চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে গতকাল সোমবার রাতে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী নূর ভূতের চরিত্র সেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালান। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে তাঁর অভিনয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

মেহেদী নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পেশাগতভাবে এমন মেকআপ আর পোশাক পরি। কাটাছেঁড়া থেকে শুরু করে শরীর দগ্ধ, এ রকম যত চরিত্রাভিনয় আছে, আমি সেগুলো করি। গতকাল আমি তানজিম সাদমানের প্রচার করছিলাম। তিনি সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী। বেশ কিছু মাস আগে পুরোনো মিলনায়তনে আমাদের ক্যাম্পাসে যে প্রোগ্রাম হয়েছিল, সেখানে করা চরিত্রাভিনয় মানুষের অনেক পছন্দ হয়েছিল। সেখান থেকেই আমার মাথায় এই ভাবনা আসে।’

নাট্যকলার ছাত্র মেহেদী আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোয় পোস্ট করি, যদি কারও দরকার হয়, আমি চরিত্রাভিনয় করে তাদের প্রচারপত্র বিতরণ করতে পারব। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ভূত সেজে স্টেশনে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, এমন কিছু করলে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করা যাবে এবং সেটাই হয়েছে। প্রচারপত্র বিতরণের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আমার লিফলেট নিতে এগিয়ে এসেছে। সবাই সাড়া দিচ্ছে, ভালো লাগছে। আমার কাছে এটা নতুন কিছু নয়, তবে নির্বাচন ঘিরে বিষয়টা আলাদা অনুভব হচ্ছে। আজও আমি একই ধরনের চরিত্রাভিনয় করব।’

দর্শক হিসেবে উপস্থিত নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমরিন সুলতানা বলেন, ‘গৎবাঁধা নিয়মে লিফলেট নিতে নিতে আমাদের অনেক মনোটনাস (একঘেয়ে) লাগছিল। চাকসু নির্বাচনের প্রতিটি প্রচারণা ইউনিক হলেও এই চরিত্রাভিনয় পুরো পরিবেশকে আরও জমজমাট করে তুলেছিল।’

প্রায় তিন দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তমবারের মতো ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে হল সংসদ নির্বাচনও। এরই মধ্যে ১২টি প্যানেলের ৯টি প্যানেল ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, সার্বভৌম শিক্ষার্থীর ঐক্য, বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট, বৈচিত্র্যের ঐক্য, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ ও বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভোট গণনা শুরু হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ