অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পরিবর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মুদ্রণ ও বিতরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি আজ রোববার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এনসিটিবির সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায় অনুসন্ধানের পরিবর্তে ‘মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলা’র মতো প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণের দায়িত্ব অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত করার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এটি এনসিটিবিকে কেবল দুর্বলই করবে, লক্ষ্য অর্জনে গুণগত কোনো পরিবর্তন আনবে না। বরং এক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর হবে মাত্র।

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রমে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে স্বায়ত্তশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিসহ প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতের উদ্যোগ গ্রহণের জন‍্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনসিটিবি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিতরণ ও বিপণনের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বছরের শুরুতে বিনা মূল্যে বই বিতরণও করা হয়। এনসিটিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রায় প্রতিবছরই সময়মতো বই সরবরাহে ব্যর্থতা, মান নিয়ে প্রশ্ন এবং কাজের সমন্বয়হীনতা। এসব কারণ দেখিয়ে ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আলাদাভাবে বই ছাপার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এখন সেই চেষ্টা বাস্তব রূপ পাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই এনসিটিবির পরিবর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মুদ্রণ ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এনসিটিবি আইন সংশোধন করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

আরও পড়ুনএনসিটিবি নয়, প্রাথমিকের বই ছাপবে অধিদপ্তর; সংকট বাড়ার আশঙ্কা১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আলাদাভাবে বই ছাপার উদ্যোগে সংকট ও সমন্বয়হীনতা আরও বাড়তে পারে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও কেউ কেউ এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণভাবে ‘বাজে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, এনসিটিবিকে শক্তিশালী না করে একে ভেঙে ফেললে শিক্ষার সামগ্রিক ক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।

এ রকম পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে বিবৃতি দিল টিআইবি। এনসিটিবির বাস্তব স্বায়ত্তশাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের নামে কোনো অ্যাডহক (অস্থায়ী) উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন করে প্রাথমিকে স্তরের পাঠ্যবই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মুদ্রণ ও বিতরণে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ এনসিটিবিকে কেবল দুর্বলই করবে, লক্ষ্য অর্জনে গুণগত কোনো পরিবর্তন আনবে না। সুশাসনের ঘাটতি ও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার ও প্রতিরোধের কার্যকর উপায় অনুসন্ধান করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষ ও যোগসাজশে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিদ‍্যমান প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে আলাদাভাবে পাঠ্যবই ছাপার এখতিয়ার অর্পণ করলে সংকট ও সমন্বয়হীনতা আরও বৃদ্ধি পাবে। অধিকন্তু তথাকথিত বিকেন্দ্রীকরণের ফলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুটি হলেও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে এ সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে না।

সময়মতো বই সরবরাহে ব্যর্থতা, মান নিয়ে প্রশ্ন ও কাজের সমন্বয়হীনতার দায়ভার এককভাবে এনসিটিবির ওপর আরোপ করা আপাতদৃষ্টে স্বাভাবিক মনে হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কি দায় এড়াতে পারে? এই প্রশ্ন রেখেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তর্দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বায়ত্তশাসনের পথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিবন্ধকতার কারণে অদক্ষতা, অনিয়ম ও পেশাগত অবক্ষয়ের শিকার এনসিটিবি কার্যকরভাবে অর্পিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসংশ্লিষ্ট সব বিষয়সহ দরপত্রপ্রক্রিয়া, মুদ্রণ, প্রকাশ ও বিতরণে এনসিটিবি যাতে সম্পূর্ণ স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পায়, সে ব্যাপারে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত ব্যর্থতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণ অনুসন্ধান সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুনপাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে এবারও সংকট, জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পাবে কি ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর স তর র প ঠ এনস ট ব র বই ছ প র র উদ য গ প ঠ যবই ও ব তরণ স শ সন গ রহণ ট আইব সরক র তরণ র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ