অসুস্থ নাতিকে দেখা হলো না নানা-নানির
Published: 13th, October 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অসুস্থ নাতনিকে দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নানা-নানির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার আনারপুরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ইউটার্নে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় মারা যান তারা।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ তিনজন। পরিবারের সদস্যরা মৃত্যু ও আহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
বরগুনায় সড়ক দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু
নেত্রকোণা থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল বন্ধ
নিহতরা হলেন- আলনা বেগম (৫০) ও তার স্বামী বিল্লাল হোসেন (৬৫)। তাদের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার দড়ি লুটেরচর গ্রামে।
আহতরা হলেন- নিহত বিল্লাল হোসেনের ছেলের বউ অঞ্জনা (২৩), নাতনি আনিশা (৪) ও অটোরিকশা চালক (৪০)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনের মেয়ে রত্না আক্তারের বিয়ে হয় গজারিয়ার আনারপুরা গ্রামে। সম্প্রতি রত্নার মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে পরিবার নিয়ে দেখতে যাচ্ছিলেন বিল্লাল হোসেন। আনারপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইউটার্ন নেওয়ার সময় ঢাকাগামী মতলব পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়।
এলাকাবাসী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত পাঁচ জনকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বিলাল হোসেন, তার স্ত্রী আলনা বেগম এবং ছেলের বউ অঞ্জনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। ঢাকা যাওয়ার পথে সকাল ১১টার দিকে মারা যায় আলনা বেগম ও বিল্লাল হোসেন। স্থানীয়রা ঘাতক বাস ও চালক কাউসার হোসেনকে (২৫)ক আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চার রোগীকে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে শিশু আনিশা ছাড়া বাকি তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহত আলনা বেগমের মামা নজরুল ইসলাম বলেন, “ঢাকায় নেওয়ার পথে আলনা ও তার স্বামী মারা গেছেন। বাকিদের অবস্থাও ভালো নয়।”
গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মো.
ঢাকা/রতন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত দ র ঘটন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পোড়া বাঁশ ও টিনের জোড়াতালিতে মাথা গোঁজার চেষ্টা
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। এরই মধ্যে লোহার শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ছেন একজন মানুষ। কখনো থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। কয়েকটি গর্ত আগেই খুঁড়েছেন—তাতে আংশিক পুড়ে যাওয়া বাঁশ, তক্তা আর কাঠ পুঁতে তোলার চেষ্টা করেছেন একটি ঘরের কাঠামো। অঙ্গার হওয়া টিনগুলো জোড়াতালি দিয়ে বাঁধছেন সেই কাঠামোতে।
লোকটির নাম রফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। মঙ্গলবারের আগুনে রফিকুল ও তাঁর স্ত্রী বিলকিস আক্তারের মাত্র ৮০ বর্গফুটের ঘরটি মুহূর্তে ছাই হয়ে গেছে। বস্তির পানির ট্যাংক অংশে ছিল তাঁদের ছোট্ট সংসার।
কথা বলতে বলতে রফিকুল জানালেন, তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ায় চালান। স্ত্রী বিলকিস গুলশানের একটি বাসায় কাজ করেন। দুজনই সারা দিন বাইরে থাকেন বলে তাঁদের দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নানা-নানির কাছে রেখেছেন।
আগুন লাগার দিন ঘরে ছিলেন বিলকিস। রফিকুল ছিলেন বাইরে। হঠাৎ আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্ত্রী কোনো রকমে টেলিভিশন আর গ্যাসের সিলিন্ডার সরাতে পেরেছিলেন। বিছানা, কাপড়চোপড়, হাঁড়িপাতিল—সংসারে যা কিছু ছিল, সবই পুড়ে গেছে। সেদিন রাতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল বাড্ডায় ছোট ভাইয়ের বাসায়। এখন কোনোমতে পুড়ে যাওয়া টিন দিয়েই ছাউনি আর বেড়া দিয়ে থাকার জায়গা তৈরির চেষ্টা করছেন।
দুপুরে কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বস্তিবাসীরা নিজ নিজ ঘরের জায়গায় আগুনে পুড়ে যাওয়া টিন, কাঠ, কয়লা, আসবাব সরাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিষ্কার করছেন অবশিষ্ট ছাই-কয়লা। অনেকে পলিথিন-ত্রিপলের অস্থায়ী ছাউনি বানিয়েছেন। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে দিয়েছেন পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের জন্য।
বস্তির বাসিন্দারা জানান, জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের খাবার ও শীতবস্ত্র প্রয়োজন। কারণ, আগুনে তাঁদের সহায়–সম্বল সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। মাস শেষ হওয়ায় অনেকের হাতে টাকাপয়সাও নেই। ঘরে থাকা হাঁড়ি–পাতিল, চুলা সব পুড়ে গেছে। রান্না করে খাওয়ারও উপায় নেই।
খোকন আলী দুই বছরের নাতিকে নিয়ে পুড়ে যাওয়া একটি ঘরে টানানো ত্রিপলের ছায়ায় বসে ছিলেন। এক টুকরা টোস্ট বিস্কুট হাতে নিয়ে খাচ্ছিল শিশুটি। পাশে বসে নাতিকে দেখভাল করছিলেন খোকন।
খোকন প্রথম আলোকে বলেন, যে জায়গায় বসে আছেন, সেখানে বড় ছেলের ঘর ছিল। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কাছেই আরেকটি ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ওই ঘরটাও পুড়ে গেছে।
ত্রাণসহায়তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে খোকন বলেন, ‘এক লাইনে দিলে আরেক লাইনে দিতাছে না। এনু-উনু কইরা দিয়া চইলা যাইতাছে। কেউ পাইতেছে, কেউ আবার পাইতেছে না। কোনো কিছুরই ঠিক নাই।’ সকালে সাতজনের জন্য চারটি কলা, তিনটি রুটি আর তিনটি ডিম পেয়েছেন। দুপুরে কিছু পাননি বলে জানান তিনি।
আগুনে পোড়ার পর বস্তিবাসীর সহায়তায় খোলা হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প। আজ কড়াইল বস্তিতে