জামায়াতে ইসলামীকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানা‌নোসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ইস‌্যু‌তে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বক্তব্যকে সংগঠ‌নের নয় বরং তার ব্যক্তিগত বক্তব‌্য বলে জানিয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে সাংবা‌দিক‌দের এক প্রশ্নের জবা‌বে তি‌নি এমন মন্তব‌্য ক‌রেন।

আরো পড়ুন:

যারা শিবিরের বিরোধিতা করেছিল, তারা আজ ইতিহাস: শিবির সভাপতি

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা প্রণয়ন, পবিত্র কোরআন অবমাননার বিচার, কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ ও ধর্ম অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ কঠোর আইন প্রণয়ন এবং ৫ মে–কে ‘শাপলা গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী শুধু হেফাজতে ইসলামের আমির নন, তিনি দেশের বর্ষীয়ান ও শীর্ষ একজন আলেম উল্লেখ ক‌রে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “আলেমদের মুরব্বি হিসেবে তিনি ধর্মীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ইসলামিক বিষয়ে তার পক্ষ থেকে যে মতামত ও বক্তব্য আসে, সেসব খুবই প্রয়োজনীয়। ইসলামবিষয়ক কোনো বিভ্রান্তি নিরসন অথবা ভুল মতবাদের খণ্ডন করে দেওয়া বক্তব্য শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত।”

কোনো সাংগঠনিক বক্তব্য থাকলে সেটি সাংগঠনিক ব্যানার থেকেই আসবে ব‌লেও জানান হেফাজতে ইসলামের এই যুগ্ম মহাসচিব।

মামুনুল হক ব‌লেন, “হেফাজতে ইসলাম সরাসরি কখনোই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত নয়; বিশেষ করে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে হেফাজতের কোনো সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা নেই। সে হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা, কোনো জোট বা অ্যালায়েন্স করা হেফাজতের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী।”

সেটি করার সুযোগ নেই ব‌লেও জানান সংগঠন‌টির এই শীর্ষ নেতা।

মামুনুল হক বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মাজারে হামলা বা আক্রমণ করাকে হেফাজত সমর্থন করে না।”

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

এতে বলা হয়, কঠোর আইন না থাকার সুযোগে একের পর এক ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, “কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে নাচগান শেখানোর জন্য স্কুলে ভর্তি করে না। তাই গানবাজনার শিক্ষক নিয়োগের আইন প্রত্যাহার করতে হবে। স্কুলগুলোয় ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ ম হ ব ব ল ল হ ব ব নগর ম ম ন ল হক ইসল ম র র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

বাউলদের ওপর হামলা দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাউল, মরমি শিল্পী, লোকসংগীতশিল্পী, মঞ্চ ও যাত্রাশিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের ৪০ জন লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, সংগীতশিল্পী ও অধিকারকর্মী। আজ সোমবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেশের চিরায়ত সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নাগরিক অধিকার ও সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে—উগ্রবাদী গোষ্ঠী যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও মানবতাবাদী চেতনাকে নিশানা করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আরও দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্র নীরব থেকে অনেক ক্ষেত্রে এসব তৎপরতায় মদদ দিচ্ছে।’

বিবৃতিদাতারা অভিযোগ করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কখনো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে, কখনো সামাজিক আচরণ বা পোশাকের কারণে মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাউল-ফকিরদের ওপর হামলা, চুল কেটে হেনস্তা, নারীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি, নারী-অধিকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি—এসব ঘটনায় তাঁরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই জেলায় পুলিশের উপস্থিতিতেই বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিবৃতিদাতাদের মতে, এসব ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন নয়; বরং পরিকল্পিতভাবে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর আঘাতের অংশ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাউল, লালন ও লোকসংগীতের চেতনার ওপর আঘাত করে সমাজে বৈচিত্র্য, সাম্য ও মানবতাবাদী সংস্কৃতিকে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। অথচ সরকারের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। এতে গণতন্ত্র বিশ্বাসী মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে, আর শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরাও নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, উগ্রবাদী তৎপরতা দমনে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। নিপীড়নের শিকার শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের অবিলম্বে মুক্তিও দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন—নাট্য নির্দেশক অসীম দাশ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ, নাট্যকর্মী মুবিদুর রহমান সুজাত, চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্পী আলমগীর কবির, লেখক ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির, প্রকাশক দীপংকর দাশ, লেখক জাহেদ মোতালেব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী ভাস্কর রায়, উন্নয়নকর্মী দেবাশীষ সেন, সংগীতশিল্পী রাসেল চৌধুরী, কবি রিমঝিম আহমেদ, স্বরূপ সুপান্থ, জয়দেব কর, চিত্রশিল্পী ইরফান জুয়েল, কবি ও প্রকাশক মনিরুল মনির, চৌধুরী ফাহাদ, কবি নৈরিত ইমু, চলচ্চিত্র নির্মাতা পংকজ চৌধুরী, অনুবাদক মাহমুদ আলম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আসমা বীথি, সাংবাদিক শিউলি শবনম, লেখক রোকসানা বন্যা, কাজী রুনু বিলকিস, শিল্পী ও শিক্ষক জিহান করিম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ মজুমদার, সাংবাদিক ফজলে এলাহী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী শাহরিয়ার পারভেজ, অধিকারকর্মী ইউসুফ সোহেল, জাবেদ চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী সাবিলা তানজিনা, সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুন, ইফতেখার ফয়সাল, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী রমেন দাশগুপ্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরের হাজীপুরে ছিনতাই চক্রের ভয়ংকর ফাঁদ
  • বন্দরে ছিনতাইচক্রের ভয়ংকর ফাঁদ হাজীপুর
  • বাউলদের ওপর হামলা দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত