প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য সমাধান: এবি পার্টি
Published: 13th, November 2025 GMT
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে মেনে নেওয়ার পক্ষে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটি বলেছে, ‘আমাদের যাঁর যা মত থাকুক না কেন, সরকার বা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেহেতু সব দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, তাই এটা এখন একটি অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য সমাধান।’
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশের কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও তাঁরা একে স্বাগত জানিয়েছেন।
এবি পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে মেনে নেওয়ার পক্ষে। আমাদের যাঁর যা মত থাকুক না কেন, সরকার বা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেহেতু সব দিক বিবেচনা করে একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক ভোটের হিসাবে আসন নির্ধারণ এবং গণভোটে একমত ও ভিন্নমতকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যালট তৈরিসহ চূড়ান্ত কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এটা এখন একটি অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য সমাধান। সার্বিক বিচারে এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি।’
এবি পার্টি বলেছে, তারা প্রথম থেকেই বলে আসছিল, রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু পর্যাপ্ত যুক্তিতর্ক ও আলোচনা ইতিমধ্যে শেষ করেছে, তাই এখন সরকারের একটা সমাধানমূলক সিদ্ধান্ত দেওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। দলটির আশা, বিএনপি, জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল বিভক্তি পরিহার করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশকে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পথে পরিচালনা করবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এলপিজিএলের অব্যবস্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়
এলপিজি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এখন বাংলাদেশের একটি প্রধান জ্বালানির উৎস। এই গ্যাস সরবরাহের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এলপিজিএল) কার্যক্রম নিয়ে যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা এককথায় ভয়াবহ। এলপিজিএল প্রায় সাড়ে চার লাখ সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করে, যার মধ্যে প্রায় এক লাখ সিলিন্ডারেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। এর চেয়েও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব সিলিন্ডারের মান যাচাই করা হয় আধুনিক প্রযুক্তির বদলে খালি চোখে গ্যাসের বুদ্বুদ দেখে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে এমন চরম গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত এই সংবেদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে যে নিরাপত্তাহীনতা ও অব্যবস্থাপনা চলছে, তা গ্রাহকদের ঘরে যেন ‘টাইম বোমা’ তুলে দিচ্ছে।
যেভাবে সিলিন্ডারে ছিদ্র মান যাচাই করা হয়, তা শুধু গ্যাসের অপচয় নয়, বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। প্রতিষ্ঠানের চত্বরে গ্যাসের গন্ধ, ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্রের অভাব এবং আড়াই বছর ধরে অগ্নিমহড়া না হওয়া—একটি গ্যাস বোতলজাতকরণ ইউনিটে এমন অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রায় পাঁচ দশকের পুরোনো রি-টেস্টিং ইউনিটটির যন্ত্রপাতি এখন অচল হয়ে পড়েছে। স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুল পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারগুলোই বারবার বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার বাদ দিতে নির্দেশনা দিয়ে গেলেও বাস্তবতা হলো, বারবার চিঠি দিয়েও পরিবেশকদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। সরকারি সিলিন্ডারের এমন দুরবস্থা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অনুপস্থিতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের চরম উদাসীনতাকে প্রমাণ করে। বুয়েটের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ম. তামিমের মন্তব্য, ‘সরকারি সিলিন্ডারগুলোই সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত। সামান্য দেবে যাওয়া বা আঘাতের চিহ্ন দেখলেই কারখানায় পাঠিয়ে চাপ পরীক্ষা করা উচিত।’ এই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অর্থ হলো, ২০১৬ সালে বগুড়ায় বিপিসির ডিপোতে ৩০০ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করা।
১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রি-টেস্টিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করব, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৩ হাজার বা পরিবেশকদের মতে ১ লাখ সিলিন্ডার জরুরি ভিত্তিতে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সিলিন্ডারে ছিদ্র শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তিও দ্রুত চালু করা হোক। নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে অবহেলার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রতিটি সিলিন্ডারে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত অগ্নিমহড়া এবং চত্বরে ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র বসানোও জরুরি। আমরা চাই না অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা বড় কোনো দুর্ঘটনার জন্ম দিক।