ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি
Published: 12th, October 2025 GMT
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কিত খসড়া অধ্যাদেশ সংশোধন না করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে ঢাকা কলেজ ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা সংরক্ষণ রক্ষা কমিটি।
রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলনে অনতিবিলম্বে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কিত খসড়া অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি কর হয়। এ দাবি না মানলে আগামী ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, “হাইব্রিড পদ্ধতিতে নয়, অক্সফোর্ড বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণ করে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এই ইউনিভার্সিটির অধীনে সাতটি কলেজ পরিচালিত হবে।”
তিনি বলেন, “সাত কলেজের স্বতন্ত্র রক্ষা করেই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হতে হবে। ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজের স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খসড়া অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হলে সাতটি কলেজ স্বকীয়তা হারানোর পাশাপাশি ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে নারী শিক্ষা সংকুচিত হবে।
উদ্ভুত সমস্যা সমাধান এবং ঢাকা কলেজসহ ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
১.
২. এই কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না।
৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।
৪. অক্সফোর্ড বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
৫. উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদেরকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে।
৬. উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিলেবাস সমাপ্ত করা, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাজীবন সেশনজটমুক্ত করতে হবে।
৭. শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ বিভাগপ্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ/পদায়ন করতে হবে। সময়ের দাবিতে নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি প্রদান, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি প্রদান ও শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। তাদের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে।
৯. শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের আলোকে (লোকদেখানো মতামত-গ্রহণ নয়), টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
১০. প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে হাইব্রিড শিক্ষা বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বিএনপির যুববিষয়ক বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন ট র ল ইউন ভ র স ট ইউন ভ র স ট র কল জ র গ রহণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫