প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কিত খসড়া অধ্যাদেশ সংশোধন না করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে ঢাকা কলেজ ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা সংরক্ষণ রক্ষা কমিটি। 

রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলনে অনতিবিলম্বে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিতর্কিত খসড়া অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি কর হয়। এ দাবি না মানলে আগামী ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। 

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, “হাইব্রিড পদ্ধতিতে নয়, অক্সফোর্ড বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণ করে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এই ইউনিভার্সিটির অধীনে সাতটি কলেজ পরিচালিত হবে।”

তিনি বলেন, “সাত কলেজের স্বতন্ত্র রক্ষা করেই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হতে হবে। ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজের স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খসড়া অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হলে সাতটি কলেজ স্বকীয়তা হারানোর পাশাপাশি ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে নারী শিক্ষা সংকুচিত হবে। 

উদ্ভুত সমস্যা সমাধান এবং ঢাকা কলেজসহ ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

১.

যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।

২. এই কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না।

৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।

৪. অক্সফোর্ড বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

৫. উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদেরকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে।

৬. উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিলেবাস সমাপ্ত করা, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাজীবন সেশনজটমুক্ত করতে হবে।

৭. শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ বিভাগপ্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ/পদায়ন করতে হবে। সময়ের দাবিতে নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে।

৮. শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি প্রদান, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি প্রদান ও শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। তাদের খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে।

৯. শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের আলোকে (লোকদেখানো মতামত-গ্রহণ নয়), টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

১০. প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে হাইব্রিড শিক্ষা বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বিএনপির যুববিষয়ক বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন ট র ল ইউন ভ র স ট ইউন ভ র স ট র কল জ র গ রহণ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ