ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৃদ্ধ মা-বাবাকে হত্যার পর শোবার ঘরের মেঝেতে অন্তত চার ফুট গভীর গর্তে পুঁতে রাখা হয়। এ ঘটনায় নিহত দম্পতির একমাত্র ছেলেকে আটকের পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মেঝে খুঁড়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বাঁশকুড়ি গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০) ও তাঁর স্ত্রী বানোয়ারা বেগম (৬০)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের একমাত্র ছেলে রিয়াদ হোসেন ওরফে রাজুকে (২৫) বেলা তিনটার দিকে আটক করে পুলিশ।

স্বজন ও এলাকাবাসী বলছেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছেলে টাকা না পেয়ে বাবাকে কুপিয়ে ও মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর অনলাইন জুয়া ও মাদক বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃদ্ধ মোহাম্মদ আলী স্থানীয় তাজুল ইসলামের মাছের খামারে কাজ করতেন। আজ কাজে না যাওয়ায় মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। আজ বেলা তিনটার দিকে তাঁর খোঁজে কয়েকজনকে নিয়ে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে যান প্রতিবেশী এনামুল হক। তখন বাড়িতে ঘরের সামনে বসে ছিলেন মোহাম্মদ আলীর ছেলে রিয়াদ হোসেন। তাঁর কাছে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে ‘জানি না’ বলেন। পরে একপর্যায়ে বলেন, ‘মেরে ফেলেছি।’ পরে পুলিশ এসে রিয়াদকে আটক করার পর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিকেলে বাঁশকুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দম্পতির বাড়ি ঘিরে এলাকাবাসী ভিড় করছেন। একসঙ্গে জোড়া খুনের ঘটনা গ্রামবাসী আগে কখনো দেখেননি। গ্রামের লোকজন হত্যাকাণ্ডের জন্য অনলাইন জুয়াকে দায়ী করেন। তাঁরা বলেন, রিয়াদ আগে ব্যবসা করলেও অন্তত পাঁচ বছর ধরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তিন লাখ টাকার জন্য গত কয়েক দিন ধরে মা-বাবাকে চাপ দিচ্ছিলেন।

রিয়াদের বড় বোন জরিনা খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘যত দিন ধইরা জুয়া খেলা শুরু করছে, তহন থাইক্যা টেহার লাইগ্যা চাপ দিত। টেহার লাইগ্যা আমার মা–বাপরে মাইরালছে।’

হত্যাকাণ্ডের খবরে ছুটে আসেন বানোয়ারা বেগমের বোনের ছেলে আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘রিয়াদ অনলাইনে জুয়া খেলত, হেই কারণে সময়ে সময়ে টেহা চাইত। টেহা চাওনের পর হয়তো দিছে না, হেই কারণেই মারছে।’

স্থানীয় শহীদ মণ্ডল বলেন, ‘মোবাইলে জুয়া খেলত রিয়াদ। বাপে টেহাপয়সা ঠিকমতো দিছে না, তাই মা-বাপরে মাইরালছে। ছেলে সন্তানে বাপ-মারে মাইরালব এটা দুঃখজনক ঘটনা। জুয়াটা এখন আমাদের জন্য দুর্যোগ হয়ে গেছে।’

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাকে এবং রাত দুইটার দিকে বাড়িতে ফিরলে বাবাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলে। পরে দুজনকে একই স্থানে পুঁতে রাখা হয়। বাবার পিঠ, মাথা ও মুখ কুপিয়ে জখম করা হয়।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সন্তান নৃশংসভাবে তাঁর মা-বাবাকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ছেলে মা–বাবার কাছে টাকা চাইছিলেন ব্যবসার কথা বলে। কিন্তু তিনি জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁরা হেফাজতে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য় য় আসক ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে রাতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

ময়মনসিংহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বুধবার রাত তিনটার দিকে ডাকসু সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহ নগরের ঢোলাদিয়া এলাকার বাসায় ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনডাকসু সদস্য রাফিয়ার ময়মনসিংহের বাড়িতে গভীর রাতে ককটেল নিক্ষেপ২০ নভেম্বর ২০২৫

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরের কেওয়াটখালী এলাকার মো. মাসুদ রানা (৪৫), আকুয়া বোর্ডঘর এলাকার মো. আরিফ (৩০), মো. বিপুল (২১), আকুয়া ওয়্যারলেস গেট এলাকার মো. রাজন (১৯)। চারজনই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কোতোয়ালি মডেল থানার সমন্বয়ে পরিচালিত যৌথ অভিযানে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ককটেল ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে রাফিয়ার ভাই খন্দকার জুলকারনাইন কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বুধবার রাত ২টা ৫০ থেকে তিনটার মধ্যে বিকট শব্দে তাঁদের বাসার সবার ঘুম ভেঙে যায়। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার নিচে এসে দেখা যায়, বাসার গেটের একাংশ পুড়ে কালো হয়ে আছে এবং গেটের সামনে কিছু পোড়া ছাই পাওয়া যায়। বাসার গেটের আশপাশে কেরোসিন ও পেট্রলের গন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাসভবনের গেটে দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিসংযোগের ঘটনাটির পরপর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে গ্রেপ্তার করে আজ শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌরভ শুরু করেছিলেন দুই হাজার টাকায়, এখন মাসে লাখ টাকার পণ্য বেচেন
  • সাড়ে ৮ ঘন্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
  • ময়মনসিংহে রেললাইন অবরোধ অব্যাহত, দুর্ভোগ চরমে
  • বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ময়মনসিংহে ফের রেল অবরোধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
  • বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ
  • বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ
  • ভূমিকম্পে হুড়োহুড়িতে আহত ২৯ শ্রমিক এখনো হাসপাতালে
  • শ্রীপুরে ভূমিকম্পে আহত ২৯ জনের চিকিৎসা চলছে, কারখানার কার্যক্রম স্বাভাবিক
  • ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে রাতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪