চাকসু নির্বাচনে ভূত সেজে ভোট চেয়ে আলোচনায় মেহেদী
Published: 13th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে গতকাল সোমবার রাতে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী নূর ভূতের চরিত্র সেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালান। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে তাঁর অভিনয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
মেহেদী নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পেশাগতভাবে এমন মেকআপ আর পোশাক পরি। কাটাছেঁড়া থেকে শুরু করে শরীর দগ্ধ, এ রকম যত চরিত্রাভিনয় আছে, আমি সেগুলো করি। গতকাল আমি তানজিম সাদমানের প্রচার করছিলাম। তিনি সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী। বেশ কিছু মাস আগে পুরোনো মিলনায়তনে আমাদের ক্যাম্পাসে যে প্রোগ্রাম হয়েছিল, সেখানে করা চরিত্রাভিনয় মানুষের অনেক পছন্দ হয়েছিল। সেখান থেকেই আমার মাথায় এই ভাবনা আসে।’
নাট্যকলার ছাত্র মেহেদী আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোয় পোস্ট করি, যদি কারও দরকার হয়, আমি চরিত্রাভিনয় করে তাদের প্রচারপত্র বিতরণ করতে পারব। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ভূত সেজে স্টেশনে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, এমন কিছু করলে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করা যাবে এবং সেটাই হয়েছে। প্রচারপত্র বিতরণের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আমার লিফলেট নিতে এগিয়ে এসেছে। সবাই সাড়া দিচ্ছে, ভালো লাগছে। আমার কাছে এটা নতুন কিছু নয়, তবে নির্বাচন ঘিরে বিষয়টা আলাদা অনুভব হচ্ছে। আজও আমি একই ধরনের চরিত্রাভিনয় করব।’
দর্শক হিসেবে উপস্থিত নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমরিন সুলতানা বলেন, ‘গৎবাঁধা নিয়মে লিফলেট নিতে নিতে আমাদের অনেক মনোটনাস (একঘেয়ে) লাগছিল। চাকসু নির্বাচনের প্রতিটি প্রচারণা ইউনিক হলেও এই চরিত্রাভিনয় পুরো পরিবেশকে আরও জমজমাট করে তুলেছিল।’
প্রায় তিন দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তমবারের মতো ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে হল সংসদ নির্বাচনও। এরই মধ্যে ১২টি প্যানেলের ৯টি প্যানেল ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, সার্বভৌম শিক্ষার্থীর ঐক্য, বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট, বৈচিত্র্যের ঐক্য, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ ও বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভোট গণনা শুরু হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নবীনদের বরণ করে নিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল ও শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি
টাইফয়েড প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে: উপদেষ্টা
নবীন বরণ উপলক্ষে দিনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন এলাকা। নির্দিষ্ট সময়েই শুরু হয় আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা।
ধারাবাহিকভাবে অতিথিদের আসন গ্রহণ, জাতীয় সঙ্গীত, পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ থেকে পাঠ, অতিথিদের বক্তব্য চলে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে নবীন ও পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুভুতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, “নবীন শিক্ষার্থীরা হলো একটি পণ্যের কাঁচামালের মতো। তোমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছো—এর অর্থ, তোমাদের ভেতরে এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আবেগকে নয়, যুক্তি ও শৃঙ্খলাকে কাজে লাগাতে হবে। তোমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আজ এই সুন্দর ক্যাম্পাসে এসেছো—যেখানে তোমাদের বাবা-মা ও সমাজের স্বপ্ন জড়িয়ে আছে। তাই এই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে।”
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা, নৈতিকতা অনুসরণ করা এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “তোমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছ জ্ঞানের আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, তোমাদের জীবন তত সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে। এখানে প্রতিটি বিভাগে সেমিনার ও লাইব্রেরির সুযোগ রয়েছে। এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “তোমরা যাতে কোনো আর্থিক সমস্যায় না পড়ো, সেজন্য আমরা এবার থেকে উপবৃত্তির পরিমাণ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জ্ঞানের প্রতিটি শাখা গুরুত্বপূর্ণ, তাই জ্ঞানের পথে নিরন্তর হাঁটতে হবে। তোমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। প্রথম বর্ষে পদার্পণের এই মুহূর্ত থেকেই ভবিষ্যতের পথ তৈরি হতে থাকে। তোমরা এখানে শিখতে এসেছ, তাই যত বেশি শেখা যায় শিখবে, নিজেকে গড়ে তুলবে। কঠোর পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা চর্চার মাধ্যমে তোমরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুর্শিদা ফেরদৌস বিনতে হাবীব।
এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী