আগামী নির্বাচনে জেন–জি প্রজন্ম হবে ‘ওয়াইল্ড কার্ডস’: ইনোভিশন
Published: 13th, October 2025 GMT
আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এই প্রশ্নে এখনো সিদ্ধান্তহীন ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ। এই সংখ্যা বাড়ছে। সিদ্ধান্তহীন ভোটার বেশি জেন–জি প্রজন্ম (যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর) ও নারীদের মধ্যে। এবারের ভোটে নির্ধারক ভূমিকা রাখতে পারেন জেন–জি, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা। এসব তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং বলছে, এবারের ভোটে জেন–জি হবে ‘ওয়াইল্ড কার্ডস’ (গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক)।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শিরোনামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইনোভিশনের সঙ্গে এই আয়োজনে যুক্ত ছিল ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএন নামের দুটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইনোভিশনের ওই জরিপটি প্রকাশ করা হয়। ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮ বিভাগ ও ৬৪ জেলার বিভিন্ন বয়সের ১০ হাজার ৪১৩ জন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছিল। সেখানে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপি, ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ৪ দশমিক ১০ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করার কথা বলেছেন। আর ভোটের ক্ষেত্রে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দ আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ)।
গত মাসে প্রকাশিত এই জরিপের আরও খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয় আজকের সভায়। ইনোভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আগামী নির্বাচনে পাঁচটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জেন–জি হবে ওয়াইল্ড কার্ডস। রাজনৈতিক দলগুলোকে শহর ও গ্রামের পার্থক্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারী ভোটের অন্তর্নিহিত মাত্রাগুলো বোঝা প্রয়োজন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন ও আত্মবিশ্বাস জয় করার বিষয়টি ভোটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। অনেক ভোটারের সিদ্ধান্তহীনতার (বিশেষ করে সিলেট ও খুলনা) বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না।
গত মার্চে প্রথম পর্যায়ের জরিপ প্রকাশ করেছিল ইনোভিশন। সেখানে সিদ্ধান্তহীন ভোটার ছিল ২৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপে সেটি আরও ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর সিদ্ধান্তহীন ভোটার বেশি জেন–জিদের মধ্যে, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর। নারীদের মধ্যেও সিদ্ধান্তহীন ভোটারের হার অনেক বেশি (৩৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ)।
আঞ্চলিকভাবে সিদ্ধান্তহীন ভোটার সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে (৪৩ দশমিক ১০ শতাংশ)। রংপুর বিভাগের ৪০ দশমিক ২০ শতাংশ, বরিশালের ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ ও খুলনা বিভাগের ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ এখনো ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আগামী নির্বাচনে নিরাপদে ও ভয়ভীতি ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে কি না, জরিপে এ প্রশ্নের উত্তরে ৭৮ শতাংশ মুসলিম ভোটার হ্যাঁ–সূচক উত্তর দিয়েছেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা ৭২ শতাংশ।
ভোটাররা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, তা বোঝার জন্য জরিপে চাঁদাবাজিবিষয়ক খবরের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল জরিপে। এ প্রশ্নের উত্তরে সংবাদপত্র, ব্যক্তিগত বা পরিচিত–আত্মীয়–পরিজনের অভিজ্ঞতা ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কথা বলেছেন উত্তরদাতাদের অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ বলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা।
রুবাইয়াৎ সারওয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপ বলছে, একটা কম্পিটিটিভ (প্রতিযোগিতামূলক) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ থাকুক বা না থাকুক, মানুষ ভোট দিতে চাইছে। জেন–জি, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা এবার নির্ণায়ক হবেন।’
পিআরের কথা শোনেননি অধিকাংশ নারী
সম্প্রতি জামায়াতসহ সাতটি রাজনৈতিক দল পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়ে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। পিআরের বিষয়টি নিয়ে ইনোভিশনের জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে ৬৮ দশমিক ২০ শতাংশ নারী এবং ৪৫ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাঁরা পিআর পদ্ধতির কথা শোনেননি বা এ বিষয়ে যথেষ্ট জানেন না। এ ছাড়া পিআরের কথা শোনেননি বা যথেষ্ট জানেন না বলেছেন গ্রামের ৫৯ শতাংশ মানুষ। শহরের ক্ষেত্রে তা ৪৯ শতাংশ।
ভোটের পছন্দে কী কী বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি জরিপে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তুলনামূলক কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের কাছে দলের মার্কাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার প্রবণতা বেশি।
আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না থাকে, তাহলে কী করবেন সে বিষয়ে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে। জবাবে মুসলমানদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ মন্তব্য করতে চাননি, ভোট দেবেন না বলেছেন ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ মন্তব্য করতে চাননি আর ১১ শতাংশ বলেছেন ভোট দেবেন না।
এগিয়ে বিএনপি
জরিপ অনুযায়ী, দেশের আট বিভাগের মধ্যে ছয়টিতে এগিয়ে আছে বিএনপি। এগুলো হলো ঢাকা (৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ), চট্টগ্রাম (৪১ দশমিক ৯০ শতাংশ), ময়মনসিংহ (৪৫ দশমিক ৭০ শতাংশ), সিলেট (৪৪ দশমিক ৭০ শতাংশ), খুলনা (৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ) ও রাজশাহী (৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ)। রংপুরে ৪৩ দশমিক ৪০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে আছে। আর বরিশালে ৩১ দশমিক ৯০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ।
পেশাজীবীদের মধ্যে বিএনপির সমর্থন সবচেয়ে বেশি, দ্বিতীয় জামায়াতের। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিএনপির চেয়ে জামায়াতের সমর্থন কিছুটা বেশি। শিক্ষার্থীদের ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বিএনপিকে সমর্থন করে আর জামায়াতকে সমর্থন করে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
শহর ও গ্রামাঞ্চল—দুটি জায়গাতেই বিএনপির সমর্থন অন্য দলগুলোর চেয়ে বেশি। শহুরে ভোটারদের ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ আর গ্রামীণ ভোটারদের ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্যদিকে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ শহুরে ভোটার ও ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ গ্রামীণ ভোটার বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন জরিপে।
বিএনপির ভোটারদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষের ৬৮ শতাংশ, একই সঙ্গে ৭৯ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষে। জামায়াতের ভোটারদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চান ৬৪ শতাংশ, একই সঙ্গে ৮১ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী। আর এনসিপির ভোটারদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চান ৫৯ শতাংশ, একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী ৬৫ শতাংশ।
ইনোভিশনের জরিপ নিয়ে এই আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন প্রবাসী শিক্ষক–গবেষক। পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বিআরএআইএনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান, আই’সোশ্যালের চেয়ারপারসন অনন্য রায়হান, ইনোভিশনের গবেষক তাসমিয়া রহমান, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী প্রমুখ। ভয়েস ফর রিফর্মের সহ–আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর সভা সঞ্চালনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র বল ছ ন হয় ছ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের স্মারকলিপি
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বরেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন চায় ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার-সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেলটি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পজনিত জরুরি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের উদ্যোগ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উৎসাহ, আগ্রহ ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গড়ে উঠেছে, তা সময়সূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাহত হবে। জরুরি পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনী পরিবেশও উৎসবমুখরভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এটি পূর্ববর্তী বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের তিন দাবি হলো—
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ২২ ডিসেম্বর কোনো অবস্থাতেই পেছানো যাবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন আয়োজনে কোনো ধরনের বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যাবে না।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটি। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বরই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে কোনো যদি–কিন্তু ছাড়াই।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহার করা প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২-২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল ঘোষণা হবে।