পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “রাতে নারীদের বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিত,গভীর রাতে জঙ্গলের মতো জায়গায় মেয়েদের বের হওয়া উচিত নয়।”

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশ ও প্রশাসনের দায় এড়াতে গিয়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণধর্ষনের মত গুরুতর অপরাধের দায় এড়াতে মমতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি বলেও দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি।  রবিবার উত্তরবঙ্গে বিপর্যয় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমন মন্তব্য করেন মমতা।

গণধর্ষণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মমতা বলেন, “পুলিশকে জিজ্ঞেস করুন, আমাকে নয়। একটি বেসরকারি কলেজ। কেউই সমর্থন করছে না। তিন সপ্তাহ আগে ওড়িশায় তিনটি মেয়েকে সমুদ্র সৈকতে ধর্ষণ করা হয়। ওড়িশা সরকার কী করেছে? বাংলায় মহিলাদের সঙ্গে কিছু হলে, আমরা হালকা ভাবে নিই না। গুরুতর ঘটনা।”

দুর্গাপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তার সরকারের উপর দায় চাপানোর বিষয়টিকে অন্যায় বলে অভিহিত করেন। তার মতে, ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বেসরকারি মেডিকেল কলেজেরই ছিল।

মমতা বলেন, “স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। ওই মেয়েটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ছিল। বেসরকারি কলেজে.

...কার দায়িত্ব। রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে বেরোল কী করে? আমি যতদূর জানি, জঙ্গলের মধ্যে ঘটেছে। ১২টা ৩০ মিনিটে কী হয়েছে জানি না। তদন্ত চলছে। আমি হতবাক। বেসরকারি মেডিকেলগুলোকে সতর্ক হতে হবে, পড়ুয়াদের খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে, রাতের বেলায় বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়। নিজেদের রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গল এলাকায়। আমি প্রাথমিক যে রিপোর্ট পেয়েছি, পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কেউ রেহাই পাবে না। যেই দোষী হোক না কেন, কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “তিন জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতেই। আমরা কড়া পদক্ষেপ নেব।”

দুর্গাপুরে ওড়িশার বাসিন্দা ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজনীতিও তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই আবহেই উত্তরপ্রদেশ থেকে একটি গণধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। 

সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, “অন্য রাজ্যের ঘটনাও সমান নিন্দনীয়। মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে, ওড়িশায় বহু ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার সরকারেরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমাদের রাজ্যে এক-দু’মাসে চার্জশিট দেওয়া হয়। নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দিয়েছে।”

লখনউয়ে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, “অনেক ঘটনা ঘটছে। রোজ ঘটছে। সেখানে মাথাব্যথা নেই। ধর্ষিতাকে আদালতে পৌঁছনোর আগে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। সাংবাদিকদের ধরে, নগ্ন করে জেলে পুরে রাখে। এমন অনেক ঘটনা ঘটে। আমরা কোনো ঘটনাকেই সমর্থন করি না। জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলি বাংলায়। বিভিন্ন রাজ্যের ছেলেমেয়ে এখানে পড়তে আসেন। তাদের আমি অনুরোধ করব, রাত্রি বেলা না বেরোতে। পুলিশ তো জানতে পারে না, কে কখন রাত্রিবেলা বেরিয়ে যাচ্ছে! বেসরকারি মেডিকেল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে, পড়ুয়াদের দেখভাল করা। পুলিশ তো আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকবে না! কেউ যদি রাত ১২টা ৩০ মিনিটে বেরিয়ে কোথাও যায়...ঘটনাটা নিন্দনীয়, ঘটনাটিকে সমর্থন করছি না। যে যেখানে যেতে পারে, তার অধিকার। কিন্তু হস্টেলে থাকে যারা, একটা সিস্টেম আছে। ও ফার্স্ট ইয়ারের পড়ুয়া। এটা প্রাইভেট কলেজ। ওদের নিরাপত্তা আরো বাড়ানো উচিত। আমি ডিটেলস খবর নিয়েছি। পুলিশকে বলেছি কড়া পদক্ষেপ নিতে। কেউ রেহাই পাবে না।”

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই পড়ুয়া সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজের বাইরে খেতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় কয়েকজন যুবক ওই তরুণীর পথ আটকায় এবং জোর করে হাসপাতালের পিছনের দিকে থাকা একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। 

সুচরিতা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব সরক র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ