রাকসু নির্বাচন: শেষ মুহূর্তের প্রচারে মুখরিত ক্যাম্পাস
Published: 13th, October 2025 GMT
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ, সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমজমাট প্রচারে মুখর অ্যাকাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, মেস ও আড্ডাস্থল। প্রার্থীরা দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, করছেন কুশল বিনিময় এবং হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট ও হ্যান্ডবিল।
আরো পড়ুন:
নবীনদের বরণ করে নিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাকসু: সাইবার বুলিং মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে চান এষা
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। পূনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রচার চলবে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১০টা পর্যন্ত।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের আকর্ষণীয় ভিডিও প্রকাশ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রার্থীরা লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইছেন।
সোমবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় নবীন বরণ থাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম এর আশে পাশে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের আকর্ষণীয় লিফলেট ও হ্যান্ডবিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে ও টুকিটাকি চত্বরে প্রচার চালাতে দেখা যায়।
এছাড়াও কৃষি অনুষদ, শহীদ মিনার, টিএসসিসি, চারুকলা অনুষদ, পরিবহন মার্কেট ও জাবির ইবনে হাইহান বিজ্ঞান ভবনের সামনে ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা, বামজোট সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য’ প্যানেল, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’সহ অন্যান্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার চালাতে দেখা যায়।
প্রচার কেমন দেখছেন এবং রাকসু নির্বাচন কেমন উপভোগ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সিদ্দিকী রিমি বলেন, “দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন হচ্ছে। বলতে গেলে আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের সময় রাকসু হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। এটা খুবই ভালো লাগছে। আমি চাই, প্রতি বছরই যেন নির্বাচনটা হয়।
রবীন্দ্র ভবনের সামনে প্রচারর সময় কথা হয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজার সঙ্গে। প্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রচার শুরুর প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তারা আমাদের কথাগুলো শুনছেন। তাদের সমস্যাগুলো বলছেন। যখন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তখন ছাত্রশিবিরের প্যানেল হিসেবে তারা আমাদের আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করছে। আমার মনে হয়, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ আরো বেড়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই অনেকে জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে রাকসুতে দেবেন—এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন। বর্তমানে মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা রয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট হবে পূর্ণাঙ্গ আবাসন নিশ্চিত করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।”
গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, “প্রচার শুরুর পর থেকেই আমরা এক অভাবনীয় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা লিফলেট সাদরে গ্রহণ করছে। তারা আমাদের সংগ্রামকে লক্ষ্য করেছে, চিনছে এবং মূল্যায়ন করবে বলেও আশ্বস্ত করছে। আমরা স্বল্প লোকবল নিয়েই সবসময় শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রচেষ্টা উপলব্ধি করছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম এর সামনে প্রচার চালানোর সময় কথা হয় ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমাদের প্যানেল এর বৈচিত্র্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষারা আমাদের অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। কারণ তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর। যাদের কাছে গিয়েছি, তারা আমাদের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।”
রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী ও হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে মোট ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। পূনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহণ। গণনা শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য সমর থ ত জ এস প র স মন আম দ র ল ফল ট করছ ন প রথম গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।