দুই দশক পর ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে মৌলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জেইসির আসন্ন বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা তাঁর দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আহাদ চিমার ঢাকা সফরের কাছাকাছি সময়ে ইসলামাবাদ সফরে যাবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য ২৮ অক্টোবর ইসলামাবাদ রওনা হবেন।

জানা গেছে, ঢাকা সফরের সময় জেইসি বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি একাধিক সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন পাকিস্তানের মন্ত্রী আহাদ চিমা। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

বাংলাদেশ–পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সবশেষ বৈঠকটি ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা যাওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে বরফ জমে। গত বছর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরফ গলা শুরু হয়।

জেইসিতে যা আলোচনা হতে পারে

বাংলাদেশের সঙ্গে অনেকগুলো দেশ ও জোটের মধ্যে জেইসি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব দেশ ও জোটের তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মূলত সব ধরনের অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো থাকে জেইসির আলোচনার টেবিলে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ব্যবসা–বাণিজ্যের নানা বিষয় নিয়ে উদ্যোগ–আলোচনা হচ্ছে। তাই এবারের জেইসি বৈঠকে দুই দেশ সরাসরি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি ঠিক করেছে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষিতে সহায়তা, আর্থিক সেবা খাত, ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট খাতে কীভাবে সামনের দিনে সহায়তা এগিয়ে নেওয়া যায়, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দুই দেশের জেইসি সবশেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায়। মধ্যে সম্পর্কে জমে বরফ। গত বছরের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ–পাকিস্তান বাণিজ্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও এ ক্ষেত্রেও পাল্লা ইসলামাবাদের দিকে ভারী। সরকারি পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যঘাটতি দেখা যায়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময় পাকিস্তানে রপ্তানি করেছিল ৮ কোটি ডলারের পণ্য।

আসন্ন জেইসি বৈঠকে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর বিষয়ে আলোচনা হবে জানিয়ে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পরিমাণে শুল্ক ও কোটামুক্তভাবে চা, পাটজাত পণ্য, ওষুধ, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হবে।

১৪ মাসে পাকিস্তানের ৪ মন্ত্রীর সফর

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে এক হিনা রাব্বানি খাঁর ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনো মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর হয়নি। তিনি ২০১২ ও ২০২২ সালে দুইবার ঢাকায় এলেও কোনোটিই দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। গত বছরের পটপরিবর্তনের পর ১৪ মাসে দেশটির ৪ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন।

সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এরপর আগস্টে দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।

বৈঠকে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে আরও বেশি পরিমাণে চা, পাটজাত পণ্য, ওষুধ, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিতে পাকিস্তানকে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।

গত জুলাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভি। তাঁর সফরটি অবশ্য ছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভায় যোগ দিতে। তবে আসার পর তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছিলেন।
অর্থনীতি বিষয়কমন্ত্রী আহাদ খান চিমার সফরটি হবে গত ১৪ মাসে বাংলাদেশে পাকিস্তানে মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সফর।

এই সময়ের মধ্যে গত মাসে বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সিরাতুন্নবী (সা.) সম্মেলনের সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ইসল ম ব দ সহয গ ত উপদ ষ ট গত বছর অন ষ ঠ মন ত র পর ম ণ ন র পর

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ