লাগবে, ভোট পড়ার হার কমে যেতে পারে। এ ছাড়া অতীতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে পরিবেশ শতভাগ সুষ্ঠু থাকে না। হাঙ্গামার মধ্যে জুলাই সনদ নেওয়া হলে নানা ধরনের ঝামেলা তৈরি হবে। তাঁরা মনে করেন, নভেম্বরেই গণভোট করা সম্ভব।

আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার বিষয়ে হামিদুর রহমান বলেন, ‘আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে ‘সংবিধান সভা’ হিসেবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে নিয়মিত সংসদ কাজ করবে। তার আগে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এটা আমাদেরই প্রস্তাব।’

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বৈঠক করবে ঐকমত্য কমিশন। এরপর বেলা দুইটায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। আজও মূলত কমিশন দলগুলোর মতামত শুনবে। প্রয়োজন হলে কমিশন যে দুটি বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে, সে দুটি প্রস্তাব আলোচনায় উপস্থাপন করা হবে।গণভোটের আগে লাগবে আদেশ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে গণভোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ আলোচনা শেষ হয়নি। আজ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আগে আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। গতকালের আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, গণভোট করতে হলে তার আগে জুলাই সনদ নিয়ে রাষ্ট্রপতির একটি আদেশ জারি করতে হবে। নাহলে প্রশ্ন উঠবে কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে। বিদ্যমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাই আগে সংবিধান আদেশ বা যে নামেই হোক একটি আদেশ জারি করতে হবে। সে আদেশে কী কী থাকবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এ নিয়ে আজ আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হবে।

গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে, কয়টি প্রশ্ন থাকবে, সেটি নিয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে কয়েকটি মত আছে। জুলাই সনদের সব কটি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) বাস্তবায়ন করা হবে কি না, এই প্রশ্ন রাখা যেতে পারে। আরেকটি মত হলো যেগুলোতে সব দল একমত, সেগুলো নিয়ে একটি প্যাকেজ আর যেগুলোতে ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে আরেকটি প্যাকেজ করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব যেমন সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন, নারী আসনে নির্বাচন প্রশ্নে আলাদা প্যাকেজ করা যেতে পারে। এসব নিয়ে আজ আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে ‘সংবিধান সভা’ হিসেবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে নিয়মিত সংসদ কাজ করবে। তার আগে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এটা আমাদেরই প্রস্তাব।হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামী

গণভোটের আগে কেন সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রয়োজন হবে, তার ব্যাখ্যায় ঐকমত্য কমিশনের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এখন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আগে গণভোটের বিধান ছিল। সেটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাতিল করা হয়। সম্প্রতি তা পুনর্বহাল করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু এটি এখন সংবিধানের অংশ কি না, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। তা ছাড়া ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধানের সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে গণভোটের কথা আছে। এখন গণভোটের জন্য ১৯৯১ সালের যে আইন আছে, তা দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা দেওয়া যায়। সংবিধান আদেশের কোনো প্রয়োজন নেই। এ ধরনের আদেশ জারি করার এখতিয়ারও সরকারের নেই।

এ প্রসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের ওই সদস্য বলেন, শুধু আরপিও সংশোধন করে গণভোট আয়োজন করা যাবে না। ইতিমধ্যে ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন করে সেখানে তাদের কাজের মধ্যে গণভোট আয়োজন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকার কোন ক্ষমতাবলে গণভোট দেবেন? আগে সরকারকে আইনানুগভাবে এই ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তাই গণভোট দিতে হলে আগে একটি আদেশ লাগবে।

আজই আলোচনা শেষ করা যাবে বলে কমিশন আশা করেছিল। তবে এখন তারা মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজকের পর আবার বসতে হতে পারে। সেদিন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হতে পারে।আজ আবার আলোচনা

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বৈঠক করবে ঐকমত্য কমিশন। এরপর বেলা দুইটায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। আজও মূলত কমিশন দলগুলোর মতামত শুনবে। প্রয়োজন হলে কমিশন যে দুটি বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে, সে দুটি প্রস্তাব আলোচনায় উপস্থাপন করা হবে।

আজই আলোচনা শেষ করা যাবে বলে কমিশন আশা করেছিল। তবে এখন তারা মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজকের পর আবার বসতে হতে পারে। সেদিন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সেটি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে গণভোটে যাওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটা আদেশের মাধ্যমে যেতে হবে। সনদ বাস্তবায়নের বিকল্প প্রস্তাব নিয়েও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, গণভোটের বিষয়ে ইতিমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। তাঁরা আজকের আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবেন অন্য বিষয়গুলোয় দলগুলো কতটা কাছাকাছি এসেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব ন য় জ ল ই জ ত য় সনদ জ ল ই সনদ র ব শ ষ ক ষমত প রথম আল ক গণভ ট র ব র ক ষমত ভ ন নমত গণভ ট ক ক জ কর ব কল প র জন য ব এনপ গতক ল স সদক ধরন র সদস য ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্বোধ্য প্রস্তাবে গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার

ঐকমত্য একটি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরকার। সাধারণ মানুষের চাহিদাটি হলো একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনীতি ভালো থাকা। এই দুটি বৃহত্তর জাতীয় চাহিদা মাথায় রেখেই আমাদের সমাধান খোঁজা দরকার।

আমরা দেখছি, একটু ঐকমত্য হলো, আবার ঐকমত্যের ঘাটতি হলো—এখানে পরীক্ষা সবাই দিচ্ছে। কমিশন তার দক্ষতা ও নিয়তের পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছার পরীক্ষা দিচ্ছে। জনগণ এখানে অনুপস্থিত নয়। জনগণ যমুনায় আমন্ত্রিত হচ্ছে না, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া তিনটি গন্তব্যের দিকে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত। সেটি হলো, সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত। একটি হলো, ব্যাপক আয়োজন সত্ত্বেও কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল না আসা। অন্যটি হলো, হযবরল অবস্থা তৈরি হওয়া। এটির মানে হলো, এগোনোর পথ অপরিষ্কার।

আরও পড়ুনসংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে কমিশন ৫৭ মিনিট আগে

একটা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। যাঁরা ঐকমত্যের প্রক্রিয়ায় আছেন, ঐকমত্যের কথা বলছেন, কখনো কখনো তাঁরা একে অপরকে অবিশ্বাস করছেন। অবিশ্বাসের মধ্যে আমরা ঐকমত্য তৈরি করতে চাইছি, এটা তো স্ববিরোধী ব্যাপার।

আমরা দেখছি, যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন ছিল, সেটার বদলে গণভোটের দিকে যাত্রা করা হচ্ছে। কারণ, নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারছে না। গণভোট কখন হবে, সেটা নিয়েও একেক পক্ষের মতামত একেক রকম। এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী জনগণ চরম বিরক্ত ও হতাশ হবে। কারণ, জনগণ চায় সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। অন্য কোনো গন্তব্য যেন তৈরি না হয়।

হযবরল অবস্থা তৈরি হলে দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না। কোনোরকম উত্তরণ হলেও সমস্যার সমাধান ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে না। সে জন্য আশা করব, সদিচ্ছার পরীক্ষায় রাজনৈতিক পক্ষগুলো যেন উত্তীর্ণ হয়। হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কা যেন তারা বুঝতে পারে।

এখন সামনে এসেছে গণভোটের প্রসঙ্গ। এটা একধরনের মতামত জরিপ। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারে (পিপিআরসি) আমাদের মতামত জরিপ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। এটাকে পন্থা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনগণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের ভিন্ন মত০৫ অক্টোবর ২০২৫

কোনো জটিল ও দুর্বোধ্য প্রস্তাবের ওপর গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার করার শামিল। এতে হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কাই বেশি। গণভোটের মাধ্যমে মানুষকে তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা যদি এলিটদের (অভিজাত শ্রেণি) থাকে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। গণভোটের ক্ষেত্রে জটিল প্রস্তাব পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ আমরা দেখেছি, জটিল বিষয়ে মতামত জরিপে প্রকৃত ফলাফল আসে না।

গণভোটের ক্ষেত্রে প্রশ্নটি যদি প্রাক্‌-ধারণানির্ভর হয়, তাহলে কিন্তু সেটা সৎ গণভোট হবে না। গণভোট সৎ হওয়া দরকার। কী চাওয়া হচ্ছে, সেটা কি মানুষের কাছে পরিষ্কার? মানুষ কি জুলাই সনদ সম্পর্কে জানে? মানুষ কি আইনি ভিত্তি দিলে কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা রাখে? শহরের মানুষ কিছু কিছু জানতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরা সেটা সম্পর্কে কি ধারণা রাখে?

মতামত জরিপের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ‘লিডিং কোশ্চেন’ সমস্যা। আমি যেভাবে উত্তর চাই, সেভাবেই প্রশ্নটি সাজালাম। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত০৫ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের কার্যকর ও সম্মানজনক পরিসমাপ্তি যদি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে হয়ে যায়, তারপর আরেকটি ঐকমত্য দরকার হবে। সেটিকে আমি বলছি ‘অন্য ঐকমত্য’। এর জন্য গণভোটের দরকার নেই। অন্য ঐকমত্য হলো, রাজনৈতিক দলগুলোকে গণ ঘোষণার মাধ্যমে বলতে হবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো কী কী করবে। এ বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে সেটা থাকতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারব, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ঐকমত্য যেমন হয়েছে, তেমনটি ‘অন্য ঐকমত্যও’ হয়েছে।

মানুষ যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান করেছে, সেটার আকাঙ্ক্ষাকে কোনোভাবেই বিসর্জন দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের অন্যতম একটি জাতীয় অর্জন। কাগজে-কলমে যা-ই হোক, আইন হোক, ধারা যুক্ত হোক, সেটা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়। এর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু যেটা ছুড়ে ফেলা যায় না, সেটা হলো মানুষের আকাঙ্ক্ষা, পরিবর্তনের প্রত্যাশা। জনপরিসরে সুস্পষ্ট অঙ্গীকারে শামিল হলে সেখান থেকে ফিরে যাওয়াটা কঠিন।

হোসেন জিল্লুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান

[মতামত লেখকের নিজস্ব]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্বোধ্য প্রস্তাবে গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার
  • জনগণ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চায়: সারোয়ার তুষার
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য: এবি পার্টি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে একমত সব দল: আলী রীয়াজ
  • এনসিপির সঙ্গে খেলাফত আন্দোলনের মতবিনিময়, কিছু বিষয়ে ঐকমত্য
  • ঐকমত্য না হলে সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব দেবে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের শাসন ফেরাতে হবে: আমীর খসরু
  • শিগগির সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে ঐকমত্য কমিশন
  • শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন