রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার বাজার থেকে এক কেজি করে বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা ও পেঁপে কেনেন। এই চার পদের সবজি কিনতে তাঁর মোট খরচ হয় ৩২০ টাকা।

মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে মোটামুটি সব জিনিসের দামই বেশি। বিশেষ করে সবজির দাম। আগে এক হাজার টাকার বাজার করলে এক সপ্তাহ চলে যেত। এখন দেড় হাজার টাকায়ও সপ্তাহ পার হতে চায় না। চার পদের সবজি কিনতেই ৩০০ টাকা শেষ হয়ে গেল।’

ভারী বৃষ্টি ও সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহেও ঘাটতি তৈরি হয়। এতে গত সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে যায়। সপ্তাহ শেষে সেই দাম কিছুটা কমেছে। তবে সার্বিকভাবে সবজির বাজার চড়া। বেশি দামে সবজি কিনতে গিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

চার পদের সবজি কিনতেই ৩০০ টাকা শেষ হয়ে গেলমাহমুদ

এ ছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কিছুটা বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের দাম। অন্যান্য পণ্য আগের দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন সরবরাহ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। এতে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়; বাড়ে দাম। এ ছাড়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিন-চার দিন ছুটি ছিল। এ সময় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ ও টমেটো আমদানি কমায় পণ্য দুটির দামও বেড়ে যায়। অবশ্য সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ বাড়লে মরিচ ও টমেটোর দাম কমে আসে।

দুই সপ্তাহ আগে বাজারে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১৮০-২০০ টাকা। গত সপ্তাহে মরিচের দাম কেজিতে প্রায় ২০০ টাকা বেড়ে যায়। তাতে এক কেজি মরিচের দাম ৪০০ টাকায় উঠেছিল। এরপর সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে আসে। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর পাড়া-মহল্লায় মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা দরে।

ভারত থেকে কাঁচা মরিচ ও টমেটো আমদানি কমায় পণ্য দুটির দামও বেড়ে যায়। অবশ্য সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ বাড়লে মরিচ ও টমেটোর দাম কমে আসে।

অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া। বেগুনের কথা ধরা যাক। বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো ধরনের বেগুন কেনা যায় না। এর মধ্যে তাল বেগুনের কেজি এখন ২০০-২২০ টাকা; আর সাধারণ বেগুন কেনা যায় ১২০-১৪০ টাকায়। টমেটোর দামও প্রায় কাছাকাছি; কেজি ১২০ টাকা। অবশ্য টমেটো এই মৌসুমের সবজি নয়; এটি ভারত থেকে আমদানি হয়। দুই সপ্তাহ আগে মানভেদে এক কেজি বেগুন ৮০-১৫০ টাকা ও টমেটো ১০০ টাকায় কেনা যেত।

মোটামুটি ৬০ টাকা কেজির নিচে তেমন কোনো সবজি কেনা যায় না। বেশ কিছু সবজির কেজি ৮০ টাকার ওপরে। যেমন কাঁকরোল, করলা, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, লতির মতো সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পটোল, মুলা প্রভৃতি ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি লাউয়ের দামও ৬০ টাকার ওপরে। সবজির মধ্যে কম দাম পেঁপে ও আলুর। প্রতি কেজি পেঁপে ২০-৩০ টাকা ও আলুর দাম ২০-২৫ টাকা।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের এই সময়ে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কিছুটা কম থাকে। তবে এক-দেড় মাসের মধ্যে শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন দাম কমে আসবে।

বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো ধরনের বেগুন কেনা যায় না। এর মধ্যে তাল বেগুনের কেজি এখন ২০০-২২০ টাকা; আর সাধারণ বেগুন কেনা যায় ১২০-১৪০ টাকায়। টমেটোর দামও প্রায় কাছাকাছি; কেজি ১২০ টাকা। অবশ্য টমেটো এই মৌসুমের সবজি নয়; এটি ভারত থেকে আমদানি হয়।মাছ, মুরগি ও চালের দাম চড়া

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ও দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। আর সাধারণ মানের সরু চালের দাম সামান্য কমেছে। টিসিবির হিসাবে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ টাকা বেড়ে ১৭২-১৮০ টাকা হয়েছে। আর পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া রসুন ও আদার দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

সবজির মধ্যে কম দাম পেঁপে ও আলুর। প্রতি কেজি পেঁপে ২০-৩০ টাকা ও আলুর দাম ২০-২৫ টাকা।

এদিকে বাজারে দু-তিন মাস ধরেই মাছ, মুরগি ও চালের দাম চড়া। মাসখানেক আগে এর বাইরে গত এক মাসের মধ্যে আটা, মসুর ও মুগ ডালের দামও বেড়েছিল। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৫০ টাকা, কই ২৪০-২৮০ টাকা এবং রুই ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের মধ্যে প্রতি কেজি ডায়মন্ড, মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮০ টাকা, রশিদ ৭২ টাকা ও মোজাম্মেল মিনিকেট ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৫০ টাকা, কই ২৪০-২৮০ টাকা এবং রুই ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: টম ট র দ ম ১৪০ ট ক য় র সরবর হ ৩০০ ট ক ১০০ ট ক ও আল র ৮০ ট ক এক ক জ আমদ ন অবশ য গতক ল সবজ র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

অবশেষে তিতাসের পাইপলাইন মেরামত, নারায়ণগঞ্জে তিন দিন পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়ক পাইলিংয়ের সময় ফেটে যাওয়া তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন তিন দিন পর মেরামত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এতে টানা তিন দিন ভোগান্তিতে থাকা আবাসিক ও শিল্প-গ্রাহকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

তিতাস গ্যাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ফেটে যাওয়া প্রধান পাইপলাইন মেরামত শেষে গ্যাস সরবরাহ চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাটির ২৫ ফুট গভীরে দুটি স্থানে পাইপলাইন ফেটে যাওয়ায় মেরামত করতে বেগ পেতে হয়েছে। মাটি খননের সময় বারবার মাটি ধসে পড়ছিল। পরে লোহার পাত দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে পাইপলাইন মেরামত শেষে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আবাসিক ও শিল্প গ্রাহক সবাই গ্যাস পাচ্ছেন।

আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে ফেটে যাওয়া পাইপলাইন মেরামত হয়নি, গ্যাস সরবরাহ বন্ধে ভোগান্তি১৯ ঘণ্টা আগে

গত শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শাসনগাঁও এলাকায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় মাটির গভীরে থাকা পাইপে আঘাত লাগে। এতে পাইপ ফেটে গ্যাস বের হতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে জেলার বড় অংশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে হাজার হাজার আবাসিক ও শিল্প-গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তাঁদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে। অনেককে লাকড়ির চুলা, ইলেকট্রিক চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডারে রান্নার কাজ সারতে হয়েছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ কলেজের প্রভাষক ফারজানা আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন পর চুলায় গ্যাস এসেছে। এই কয়েক দিন গ্যাস না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

আরও পড়ুনউড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইনে ফাটল, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ২৩ নভেম্বর ২০২৫

ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের একটি ডাইং কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারখানা পুরোপুরি গ্যাসনির্ভর হওয়ায় ডাইং, সুইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংসহ সব শাখার কাজ বন্ধ ছিল। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানির সময়সূচি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

শুধু পোশাক ও ডাইং কারখানা নয়, রি-রোলিং মিল, স্পিনিং মিলসহ হাজারো শিল্পকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় উৎপাদনভিত্তিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকদের এই তিন দিনে আয় কমে বিপাকে পড়তে হয়েছে।

এলাকাবাসী ও শিল্পমালিকদের অভিযোগ, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসতর্কতা, অবহেলা ও তিতাস গ্যাসের গাফিলতির কারণে গত এক বছরে ২৮ বার গ্যাসের প্রধান পাইপলাইন ফেটে গেছে। তবে এবার টানা তিন দিন সরবরাহ বন্ধ থাকা একটি নতুন রেকর্ড।

তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, উড়ালসড়কের কাজের স্থানে তিতাসের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহে আর কোনো সমস্যা হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিন বিদ্যুৎ থাকবে না কালীগঞ্জের ৩ এলাকায় 
  • ৩০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি
  • এক মাস পরও শৃঙ্খলা ফেরেনি, পণ্য পেতে সময় লাগছে বেশি
  • অবশেষে তিতাসের পাইপলাইন মেরামত, নারায়ণগঞ্জে তিন দিন পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক
  • নাগরিক দুর্ভোগ দূর করুন