রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রোজেকশন মিটিংয়ে (পরিচিতি সভা) বিতরণের উদ্দেশ্যে আনা পাঁচ বস্তা খাবার ফিরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ও খালেদা জিয়া হলে পরিচিতি সভায় বিতরণের জন্য এসব খাবার আনা হয়েছিল।

এর আগে হলের সভায় খাবার বিতরণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে গত মঙ্গলবার ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।

প্রত্যক্ষদর্শী, নির্বাচন কমিশন ও ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ফুটেজ সূত্রে জানা যায়, আজ সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল খালেদা জিয়া ও মন্নুজান হলে সভার আয়োজন করে। তারা খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া করে। তবে হল প্রশাসন তাদের হলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল দিয়েই কার্যক্রম চালাতে বলে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার (স্যান্ডউইচ, চকলেট, সস) আনে প্যানেলটি। এ সময় হল ফটকে উপস্থিত হয়ে তাদের খাবার প্রবেশে বাধা দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দসহ অন্যরা। পরে সেখান থেকে ৫ বস্তায় আনা প্রায় ৮০০ প্যাকেট খাবার ফেরত পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানান প্যানেলটির প্রার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতারা। আলোচনা শেষে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল এখন পর্যন্ত নির্বাচনের লিখিত আচরণবিধির একটিও ভঙ্গ করেনি। ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ক্লাস রুমে গিয়ে প্রচারণাসহ একাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা নির্বাচন কমিশনে হতাশা ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছি, নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টরা যদি এভাবে অপেশাদারমূলক আচরণ করেন এবং একটি দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে থাকেন, তাহলে কোনোভাবেই স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

পরিচিতি সভায় অসযোগিতার অভিযোগ তুলে মুজাহিদ ফয়সাল আরও বরেন, ‘আজকে একটি হলের পরিচিতি সভায় প্রথমেই হলের অভ্যন্তরে আমাদের চেয়ার প্রবেশ করতে দেয়নি হল প্রশাসন। পরে আমাদের দেশের সংস্কৃতির অংশস্বরূপ দাওয়াত করা মেহমানদের জন্য খাবার নিয়ে গেলে সেটিও বিতরণ করতে দেওয়া হয়নি। যদিও খাবারের বিষয়ে আচরণবিধিতেও স্পষ্ট কিছু বলা নেই। অন্যান্য প্যানেল খাবার বিতরণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

ছাত্রশিবিরের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সব হল পরিদর্শনে বেরিয়েছি। খালেদা জিয়া হল থেকে বের হওয়ার সময় গেটে দেখি, কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, এখানে সম্মিলিত ছাত্র জোটের একটি পরিচিতি সভা হচ্ছে, সেই উপলক্ষে এই খাবার আনা হয়েছে। তখন আমি তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিই, এভাবে খাবার বিতরণ করা যাবে না। এরপর খাবারগুলো যেখান থেকে আনা হয়েছে, সেখানে ফেরত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিই। আমাদের নির্দেশের পর খাবারগুলো ফেরত পাঠানো হয়।’

কেন খাবার বিতরণে বাধা দেওয়া হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হয়তো পরিচিতি সভা করে এভাবে খাবার দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। কিন্তু জোটবদ্ধ প্রার্থীরা সেটা পারছে। এতে প্রার্থীদের মধ্যে একটি বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই, সবার জন্য সমান সুযোগ থাকুক এবং নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে থেকে সবাই প্রচারণা চালাক।’

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে তাঁরা নিয়মিত হলগুলো পরিদর্শন করছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কোনো প্রার্থী নিয়মবহির্ভূতভাবে উপহার দিচ্ছেন কি না বা কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর থ ত প য ন ল খ ব র ব তরণ ব তরণ কর আচরণব ধ র জন য পর চ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করছে কমিশন: অভিযোগ শিবির–সমর্থিত প্যানেলের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) নির্বাচন কমিশন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম। তিনি ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজুল বলেন, ‘আমরা মনে করছি, নির্বাচন কমিশন সুস্পষ্টভাবে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করছে, যা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়।’

এ সময় কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করারও অভিযোগ তোলেন রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে গঠিত কমিশন প্রথম থেকে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। ছাত্রদল ও তাদের সমর্থিত প্যানেলকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে, যা তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ তোলেন ছাত্রশিবিরের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে এমন একপক্ষীয় সুবিধা পেয়ে ছাত্রদল এবং তাদের প্যানেল একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, যেন তাদের দেখার কেউ নেই।’

রিয়াজুল ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার আগে ২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন সব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে। তখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত ২৭ নভেম্বর নির্বাচন বাস্তবায়ন করার পক্ষে মতামত দেয়। শুধু ছাত্রদলের বিরোধিতার কারণে তারা এই নির্বাচনকে ২৬ দিন পিছিয়ে ২২ ডিসেম্বর তারিখ ঘোষণা করে।

অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. জুলফিকার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো পক্ষকে প্রশ্রয় বা আশকারা দেওয়ার সুযোগ নেই। যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের নির্বাচন কমিশন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তাহলে আমরা কীভাবে সুযোগ দিচ্ছি? কোনো পক্ষ বলতে পারবে না আমরা তাদের কথা অনুসারে কাজ করছি।’

মো. জুলফিকার মাহমুদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কাজ তাদের তফসিল অনুযায়ী করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তিনজন প্রার্থীকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে তিনজনকে পাঠানো হয়েছে, তারা ছাত্রদল প্যানেলের। তাহলে সুযোগ দিলে কি কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হতো?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করছে কমিশন: অভিযোগ শিবির–সমর্থিত প্যানেলের