জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০টি মামলায় ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ মোট ৯৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা ১০টি মামলার আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদ ১৮ জন, সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা ২৫ জন, পুলিশের সাবেক সদস্য ৩৮ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ৪ জন ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮ জন এবং চিকিৎসক ১ জন। আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ জনকে, পলাতক আছেন ৫৮ জন এবং সেনা হেফাজতে আছেন ১৫ জন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২৫ মে থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, তার মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা আটটি। আর দুটি মামলা আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) শাসনামলে সংঘটিত গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা ১০টি মামলার মধ্যে একটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এই মামলায় গতকাল রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা শুরু হয়েছে। আর ৩টি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বাকি ৬টি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো ঘটনায় বা অভিযোগে প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তা ‘মিস কেস’ বা বিবিধ মামলা হিসেবে ট্রাইব্যুনালে নথিভুক্ত হয়। এরপর তদন্ত সংস্থা ওই অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।

ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে ‘মিস কেস’ মামলায় রূপ নেয়। এরপর ফরমাল চার্জ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। এই শুনানিতে ‘ফরমাল চার্জ’ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

বিচারকাজ বেশি এগিয়েছে একটি মামলায়

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে করা মামলার বিচারকাজ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে ৮ অক্টোবর। গতকাল (১২ অক্টোবর) এই মামলায় প্রথম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলার আসামি। তবে সাবেক আইজিপি মামুন এ মামলায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা যে তিনটি মামলায় এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে, তার একটি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা। এ মামলার ৮ আসামির সবাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক সদস্য। এর মধ্যে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ্ আলম মো.

আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাতক।

বাকি চার আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো.আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

এ মামলায় ১৯তম সাক্ষী হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) তাঁকে জেরা করার কথা রয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ১৫ অক্টোবর এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

এ মামলায় আসামি ১৬ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

পলাতক আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান রিপন, আশুলিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ, পরিদর্শক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পরিদর্শক নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ সাহা ও যুবলীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) কর্মী রনি ভূঁইয়া।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ সোমবার এ মামলায় আবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

এ মামলায় আসামি ৩০ জন। এর মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) নেতা ইমরান চৌধুরী।

পলাতক আসামিদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সেকশন অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী (এমএলএসএস) মোহাম্মদ নুরুন্নবী মণ্ডল ও এ কে এম আমির হোসেন; সাবেক নিরাপত্তা প্রহরী নুর আলম মিয়া ও সাবেক অফিস সহকারী মো. মাহাবুবার রহমান।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের যেসব সদস্যকে আসামি করা হয়েছে, সেই তালিকায় আছেন রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, সাবেক পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রবিউল ইসলাম ও সাবেক এসআই (নিরস্ত্র) বিভূতিভূষণ রায়।

এ ছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাফুজুর রহমান, সহসভাপতি মো. ফজলে রাব্বি, সহসভাপতি মো. আখতার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুল হাসান এবং চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দুই মামলায় আসামি ইনু ও হানিফ

গণ-অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হবে ১৪ অক্টোবর। এ মামলার একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। তিনি এখন কারাগারে।

কুষ্টিয়াতেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ৬ অক্টোবর আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৪ অক্টোবর আসামিদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার তারিখ ধার্য আছে।

হানিফ ছাড়া এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। এ মামলার আসামিরা সবাই পলাতক।

তিন মামলায় আসামি ২৫ সেনা কর্মকর্তা

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় দুটি এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। সে দিনই মামলা তিনটি আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তিনটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এই তিন মামলায় মোট আসামি ৩২ জন। এর মধ্যে ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন এখন সেনা হেফাজতে আছেন।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা গুমের প্রথম মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে); র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম এখন সেনা হেফাজতে আছেন।

আসামিদের মধ্যে র‌্যাবের সাবেক তিনজন মহাপরিচালক আছেন। তাঁরা হলেন বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ। তাঁরা পলাতক। এ মামলার আসামির তালিকায় থাকা শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‍্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম পলাতক।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-নির্যাতনের আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিনজন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী এখন সেনা হেফাজতে আছেন।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক। অন্য আসামিদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। তাঁদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই; তবে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো সূত্র বলছে, তাঁরা দেশ ত্যাগ করেছেন।

এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত এখন সেনা হেফাজতে আছেন। বাকি দুজন পলাতক।

এর বাইরে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধেও ট্রাইব্যুনালে একাধিক ‘মিস কেস’ হয়েছে। তবে এর কোনোটিতেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এখনো ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়নি। জিয়াউল এখন কারাগারে আছেন।

রামপুরা ও খিলগাঁওয়ে গুলির ঘটনায় মামলা

গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁওয়ে দুজনকে গুলি করে হত্যা এবং দুজনকে আহত করার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে করা মামলায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ মামলায় ১৬ অক্টোবর সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে।

এ মামলায় আসামি ৫ জন। তাঁরা হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান, রামপুরা থানার সাবেক উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন শুধু চঞ্চল চন্দ্র।

আইনের সংশোধন

গণ-অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে চার দফা সংশোধন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয় ৬ অক্টোবর। সেই গেজেটে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হবেন। এ ছাড়া কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন না বা এসব পদে নিয়োগ পাবেন না। এমনকি প্রজাতন্ত্রের (সরকারের) কোনো সেবায় নিয়োগ পাওয়ারও অযোগ্য হবেন। সরকারের কোনো অফিসে (পাবলিক অফিস) থাকতে পারবেন না। তবে ট্রাইব্যুনাল কাউকে অব্যাহতি বা খালাস দিলে তাঁর ক্ষেত্রে এসব বিষয় প্রযোজ্য হবে না বলেও আইনের সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থাৎ যাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে, তাঁরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে তাঁরা সরকারি চাকরিতে আর থাকতে পারবেন না।

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনী যৌক্তিক হয়নি বলে মনে করেন।

আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলেই যদি কেউ নির্বাচন না করতে পারেন, কারও সরকারি চাকরি না থাকে, তার মানে হলো দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই আসামিকে সাজা দিয়ে দেওয়া।

ট্রাইব্যুনালে কত অভিযোগ

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২-এ। বিচারের অগ্রগতি সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে সর্বশেষ গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সাংবাদিকদের কাছে লিখিতভাবে তথ্য দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট অভিযোগ এসেছে ৪৫০টি। এসব তথ্য প্রাথমিক যাচাই–বাছাইয়ের পর ‘মিস কেস’ বা বিবিধ মামলা হয়েছে ৩০টি। এখানে উল্লেখ্য, মিস কেস তখনই মামলায় রূপ নেয়, যখন তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর চিফ প্রসিকিউটর ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালে।

যেসব মিস কেস তদন্তাধীন আছে, তার মধ্যে একটিতে আসামির তালিকায় আছেন ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, জুনাইদ আহ্‌মেদসহ ৪৫ জন। এ মামলায় ১৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করা আছে।

বিচারের অগ্রগতি সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় যুক্তিতর্ক এ সপ্তাহেই শেষ হতে পারে। যদি কোনো কারণে না হয়, তাহলে হয়তো সামনের সপ্তাহে শেষ হবে। যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলার রায় আগে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ষ য গ রহণ র আস দ জ জ ম ন গ র প ত র কর ব ব র রহম ন ফরম ল চ র জ স ব ক সহক র ক কর মকর ত র ঘটন য় কর আম র হ স ন য ক ত তর ক হত য ক ণ ড র আস ম দ র র স ব ক পর ন র ঘটন য় অপর ধ র ম র ল ইসল ম ম হ ম মদ প রব ন ন স ব ক কর এখন স ন এখন ক র মন ত র আস ম র য় এখন আবদ ল আওয় ম আহম দ বছর র সদস য সরক র গঠন ক তদন ত প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসির ফল প্রকাশ ১৬ অক্টোবর

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে আগামী ১৬ অক্টোবর।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এর ফলাফল আগামী ১৬ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১০ টায় দেশের শিক্ষা বোর্ডসমূহের ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। 

আরো পড়ুন:

দুই মাসের কম সময়ে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ: শিক্ষা উপদেষ্টা 

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ 

সোমবার (১৩ অক্টোবর) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটের Result কর্ণার এ ক্লিক করে বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের EIIN এর মাধ্যমে ফলাফল ডাউনলোড করতে পারবে।

সব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে Result কর্ণার এ ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের EIIN এন্ট্রি করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান Result sheet download করতে পারবে। 
এছাড়া স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে, শিক্ষা বোর্ডসমূহের সমন্বিত ওয়েবসাইট ঠিকানা www.educationboardresults.gov.bd এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহ করতে পারবে পরীক্ষার্থীরা।

নির্ধারিত শর্ট কোড 16222 এ এসএমএস এর মাধ্যমে ফল পাওয়া যাবে। তবে শিক্ষাবোর্ডসমূহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা পত্রিকা অফিসে ফলাফল পাওয়া যাবে না।

পুনঃনিরীক্ষণের জন্য https://rescrutinu.eduboardresult.gov.bd এর মাধ্যমে অক্টোবর ১৭ থেকে অক্টোবর ২৩ তারিখ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষাবোর্ডসমূহের ওয়েবসাইটে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৬ জুন এবং শেষ হয় ১৯ আগস্ট। কয়েকটি বিষয় স্থগিত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পর পরীক্ষা শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হয়।

এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেননি। ফলে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় সোয়া ১২ লাখ পরীক্ষার্থী।
 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ