বন্দরের উন্নয়নে বিদেশি সহযোগিতা: সম্ভাবনা, শর্ত ও সতর্কতা
Published: 13th, October 2025 GMT
দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদে যুক্ত করার মতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ জাতীয় পর্যায়ে এর কোনো বিস্তৃত বা উন্মুক্ত আলোচনা হয়নি।
এমন একটি কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বিষয়ে সংসদ, পেশাজীবী মহল বা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মতবিনিময় না হওয়া স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের উদ্রেক করছে। চট্টগ্রাম, পানগাঁও ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য বিদেশি পরিচালনার হাতে দেওয়ার পরিকল্পনাকে সময়ের দাবি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে নেওয়া হলে জন–আস্থা ক্ষুণ্ন হতে পারে। নৌসচিব বলেন, প্রয়োজনে চুক্তি প্রকাশ করা হবে, যা ইতিবাচক হলেও ‘প্রয়োজনে’ শব্দটি স্বচ্ছতার বিষয়টিকে যথেষ্ট জোরালো করে না।
তবে বিষয়টি যেহেতু কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি। তাই এটি শুধু প্রশাসনিক স্তরে চূড়ান্ত না করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের পর সংসদে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অধিকতর যুক্তিসংগত হতো। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্য দিয়ে খোলামেলা আলোচনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে সিদ্ধান্তটি গণতান্ত্রিক বৈধতা পেত এবং ভবিষ্যতে কোনো বিতর্কের সুযোগ থাকত না। এতে জন–আস্থা যেমন দৃঢ় হতো, তেমনি দায়িত্বশীল শাসনের মানদণ্ডও প্রতিষ্ঠিত হতো।
বিদেশি সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য পরিহারযোগ্য নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রয়োজনীয় ও ফলদায়ক। তবে কৌশলগত খাত পরিচালনার দায়িত্বে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কতটা থাকবে, আর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কতটা বজায় থাকবে—এই ভারসাম্য স্পষ্ট না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে তা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা হ্রাস করতে পারে।
পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কার জটিল উদাহরণ এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। তাই বিদেশি দক্ষতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশীয় জনবলকে দক্ষ করে তোলা, স্থানীয় অংশীদারদের যুক্ত করা ও পর্যায়ক্রমে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও দূরদর্শী পরিকল্পনার ভিত্তিতে যদি এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়, তাহলেই তা দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের পক্ষে একটি শক্ত ভিত হয়ে উঠতে পারে।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দর–এলডিসি নিয়ে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিতে পারে না: তারেক রহমান
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর কিংবা এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেছেন, ‘একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ–পরিচালনা এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দুটি টার্মিনাল নিয়ে চুক্তির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তারেক রহমান বলছেন, দেশের জনগণের ওপর এসব সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। অথচ এমন একটি সরকার এসব কৌশলগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাদের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।
বন্দরের বিষয়ে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো নিয়মিত কাজের (রুটিন ওয়ার্ক) অংশ নয়। এগুলো একটি জাতীয় সম্পদ নিয়ে কৌশলগত প্রতিশ্রুতি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে ফেলার এসব সিদ্ধান্ত এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই দুটি বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো—
গাজীপুরের ছোট একটি পোশাক কারখানার মালিকের গল্প এটা। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কয়েক শ শ্রমিক রয়েছে। সীমিত আয়ে চলছে কারখানাটি। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে নির্মম বিশ্ববাজারের সঙ্গে। একদিন, কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই, পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য যেসব শুল্কসুবিধা একসময় তিনি পেতেন, তা নীরবে উঠে যায়। এর ফলে তাঁর ক্রয়াদেশ ক্রমেই কমে যায়। বিপরীতে কারখানা খোলা রাখা, কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য চাপ বেড়ে যায়।
এখন নারায়ণগঞ্জের একজন তরুণ স্নাতকের দিকে দেখি। তিনি তাঁর পরিবারকে চরম অনিশ্চয়তায় ডুবতে দেখেছেন। তাঁর বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন। পরিবার চালাতে ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করতে হয়। যখন রপ্তানির চাপ কমতে থাকে, শুরুতে ওভারটাইম উঠে যায়। এরপর শিফটে কাটছাঁট করা হয়। শেষে ছাঁটাই। এসব গল্প সংবাদের শিরোনাম হয় না। এগুলো সাধারণ ঘরের ভেতরকার নীরব সংকট।
যে সিদ্ধান্তের কারণে তাঁদের এমন দশা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা ভোট দেননি। এমনকি তাঁদের কখনো জিজ্ঞেসও করা হয়নি। তাঁদের কখনো আসল সংখ্যাটাও দেখানো হয়নি।
এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আমরা যেমনটা দেখেছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তা–ই দেখছি। সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সমালোচনাকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুততা ও অনিবার্যতার অজুহাত দেখিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারি বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক যতটা হচ্ছে; প্রকৃতপক্ষে এটা তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি আগেও বলেছে, সময় নেওয়ার বিকল্পের পথে না গিয়ে ২০২৬ সালে উত্তরণের সময়সূচি এগিয়ে নেওয়া পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অথচ তা নিচ্ছে এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। তারপরও তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে বহু দশক ধরে প্রভাবিত করবে।
আমাদের বলা হয়েছে, দেরি করাটা ‘অসম্ভব’। এমনকি এটা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করাটাও ‘অপমানজনক’ হবে। জাতিসংঘ বিবেচনা করবে না। কিন্তু আমরা সবাই যদি নিবিড়ভাবে দেখি—দেখব, ইতিহাস আরও জটিল গল্প বলছে।
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না : তারেক রহমান১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশগুলোর জন্য উত্তরণের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মও বলছে—কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে ধাক্কা খেলে সময়সীমা নিয়ে নমনীয়তা দেখানো যায়। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে বাড়তি সময় চাওয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
তাহলে আমরা কেন বিকল্প না থাকার ভান করছি? কেন আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সংকুচিত করছি?
আসলে বিকল্পটি প্রকাশ্যে বাতিল করে আমরা আমাদের নিজস্ব আলোচনার সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার টেবিলে বসার আগেই আমরা আমাদের অবস্থান প্রকাশ করে দিচ্ছি। এতে দর–কষাকষির শক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি নথিপত্রে বলা হয়েছে, দেশের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে ব্যাংকিং খাতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা, ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, রপ্তানি শ্লথ হয়ে আসার চাপ মোকাবিলা করছেন। এটা উত্তরণবিরোধী কোনো যুক্তি নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু উত্তরণে ‘যোগ্য’ হওয়া আর ‘প্রস্তুত’ হওয়া এক জিনিস নয়।
আমি মনে করি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত জাতীয় শক্তিমত্তা নিয়ে সংশয়ে ভোগা উচিত নয়। আসল জাতীয় শক্তি হলো মূল্য অপরিবর্তনীয় হয়ে ওঠার আগেই কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার শৃঙ্খলা থাকা।
আরও পড়ুনঅন্যায়কারীদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না, প্রশ্ন তারেক রহমানের১২ জুলাই ২০২৫এবার আসি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে। সেখানে যা ঘটে, সেটা লাখ লাখ মানুষের জীবনে রাজনৈতিক বোলচালের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলে।
বন্দরের বিষয়ে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো নিয়মিত কাজের (রুটিন ওয়ার্ক) অংশ নয়। এগুলো একটি জাতীয় সম্পদ নিয়ে কৌশলগত প্রতিশ্রুতি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে ফেলার এসব সিদ্ধান্ত এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, যাদের কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নেই।
এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আমরা যেমনটা দেখেছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তা–ই দেখছি। সব কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের সমালোচনাকে ভালোভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দ্রুততা ও অনিবার্যতার অজুহাত দেখিয়ে যৌক্তিক উদ্বেগগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার—এটা কারও প্রতি ব্যক্তিগত সমালোচনা নয়, কিংবা কাউকে আক্রমণ করার বিষয়ও নয়। বিষয়টা হলো—প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়া। সেসব নীতি রক্ষা করা, যা দেশের ভবিষ্যৎ কয়েক দশকের জন্য নির্ধারণ করে দেয়। এসব সিদ্ধান্ত সেই সরকারের নেওয়া উচিত, জনগণের কাছে যাদের জবাবদিহি রয়েছে।
আরও পড়ুনবন্দর নিয়ে কেন তাড়াহুড়া করে গোপনীয় চুক্তি, প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের২২ নভেম্বর ২০২৫কেউ বলছে না যে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে না, কিংবা বন্দর সংস্কার করা উচিত না। যুক্তিটা আরও সহজ আরও মৌলিক—একটি দেশ যে সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
কৌশলগত ধৈর্য কখনোই দুর্বলতা নয়। জনগণের মতামত কোনো বাধা নয়। গণতান্ত্রিক বৈধতা মানে বিলম্ব নয়। আমার মতে—হয়তো এটাই এ পুরো আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য।
আরও পড়ুনসংস্কারের ৯৯ শতাংশই বিএনপি আগে উপস্থাপন করেছে: তারেক রহমান০৯ আগস্ট ২০২৫বাংলাদেশের মানুষ কখনো তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব থাকেনি। তাঁরা সব সময় নিজেদের মর্যাদা রক্ষা, মতপ্রকাশ আর পছন্দ বেছে নেওয়ার বিষয়ে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশের মানুষের চাওয়াটা সহজ—তাঁদের কথা শোনা হোক, তাঁরা অংশ নিতে পারুক এবং তাঁদের সম্মান জানানো হোক।
এ কারণেই আমাদের অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দেশের মানুষের কথা বলার, বেছে নেওয়ার এবং একটি সহজ সত্য নতুন করে প্রমাণ করার সুযোগ এটা। আর সত্যটি হলো—এ দেশের ভবিষ্যৎ তাদের দ্বারাই গঠিত হবে; যাঁরা এখানে বসবাস করেন এবং বিশ্বাস করেন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।
আরও পড়ুনগণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক০২ নভেম্বর ২০২৫