হোয়াইট হাউস—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। তবে এটা নিছকই শুধু একটি আবাসস্থল নয়, বরং এ ভবন গণতন্ত্র, নেতৃত্ব ও ক্ষমতার প্রতীক। দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এ ভবন ক্ষমতার পালাবদল, উৎসব, সংকট, যুদ্ধ, চুক্তি ও ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা মুহূর্তের স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নতুন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, হোয়াইট হাউসে থেকেছেন, চলেও গেছেন—সাদা রঙের এ ভবন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে। পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক এ ভবন বিশ্বনেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

১৭৯২ সালের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি আবাসস্থলের নির্মাণকাজ। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের হাত ধরে এ কাজের শুরু।

নতুন রাজধানী, নতুন ভবন

তখন সদ্যস্বাধীন দেশ যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ ওয়াশিংটন দেশের জন্য নতুন একটি রাজধানী গড়তে চাইলেন। বেছে নেওয়া হলো পটোম্যাক নদীর তীরে একটি জায়গাকে। সেখানে গড়ে তোলা হবে আস্ত একটি নতুন শহর। সেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাজধানী। শহর গড়ার দায়িত্ব পান ফরাসি–আমেরিকান শিল্পী ও নগর–পরিকল্পনাবিদ পিয়েরে চার্লস এনফ্যান্ট।

জর্জ ওয়াশিংটনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নতুন রাজধানী গড়তে পুরোদমে নেমে পড়েন পিয়েরে চার্লস। প্রেসিডেন্টের নামে নতুন শহরটির নাম রাখা হয় ‘ওয়াশিংটন ডিসি’। নতুন রাজধানী হবে, সেখানে প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য বড়সড় একটি ভবন থাকবে না, তা কী করে হয়!

হোয়াইট হাউস শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি আবাস নয়, এখানে আছে প্রেসিডেন্টের দপ্তর। নাম ওভাল অফিস। ছয়তলা আবাসিক ভবনটিতে আছে ১৩২টি কক্ষ, ৩৫টি বাথরুম, ৪১২টি দরজা, ১৪৭টি জানালা। ৮টি সিঁড়ি, ৩টি লিফট আর ২৮টি ফায়ারপ্লেস আছে এ ভবনে।

শুরু হলো প্রেসিডেন্ট ভবনের নির্মাণের জন্য জমি খোঁজা। গর্ব করার মতো নকশাও দরকার। এ কাজেও এগিয়ে এলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। সঙ্গে পিয়েরে চার্লস। ১৭৯১ সাল, এখন যেটা ১৬০০ পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ, সেখানে জায়গা পছন্দ হলো।

জর্জ ওয়াশিংটন এমন একটি জায়গায় প্রেসিডেন্টের বসবাসের জন্য বেছে নেন, সেখান থেকে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সরাসরি যাওয়া যায়।

নকশা খোঁজা ও নির্মাণ

প্রেসিডেন্ট ভবনের জন্য স্থপতিদের কাছ থেকে নকশা আহ্বান করা হয়। শুরু হয় প্রতিযোগিতা। জমা পড়ে নয়টি নকশা। যাচাই–বাছাইয়ের পর আইরিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান স্থপতি জেমস হোবানের নজরকাড়া নকশা স্বর্ণপদক পায়।

জেমস হোবানের নকশা মেনে প্রায় আট বছর ধরে নতুন প্রেসিডেন্ট ভবনের নির্মাণকাজ চলে। অবশেষে ১৮০০ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শেষ হয়; যদিও টুকটাক কিছু কাজ তখনো বাকি ছিল।

জর্জ ওয়াশিংটনের আগ্রহ আর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নতুন রাজধানীতে প্রেসিডেন্টের সরকারি এ আবাসস্থল নির্মাণ করা হলেও তিনি কখনোই সেখানে থাকতে পারেননি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার বছরখানেক আগেই ১৭৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৬৭ বছর বয়সে মারা যান জর্জ ওয়াশিংটন।

নতুন প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রথম ওঠেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ও তাঁর স্ত্রী ফার্স্ট লেডি অ্যাবিগেল অ্যাডামস। এর পর থেকে যতজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, প্রায় সবার আবাসস্থল হয়েছে শ্বেতশুভ্র এ ভবন।

পাখির চোখে হোয়াইট হাউস.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র স ড ন ট র সরক র প র স ড ন ট ভবন য ক তর ষ ট র র র জন য এ ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

দিলীপ কুমারের ফ্ল্যাট, দোকানসহ স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সাতটি ফ্ল্যাট, দুটি দোকানসহ ৩৩ দলিলের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজের আদালত এই আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন জানান, দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন এসব সম্পত্তি অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

আবেদনে বলা হয়, আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে। আগরওয়ালা এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩৮৫ কোটি ৩২ লাখ ৬২ হাজার ১২৩ টাকা জমা ও ৩৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৪০ টাকা উত্তোলনসহ সর্বমোট ৭৫৫ কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৩ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন। সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

তদন্তকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামির নামে ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। মামলা নিষ্পত্তির না হওয়ায় পর্যন্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে ক্ষতির কারণ রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির স্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে গত ২২ জুলাই পরিবারসহ ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ কুমার আগরওয়ালার দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন একই আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ