নোবেল বিজয়ীদের অনেকে কেন অভিবাসী হন
Published: 13th, October 2025 GMT
প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ২০০০ সাল থেকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ২০২ জন বিজ্ঞানীর মধ্যে ৬৩ জন নোবেল পুরস্কার জেতার আগে নিজেদের জন্মভূমি বা দেশ ছেড়ে এসেছেন। অনেকেই আবার কয়েকবার দেশ পরিবর্তন করেছেন।
২০২৫ সালে তিনজন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে দুজন অভিবাসী। রিচার্ড রবসনের জন্ম যুক্তরাজ্যে হলেও তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। আর জর্ডানে জন্মগ্রহণ করা ওমর ইয়াঘি সৌদি আরবের নাগরিক হলেও বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজনের মধ্যেও দুজন অভিবাসী রয়েছেন। তাঁরা হলেন ফ্রান্সের মিশেল ডেভোরেট ও যুক্তরাজ্যের জন ক্লার্ক। তাঁরা উভয়েই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অনেক আলোচিত বিজ্ঞানীই অভিবাসী ছিলেন। আইনস্টাইন জার্মানির জন্মস্থান ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। মেরি কুরি জন্মভূমি পোল্যান্ড ছেড়ে ফ্রান্সে কাজ করতেন। মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ বেশি থাকায় বিজ্ঞানীরা অভিবাসী হন। আর তাই উন্নত প্রশিক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও গবেষণার সুযোগ যেখানে বেশি, সেখানেই বিজ্ঞানীরা চলে যান। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের অর্থনীতিবিদ ইনা গাঙ্গুলি বলেন, ‘মেধা যেকোনো জায়গায় জন্ম নিতে পারে, কিন্তু সুযোগ সর্বত্র নেই। আমার মনে হয়, এ কারণেই আমরা এত বেশি বিদেশি নোবেল বিজয়ী দেখি।’
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের পদার্থবিদ ও ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া আন্দ্রে জেইমের মা–বাবা জার্মান হলেও জন্মগ্রহণ করেন রাশিয়ায়। রাশিয়ার পাশাপাশি ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে কাজ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী জেইম বলেন, ‘গবেষণার সময় পিনবলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। আপনি যদি সারা জীবন এক জায়গায় আটকে থাকেন, তবে আপনি গেমের অর্ধেক অংশ হারবেন।’
অর্থনীতিবিদ ইনা গাঙ্গুলি জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞানের জন্য একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের উদার অনুদান ও শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ভিড় জমায়। যুক্তরাষ্ট্রে যা আছে তা অনন্য, এটি সেরা শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীদের জন্য জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। এরপর সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্য থেকেও নোবেল পুরস্কার পাওয়া অনেকে অন্য দেশে চলে গেছেন। যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করা ১৩ জন নোবেল বিজয়ী অন্য দেশে বসবাস করার সময় পুরস্কার জিতেছেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ওয়াগনার বলেন, বিজ্ঞানীরা সম্ভবত উচ্চ বেতন ও আরও মর্যাদাপূর্ণ পদের কারণে আকৃষ্ট হয়েছেন। জার্মানি থেকেও অনেক নোবেল বিজয়ী অন্য দেশে চলে গেছেন। জার্মানির ছয়জন প্রবাসে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জাপান, ফ্রান্স ও রাশিয়া থেকেও চারজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন প্রবাসে।
এই শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশই অভিবাসী। এর পরেই রয়েছেন রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানীরা—৩৩ শতাংশ অভিবাসী। চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অভিবাসী বিজ্ঞানীর সংখ্যা প্রায় ২৩ শতাংশ। বিজ্ঞানী ওয়াগনারের মতে, পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল কোলাইডার, চুল্লি, লেজার, ডিটেক্টর ও টেলিস্কোপ কয়েকটি উন্নত দেশে রয়েছে। আর তাই সেরা মেধাবীরা সেখানেই যাবে।
সূত্র: নেচার ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর জ য র জন য রস য ন
এছাড়াও পড়ুন:
নোবেল বিজয়ীদের অনেকে কেন অভিবাসী হন
প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ২০০০ সাল থেকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ২০২ জন বিজ্ঞানীর মধ্যে ৬৩ জন নোবেল পুরস্কার জেতার আগে নিজেদের জন্মভূমি বা দেশ ছেড়ে এসেছেন। অনেকেই আবার কয়েকবার দেশ পরিবর্তন করেছেন।
২০২৫ সালে তিনজন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে দুজন অভিবাসী। রিচার্ড রবসনের জন্ম যুক্তরাজ্যে হলেও তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। আর জর্ডানে জন্মগ্রহণ করা ওমর ইয়াঘি সৌদি আরবের নাগরিক হলেও বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজনের মধ্যেও দুজন অভিবাসী রয়েছেন। তাঁরা হলেন ফ্রান্সের মিশেল ডেভোরেট ও যুক্তরাজ্যের জন ক্লার্ক। তাঁরা উভয়েই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অনেক আলোচিত বিজ্ঞানীই অভিবাসী ছিলেন। আইনস্টাইন জার্মানির জন্মস্থান ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। মেরি কুরি জন্মভূমি পোল্যান্ড ছেড়ে ফ্রান্সে কাজ করতেন। মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ বেশি থাকায় বিজ্ঞানীরা অভিবাসী হন। আর তাই উন্নত প্রশিক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও গবেষণার সুযোগ যেখানে বেশি, সেখানেই বিজ্ঞানীরা চলে যান। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের অর্থনীতিবিদ ইনা গাঙ্গুলি বলেন, ‘মেধা যেকোনো জায়গায় জন্ম নিতে পারে, কিন্তু সুযোগ সর্বত্র নেই। আমার মনে হয়, এ কারণেই আমরা এত বেশি বিদেশি নোবেল বিজয়ী দেখি।’
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের পদার্থবিদ ও ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া আন্দ্রে জেইমের মা–বাবা জার্মান হলেও জন্মগ্রহণ করেন রাশিয়ায়। রাশিয়ার পাশাপাশি ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে কাজ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী জেইম বলেন, ‘গবেষণার সময় পিনবলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। আপনি যদি সারা জীবন এক জায়গায় আটকে থাকেন, তবে আপনি গেমের অর্ধেক অংশ হারবেন।’
অর্থনীতিবিদ ইনা গাঙ্গুলি জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞানের জন্য একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের উদার অনুদান ও শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ভিড় জমায়। যুক্তরাষ্ট্রে যা আছে তা অনন্য, এটি সেরা শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীদের জন্য জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। এরপর সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্য থেকেও নোবেল পুরস্কার পাওয়া অনেকে অন্য দেশে চলে গেছেন। যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করা ১৩ জন নোবেল বিজয়ী অন্য দেশে বসবাস করার সময় পুরস্কার জিতেছেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ওয়াগনার বলেন, বিজ্ঞানীরা সম্ভবত উচ্চ বেতন ও আরও মর্যাদাপূর্ণ পদের কারণে আকৃষ্ট হয়েছেন। জার্মানি থেকেও অনেক নোবেল বিজয়ী অন্য দেশে চলে গেছেন। জার্মানির ছয়জন প্রবাসে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জাপান, ফ্রান্স ও রাশিয়া থেকেও চারজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন প্রবাসে।
এই শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশই অভিবাসী। এর পরেই রয়েছেন রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানীরা—৩৩ শতাংশ অভিবাসী। চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অভিবাসী বিজ্ঞানীর সংখ্যা প্রায় ২৩ শতাংশ। বিজ্ঞানী ওয়াগনারের মতে, পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল কোলাইডার, চুল্লি, লেজার, ডিটেক্টর ও টেলিস্কোপ কয়েকটি উন্নত দেশে রয়েছে। আর তাই সেরা মেধাবীরা সেখানেই যাবে।
সূত্র: নেচার ডটকম